মাঠে বসেই দেখেছি বাংলাদেশের মানুষের ক্রিকেট নিয়ে আবেগে ভেসে যাওয়া। এক সময় মাঠের ভেতর থেকে দেখতাম। আমরা যখন খেলেছি, তখনকার চেয়ে এখনকার সমর্থকদের চাওয়া বেশি। সন্ধ্যা হতে না হতেই তুমুল ঝড় আর বৃষ্টি। এর মাঝেও গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে কাকভেজা হতে দেখলাম অনেককে। বৃষ্টি থামতে না থামতেই ভরে গেলো গ্যালারি। দর্শকদের এতটা আবেগ আর উচ্ছ্বস দেখে ভাবলাম, এদের জন্য হলেও কাপটা জেতা দরকার টাইগারদের।কিন্তু প্রতিপক্ষের নামটা তো ভারত। টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বের এক নম্বর দল। শুধু খাতায়-কলমেই নয়, মাঠেও তারা এক নম্বর। বাংলাদেশের মানুষ আবেগে ভাসিয়ে দিতে পারে আমাদের ক্রিকেটারদের; কিন্তু ভারতীয়রা আবেগে ভেসে যায় না। তারা বাস্তবেই থাকে। বাস্তবে থাকে বলেই এশিয়া কাপের মতো ফাইনালে ভুল তো তারা করলোই না, বরং দাপটের সঙ্গে খেলেই ষষ্ঠবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলো।বাংলাদেশও সুপার খেলেছে। নিজেদের প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফরম্যান্স করেছে। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে। কিন্তু আগেই বলেছিলাম, তিনটি ডিপার্টমেন্টে একসঙ্গে ভালো করতে না পারলে কোনো ফল আসবে না। ফাইনালেও হলো তাই। ব্যাটিংটা মোটামুটি প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে। বোলিংয়ের শুরুটা হয়েছিল প্রত্যাশিত। কিন্তু ধীরে ধীরে খেই হারিয়ে ফেলেছে।আর ফিল্ডিংয়ের কথা যদি বলি, তাহলে বলবো খুবই বাজে ফিল্ডিং করেছে বাংলাদেশ। অনেকগুলো বাউন্ডারি হাত ফসকে গেছে। হাফ চান্সগুলো কাজে লাগাতে পারেনি। ওগুলো কাজে লাগাতে পারলে ভারতের রান আরও কম হতো। ম্যাচটা আরও ক্লোজ হয়ে যেতে পারতো।সুতরাং, সে হিসেবে বলবো, ভারত খুবই হিসেব-নিকেশ করে খেলেছে। যেটাকে বলে একেবারে পরিণত। শুরু থেকেই পরিণত ক্রিকেট খেলে তারা শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বোলিং করতে গিয়ে বাংলাদেশের দুই ওপেনার ভালো সূচনা এনে দেয়ার পরও তারা আতঙ্কিত হয়ে ওঠেনি। কিংবা ব্যাটিং করতে গিয়ে দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা শুরুতে আউট হওয়ার পরও তারা ভয় পায়নি। বরং, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দারুণ পরিণত ক্রিকেট উপহার দিয়েছে ভারত। কোনো ভুল করেনি। কোনো সুযোগ দেয়নি বাংলাদেশকে। একটা-দুটা সুযোগ দিলে হয়তো ম্যাচের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যেতো। ফলে সেরা দল হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারাই।ব্যাটিংটা ভালোভাবে শুরু করলেও মাঝে গিয়ে একটু স্লো হয়ে গিয়েছিল। ওই সময়ই বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে পড়ে। অন্তত ১০ থেকে ১৫ রান কম হয়েছে। তবুও শেষ দিকে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অসাধারণ ব্যাটিং করে দলের রান এতটা চ্যালেঞ্জিং হিসেবে ভারতের সামনে দাঁড় করাতে পেরেছে।বিশ্ব ক্রিকেটে আমাদের উত্থানটা মাত্রই ঘটেছে। আমাদের আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। তবেই আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো যোগ্য হতে পারবো। ছোট ছোট ভুলগুলো যতো কমিয়ে আনতে পারবো, ছোটা ছোট সুযোগগুলো তৈরি করে নিয়ে যতো কাজে লাগাতে পারবো, তাহলেই আমরা বিশ্বক্রিকেটে সবার ওপরে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারবো। আর কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপাও তখন ধরা দেবে আমাদের হাতে।লেখক: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ওপেনারআইএইচএস/বিএ