দেশজুড়ে

ঈশ্বরদীতে রেকর্ড ৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা, বিপর্যস্ত জনজীবন

পাবনার ঈশ্বরদীতে চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার (১৭ এপ্রিল) উপজেলায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এটা ঈশ্বরদীর স্মরণকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন জাগো নিউজকে বলেন, চলতি মৌসুমে এটি সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

ঈশ্বরদীতে ১৫ দিন ধরে তাপপ্রবাহ বিরাজমান থাকায় প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। বাতাসে যেন আগুনের হল্কা। পিচঢালা সড়ক তেতে উঠেছে। বাড়ির বাইরে বের হলেই রোদের প্রখরতায় শরীর পুড়ে যাচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণে ঘরেও স্বস্তি নেই। দু-এক ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে।

রমজানে তীব্র তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন শ্রমজীবী মানুষ। একইসঙ্গে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোজাদার ও রোগীরা। বাজারের রিকশাস্ট্যান্ডে যাত্রীর জন্য প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে থাকা রিকশাচালক আওলাদ হোসেন বলেন, ‘রোদের কারণে সড়কে মানুষের চলাচল তুলনামূলক কম। রিকশার জমা খরচ ছাড়াও নিজের সংসারের চাল-ডাল কেনার খরচ জোগাতে কষ্ট হলেও রিকশা চালাতে হচ্ছে।’ ঈদের আগ মুহূর্তে মার্কেটে আসা মানুষকে গরমে নাকাল হতে দেখা গেছে। ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে তীব্র গরমে যাত্রীদের হাঁসফাঁস অবস্থা। প্ল্যাটফর্মে ফ্যান না থাকায় ট্রেনের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীদের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন: সুখবর দিলো আবহাওয়া অধিদপ্তর, ৩ বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে

ঈশ্বরদী বাজারে কেনাকাটা করতে আসা আসাদুজ্জামান বিরু বলেন, ‘তীব্র গরমে কোথাও স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মার্কেটগুলোতে কেনাকাটা করেছি। অন্য মার্কেটগুলোতে ভ্যাপসা গরমে যাওয়া যাচ্ছে না।’ ঈশ্বরদী শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে দিনে বেচাকেনা তুলনামূলক কম। তবে ইফতারির পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বেচাকেনা হচ্ছে। দিনে রোদের তীব্রতার কারণে অনেকেই রাতে কেনাকাটা করছেন। এদিকে তাপপ্রবাহ দীর্ঘায়িত হলে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। বিশেষ করে বোরো ধান ও লিচুচাষিরা এ আবহাওয়ায় বেশি শঙ্কিত।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জাগো নিউজকে বলেন, তীব্র খরা চলছে। সেজন্য চলতি বোরো ধানের জমিতে সবসময় দুই থেকে তিন ইঞ্চি পানি রাখতে হবে। পাশাপাশি বোরো ধানের জমিতে বিঘাপ্রতি পাঁচ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে।

লিচু চাষিদের বিষয়ে তিনি বলেন, লিচু বাগানে সেচ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে সেচ কোনো অবস্থাতেই দিনে দেওয়া যাবে না। অবশ্যই রাতে দিতে হবে। এ মুহূর্তে সার প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। তাপমাত্রা কমলে তারপর সার প্রয়োগ করতে হবে।

অন্যদিকে প্রচণ্ড খরায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। ফলে উপজেলাজুড়ে তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। পৌর শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত ফতেহমোহাম্মদপুর, পূর্ব-নূরমহল্লা, আমবাগান, আলহাজ ক্যাম্প, মাহাতাব কলোনিতে গিয়ে দেখা যায়, শতকরা ৯৫ ভাগ বসতবাড়ির টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। যাদের বাসাবাড়িতে সাবমার্সেবল বা গভীর নলকূপ রয়েছে শুধু তারা সুপেয় পানি পাচ্ছেন। পানির জন্য বেশিরভাগ মানুষকে মসজিদের গভীর নলকূপে ভিড় করতে দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া এলাকার যে টিউবওয়েলে সামান্য পানি উঠছে সেখানে বালতি, কলসি, জগ হাতে নিয়ে মানুষ ভিড় করছেন।

আরও পড়ুন: রেকর্ড তাপমাত্রার মধ্যে ঢাকায় পানির সংকট

ঈশ্বরদী উপজেলা সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মাহাবুব ইসলাম বলেন, ‘পানির স্তর ৩০ ফুটের নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। বৃষ্টিপাত হলে পানির স্তর স্বাভাবিক হয়ে যাবে। বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যার কোনো সমাধান নেই।’ পৌরসভার মেয়র ইছাহক আলী মালিথা জাগো নিউজকে বলেন, ‘টিউবওয়েলে পানি না ওঠার বিষয়টি শুনেছি। যারা পৌরসভার সাপ্লাই পানি সংযোগ নিয়েছেন তাদের কোনো সমস্যা নেই। যারা সাপ্লাই পানির সংযোগ নেননি তাদের পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তবে পৌরসভার পানি সরবরাহের কোনো গাড়ি বা পরিবহন নেই। তারপরও পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে কিছু করণীয় আছে কি না দেখবো।’ ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইনচার্জ) হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ঈশ্বরদীতে স্মরণকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। পাঁচ বছর ধরে এখানে কর্মরত রয়েছি। এরমধ্যে ২০২২ সালের ২৫ এপ্রিল ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। আমি এ অফিসের রেকর্ড বই খুঁজে দেখার চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা পাওয়া যায়নি।’

শেখ মহসীন/এসআর/এএসএম