রাজধানী ঢাকার সড়ক যোগাযোগ আরামদায়ক করতে নেওয়া হয়েছে নানান উদ্যোগ। বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত হচ্ছে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি)। এর একটি র্যাম্প যান চলাচলের জন্য এরই মধ্যে খুলে দেওয়া হয়েছে। ‘গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট’ শীর্ষক এ প্রকল্পের কাজ বিস্তৃত করা হচ্ছে মহাখালী হয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হয়েছে মেট্রোরেল। বিআরটি রুট ও মেট্রোরেলের যাত্রীদের স্টেশন থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিতে ৩৪০টি বৈদ্যুতিক কোরিয়ান এসি বাস কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
‘বিআরটিসির জন্য বৈদ্যুতিক একতলা এসি বাস সংগ্রহ’ প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) প্রস্তাবিত প্রকল্পটি একনেক সভায় উপস্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রথমে সিএনজিচালিত বাসের প্রস্তাবনা পাঠানো হলেও এখন বৈদ্যুতিকভাবে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন।
আরও পড়ুন>> কেনা হচ্ছে ১০০ বৈদ্যুতিক দ্বিতল এসি বাস, ব্যবস্থাপনা নিয়ে সংশয়
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ৩৪০টি এসি বাস সংগ্রহ করা হবে। বাসগুলো ব্যবহার হবে মূলত বিআরটি রুট ও মেট্রোরেলের যাত্রীদের জন্য। প্রথমে সিএনজিচালিত বাসের কথা বলা হয়েছিল। তবে এখন আমরা বৈদ্যুতিক বাসের কথা বলছি। সিএনজি অনেক সময় পেতে সমস্যা হয়, তবে বিদ্যুতের বহুমুখী সোর্স আমাদের দেশে আছে।’
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় এক হাজার ১৩৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩০৪ কোটি ৮৩ লাখ এবং কোরিয়ান ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড ৮২৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ঋণ দেবে। বর্তমান সময় থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ সালের মধ্যেই বাসগুলো কোরিয়া থেকে সংগ্রহ করা হবে।
বাস সংগ্রহে প্রধান কার্যক্রম
১৪০টি সিএনজিচালিত সিঙ্গেল ডেকার এসি সিটি বাস, ১৫ শতাংশ খুচরা যন্ত্রাংশ ও সম্পর্কিত পরিষেবা সংগ্রহে ৩৭২ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় হবে। ২০০টি সিএনজিচালিত সিঙ্গেল ডেকার এসি ইন্টারসিটি বাস ও ১৫ শতাংশ খুচরা যন্ত্রাংশ খাতে ব্যয় হবে ৬৫৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় ১১ কোটি ৮১ লাখ এবং পরামর্শক খাতে ৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
এসি বাস সংগ্রহের আরও উদ্দেশ্য
এসব বাসের মাধ্যমে আন্তঃনগর ও অন্তঃনগরে নির্ভরযোগ্য এবং আরামদায়ক গণপরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। মেরামত অযোগ্য বাসগুলো প্রতিস্থাপন করা হবে পরিবেশবান্ধব সিএনজিচালিত বাসের মাধ্যমে। নিশ্চিত করা হবে পরিবেশবান্ধব পরিবহন।
আরও পড়ুন>> ভাঙা সড়কে বিআরটিসি বাসের ঝাঁকুনি, প্রাণ গেলো সুপারভাইজারের
বিআরটিসি এ প্রকল্পের যৌক্তিকতা তুলে ধরা জানায়, ঢাকা শহরের পরিবহন ব্যবস্থাকে সাজানোর জন্য সিটি বাস সার্ভিস ‘নগর পরিবহন’ রুট যৌক্তিককরণের অধীনে পরিবহন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ৪২টি রুটে পরিচালিত হবে। এই পরিবহন নেটওয়ার্কের অধীনে বিপুল সংখ্যক বাস পরিচালনায় বিআরটিসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিআরটিসি কাঁচপুর-ঘাটারচর রুটে কিছু নন-এসি বাস চালাচ্ছে, যেগুলো এখন পর্যন্ত প্রয়োজন মেটাতে অপ্রতুল। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে প্রচণ্ড গরমে নন-এসি বাসগুলো কাঙ্ক্ষিত যাত্রী পাচ্ছে না। এছাড়া কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে বিআরটিসি।
এসি বাসের স্বল্পতায় এসি প্রাইভেটকারের ব্যবহার বাড়ায়, যা শহরে যানজট ও বায়ুদূষণ সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে এসি বাস চালু হলে প্রচণ্ড গরমে এই ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানীতে সর্বস্তরের মানুষ আরামদায়ক পরিবহন সেবা পাবে এবং প্রাইভেটকার ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হবে। এতে রাজধানীর যানজট ও পরিবেশ দূষণ অনেকাংশে কমবে। এসব কারণে বিআরটিসির বহরে পর্যাপ্ত সংখ্যক মানসম্পন্ন এসি বাস যোগ করা প্রয়োজন।
অপরদিকে পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধনের ফলে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসা ও অন্য কারণে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। এ কারণে দূরপাল্লার রুটে বিলাসবহুল এসি বাসের চাহিদাও বেড়েছে। জনসাধারণের চাহিদার তুলনায় বিআরটিসির বহরে বিলাসবহুল এসি বাসের সংখ্যা খুবই কম। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের চাহিদা মেটাতে বিআরটিসির বহরে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল এসি আন্তঃনগর বাস যুক্ত করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন>> মেট্রোরেলের যাত্রীদের জন্য বিআরটিসির ৩০ বাস
ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিটের (এমআরটি) অনেকাংশ এরই মধ্যে চালু হয়েছে। বাকি কাজও চলমান। তাছাড়া, বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প দ্রুতসময়ে রাজধানীতে চালু হবে। এমআরটি ও বিআরটির যাত্রীদের বিআরটিসি বাস সার্ভিসের মাধ্যমে ল্যান্ডিং পয়েন্ট থেকে গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হবে। এমআরটি ও বিআরটি কর্তৃপক্ষকে সহায়তার জন্য বিআরটিসির আরও এসি বাস প্রয়োজন।
এসডিজির আলোকে ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ, সাশ্রয়ী, অবারিত ও টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। বিশেষ করে নাজুক পরিস্থিতিতে এবং নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও বয়স্কদের চাহিদার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। এসব পরিকল্পনার কথা চিন্তা করেই বাসগুলো সংগ্রহ করবে সরকার।
এমওএস/এএসএ/এমএস