পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের পর বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার জাভেদ ওমর বেলিম গুল্লুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, বাংলাদেশের গ্রেট ফিনিশার কী মাশরাফিকেই বলা যায়? সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বললেন, না.. না...। গ্রেট ফিনিশার যদি বলতে হয়, তাহলে বলবো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কথা। মাশরাফি গ্রেট মোটিভেটর। কিন্তু গ্রেট ফিনিশার মাহমুদুল্লাহ। নিজেকে যখন থেকে স্টাবলিশ করা শুরু করেছে রিয়াদ, তখন থেকে ৬ কিংবা ৭ নাম্বারে ব্যাট করতে নেমে কত ম্যাচে যে বাংলাদেশের জন্য ম্যাচ শেষ করে এনেছেন তার কোন হিসেব নেই।পাকিস্তানের বিপক্ষেই প্রমাণ দিয়েছিলেন। এশিয়া কাপের ফাইনালে যখন ভারতের মুখোমুখি হলেন, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সামনে দারুন একটি চ্যালেঞ্জ উপস্থিত। নিজের অভিজ্ঞতার সবচেয়ে খাঁটি প্রয়োগ করার জন্য যে এর চেয়ে ভালো কোন মঞ্চ হতে পারে না! বাংলাদেশ দলের মিস্টার ডিপেন্ডেবল প্রমাণ করে দিলেন, তার ব্যাট যখন কথা বলবে, তখন প্রতিপক্ষ কে কিংবা সেটা কোন স্টেজের ম্যাচ তা ভাবার প্রয়োজন নেই।মাহমুদুল্লাহ যখন মাঠে নামলেন, তখন বাংলাদেশের খেলা খুব বেশি বাকি নেই। মাত্র আড়াই ওভার খেলা বাকি। বাংলাদেশের রান তখন মাত্র ৮৩। ১০০ রানও হবে কি না সেই সন্দেহ দেখা দিয়েছিল। ওই সময়ই মাঠে নামেন মাহমুদুল্লাহ।মাঠে নেমেই ১৩তম ওভারের চার বল পেয়েছিলেন। নিলেন ৯ রান। ১৪তম ওভারে হার্দিক পাণ্ডের কাছ থেকে একাই নিলেন ২০ রান। একটি ওয়াইডসহ মোট ২১ রান এলো এই ওভার থেকে। বাংলাদেশের রান ১০০ পার হয়ে যাওয়ার মূল কৃতিত্বটা এই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদেরই।১৫তম ওভারে ৪ বল খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। রান নিলেন ৫টি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের রান হলো ১২০। এর মধ্যে ১৩ বলে ৩৩ রানই করলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।পাকিস্তানের বিপক্ষেও বাংলাদেশের মূল নায়ক ছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদই। ১৭ম ওভারে পেন্ডুলামের মত ধুলতে থাকা ম্যাচটাকে বের করে এনেছিলেন তিনিই। মাশরাফি হয়তো মোহাম্মদ আমিরকে দু’বার বাউন্ডারি মেরে ম্যাচ সহজ করে দিয়েছিলেন; কিন্তু মাহমুদুল্লাহই ১৭তম ওভারে এসে ৭ ফুট ১ ইঞ্চি লম্বা মোহাম্মদ ইরফানের শট অফ লেন্থ বল। একটু জায়গা করে নিয়ে ব্যাকফুটে অফ ড্রাইভে লং অফের ওপর দিয়ে উড়িয়ে দিলেন। ধারাভাষ্যকার ডিন জোন্স বললেন, ‘সম্ভবত টুর্নামেন্টের সেরা শট।’এরপর তো শেষ ওভারে বাউন্ডারি মেরে বাংলাদেশের বাংলাদেশকে জয় উপহারই দিলেন মাহমুদুল্লাহ। ভারতের বিপক্ষে আজও হার্দিক পাণ্ডেকে যেভাবে স্বাচ্ছেন্দ্যে দুবার হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলেন, তাতে ডিন জোন্সরা বলতে বাধ্য হবেন, টি-টোয়েন্টিতে এখন সেই আগের বাংলাদেশটি নেই।মাহমুদুল্লাহকে আগে থেকে সবাই বলতো স্লো ব্যাটসম্যান। টি-টোয়েন্টিতে তো পুরোপুরি অচল। কিন্তু বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপে প্রথম এবং টানা দুটি সেঞ্চুরিয়ান বিপিএলকেই বেছে নিয়েছিলেন নিজেকে প্রমাণ করার। বরিশাল বুলস যে ফাইনালে উঠেছিল, তা শুধুমাত্র মাহমুদুল্লাহর অসাধারণ নেতৃত্ব আর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের কারণেই সম্ভব হয়েছিল।এরপর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ব্যাট হাতে শুরুতে সফল না হেলও শেষ ম্যাচে করেছিলেন ৫৪ রান। এরপরও সমালোচনা অব্যাহত ছিল। এশিয়া কাপের আগে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ জানিয়েছিলেন, নিজের নামের প্রতি চলা এই অপবাদ ঘোচাবেন তিনি। সুতরাং, কথা রেখেছেন তিনি। এশিয়া কাপের শুরু থেকেই ৬ কিংবা সাত নাম্বরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের স্কোরকে একটা চ্যালেঞ্জিং পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটি করে দিয়েছেন রিয়াদই। যাতে ম্যাচের চেহারাটাই পরিবর্তণ হয়ে যেতো।৫ ম্যাচে ৪বারই ছিলেন অপরাজিত। রান করেছেন ১২১। সর্বোচ্চ ৩৬। তার রান করার গড় ১২১ করেই। স্ট্রাইক রেট ১৬৫.৭৫। ১০০ রানের ওপর করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ। এমন ব্যাটসম্যানকেই তো বলা যায়, দ্য রিয়াল গেইম চেঞ্জার।আইএইচএস/এবিএস