জাতীয়

ছয় মাসে কালুরঘাট সেতু সংস্কার, বন্ধ থাকবে যান চলাচল

চলতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যে কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হবে। আর শেষ হবে ছয় মাসের মধ্যে। সংস্কার কাজ চলার সময় বন্ধ থাকবে সেতু।

শনিবার (৬ মে) বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর।

তিনি জানান, কালুরঘাট সেতু সংস্কারকালীন বড় যান বিকল্প পথে শাহ আমানত সেতু দিয়ে চলবে। একই সঙ্গে ছোট গাড়ি ও মানুষ পারাপারের জন্য থাকবে ফেরির ব্যবস্থা। দুদিক থেকে থাকবে ফেরি। একটি স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে।

রেল সচিব বলেন, এসময় সেতুর ওপর যান চলাচল বন্ধ থাকবে। এতে সাময়িক অসুবিধা হবে। তবে সংস্কার কাজ হয়ে গেলে সেই কষ্ট আর থাকবে না।

আরও পড়ুন: কালুরঘাট সেতু সংস্কারে অর্থ লোপাটের অভিযোগ

সেতু সংস্কার রেলপথ মন্ত্রণালয় করলেও ফেরি সেবা দেবে সড়ক বিভাগ। এরই মধ্যে দুটি ফেরি প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানান সচিব।

সভায় বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুন বলেন, সেতু সংস্কারের সময় দুটি ফেরি রাখার কথা বলা হয়েছে। এতে এই রুট দিয়ে চলাচলকারী গাড়ির চাপ সামাল দেওয়া কষ্টসাধ্য হবে।

এসময় তিনি সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ছয় মাস কালুরঘাট সেতু বন্ধ থাকলে আরও ফেরি বাড়ানো প্রয়োজন।

এ বিষয়ে সচিব বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে চারটি ফেরি চালু করতে হলে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগবে।

সভায় দোহাজারী কালিয়াইশ ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্টের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভাশীষ চক্রবর্তী বলেন, বর্তমানে বিদ্যুৎ সংকটের কারণে দোহাজারী কালিয়াইশ পাওয়ার প্লান্ট ২৪ ঘণ্টা চালু রাখতে হবে। এই প্লান্ট থেকে জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হয়। একদিন প্লান্ট চালাতে গেলে প্রয়োজন পড়ে ২০০ টনের বেশি জ্বালানি (ফার্নেস অয়েল)। এসব জ্বালানি রেলরেকের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়। ছয় মাস সেতু বন্ধ থাকলে জ্বালানি পরিবহন সংকটে পড়বে। এতে বন্ধ হয়ে যেতে পারে প্লান্টের বিদ্যুৎ উৎপাদন।

আরও পড়ুন: কালুরঘাট সেতুতে ভেসে আসা জাহাজের আঘাত, সরে গেছে স্প্যান

এ বিষয়ে রেল সচিব বলেন, আরও এক মাস সময় পাওয়া যাবে। এ সময়ের মধ্যে কীভাবে স্টোরেজ বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেন।

এছাড়া জ্বালানি পরিবহনের জন্য অতিরিক্ত রেলরেকের ব্যবস্থা করবেন বলে জানান সচিব।

বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুন বলেন, বোয়ালখালীর মানুষের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা ছিল নতুন কালুরঘাট সেতু। নির্মাণ শুরু করা না গেলেও অন্তত এই বছরের মধ্যে নতুন সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা যায় কি না?

ইউএনও’র এই প্রশ্নে সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, নতুন কালুরঘাট সেতুর ডিজাইন প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। আশা করছি নতুন সেতুর কাজও নির্ধারিত সময়ে শুরু হবে।

২০০২৮ সালের মধ্যে নতুন সেতু জনগণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

রেল সচিব বলেন, সেপ্টেম্বরে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন রেলপথ দিয়ে ১২০-১৩০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে পর্যটন শহরে পৌঁছে যাবে মানুষ।

আরও পড়ুন: ১২.২ মিটার উচ্চতায় হচ্ছে কালুরঘাট সেতু, ব্যয় বাড়ছে তিন গুণ

মতবিনিময় সভায় কালুরঘাট সেতুর সংস্কার নিয়ে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা।

তিনি বলেন, কালুরঘাট রেল সেতুর অবস্থা এত খারাপ যে, সংস্কার ছাড়া কক্সবাজার পর্যন্ত ভারী ইঞ্জিনের ট্রেন নেওয়া সম্ভব নয়। বর্তমানে এই সেতুতে ট্রেনের গতি ১০ কিলোমিটার। সংস্কারের পর ৫০-৬০ কিলোমিটার হবে। বুয়েট পরামর্শক দলের পরামর্শে সেতু সংস্কার করা হবে। এরই মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। ২০ জুন সংস্কার কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। সেপ্টেম্বরে মূল সংস্কার কাজ শেষ হবে। সংস্কার কাজ চলাকালে রেল সেতুতে মানুষের হেটে পার হওয়ার জন্য ওয়াকওয়ে রাখা হবে।

এসময় বোয়ালখালী পৌরসভার চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম দুটি ফেরির পরিবর্তে চারটি ফেরি চালুর পরামর্শ দেন। এছাড়া সেতু সংস্কারের কাজ বর্ষার পর শুরুর পরামর্শ দেন তিনি।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সঞ্চালনায় সভায় রেল মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন ও পরিকল্প) মো. ইয়াসীন, সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন, চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম, বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মো. আবিদুর রহমান, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এমডিআইএইচ/জেডএইচ/এএসএম