প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল।
বুধবার (২৬ এপ্রিল) কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন দেশের তৃণমূলপর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকের ধারণা প্রবর্তন করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরেই দেশের সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে তৎকালীন মহকুমা ও থানাপর্যায়ে স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে তুলেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের শুরুতেই আমরা দেশব্যাপী প্রতি ছয় হাজার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি করে মোট ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। সেই আলোকে ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল জাতির পিতার জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী ইউনিয়নে আমি দেশের সর্বপ্রথম ‘গিমাডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিক’ প্রতিষ্ঠা করে এর শুভসূচনা করি। ২০০১ সালের মধ্যেই আমরা ১০ হাজার ৭২৩টি অবকাঠামো স্থাপনপূর্বক প্রায় ৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চালু করি।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে আমরা আবার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের কাজ শুরু করি। সেবাগ্রহিতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি সেবার পরিধি সম্প্রসারিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে পাঁচ শতাংশের পরিবর্তে বর্তমানে আট শতাংশ জমিতে চার কক্ষবিশিষ্ট নতুন নকশার ভিত্তিতে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ২২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৫-১৬ থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার ৮১১টি নতুন নকশার কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২০২২ সালে ৭৭১ জন নতুন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) নিয়োগসহ এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৪৩৮ জন সিএইচসিপি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি সরকার ও জনগণের সম্মিলিত অংশীদারত্বের একটি সফল কার্যক্রম, যার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা এবং স্থায়িত্বের লক্ষ্যে আমাদের সরকার ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন’ জাতীয় সংসদে পাস করেছে।
তিনি আরও বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ইপিআই টিকা ও কোভিড ভ্যাকসিন প্রদানসহ সারাদেশের প্রান্তিক জনগণের স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টিসেবা প্রদানের জন্য বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ এবং স্বাস্থ্য সেবাসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। বর্তমান অর্থবছরে ওষুধ ও স্বাস্থ্য সেবাসামগ্রী বাবদ বাৎসরিক বরাদ্দ বাড়িয়ে ২৪১ কোটি থেকে ২৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করেছি। কর্মরত সব সিএইচসিপিকে বিনামূল্যে সেবা সহজ করার জন্য ল্যাপটপ ও মডেম দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সব কমিউনিটি ক্লিনিক হতে ডিজিটালি অনলাইন রিপোর্টিং করা হচ্ছে। সেবা সহজিকরণের জন্য মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ারের মাধ্যমে সিসি কর্ম এলাকায় অবস্থানরত খানার প্রত্যেক সদস্যের ডিজিটালি হেলথ ডাটা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১১ লাখ গ্রামীণ জনগণকে হেলথ আইডি কার্ড দেওয়া হয়েছে। ১০৭টি উপজেলায় এ কার্যক্রম চলমান। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে হেলথ আইডি কার্ড দেওয়া হবে। আমাদের সরকারের এ পদক্ষেপসমূহ গ্রহণের ফলে স্বাস্থ্যখাতে অর্জিত ব্যাপক সাফল্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। স্বাস্থ্যখাতে আমাদের সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ এমডিজি পুরস্কার, সাউথ-সাউথ পুরস্কার, গ্যাভি পুরস্কার ও ভ্যাকসিন হিরো পুরস্কারের মতো অনেক সম্মানজনক আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিশ্বাস করি, স্মার্ট কমিউনিটি ক্লিনিক ও স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে কমিউনিটি ক্লিনিকের সাফল্য জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে অভাবনীয় সম্মান বয়ে আনবে। দেশের স্বাস্থ্যখাতের সব ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০৪১ সালের মধ্যেই আমরা বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলবো। আমি কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।
এইচএস/এএএইচ