বরগুনায় একসময় বিনোদনের প্রধান মাধ্যম ছিল সিনেমা হল। ছুটির দিনে হাউজফুল থাকতো হল। যা এখন শুধু লোকমুখের গল্প। সিনেমার স্বর্ণালি যুগে জেলার সিনেমা হলগুলো হারিয়েছে অস্তিত্ব। তবে ভালো সিনেমা তৈরি এবং সরকারি সহযোগিতা পেলে মানুষকে আবারো হলমুখী করতে চান সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরগুনা সদর উপজেলায় দুটি সিনেমা হল ছিল। এর মধ্যে কলেজ রোড এলাকায় ১৯৭০ সালে প্রথম চালু হওয়া শ্যামলী সিনেমা হলটি পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। ২০০০ সাল পর্যন্ত ভালোভাবে হলটি চললেও ২০০৬ সালে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। দাঁড়িয়ে থাকা ভাঙা ইটের দেওয়ালগুলো শুধু হলের অস্তিত্বের সাক্ষী হয়ে আছে।
অন্যদিকে সদর রোড এলাকার সোনিয়া সিনেমা হল দর্শক শূন্যতায় চালুর পাঁচ বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। একই কারণে জেলার বাকি সব সিনেমা হলগুলোই বিলীন হয়ে গেছে। পাশাপাশি হল কেন্দ্রিক বিভিন্ন দোকানের ব্যবসায়ীদের বেচাবিক্রিও সে সময়ের মতো নেই।
তরুণ প্রজন্মের একজন সাংস্কৃতিক কর্মী ও নৃত্যশিল্পী চন্দ্রিমা দেয়া জাগো নিউজকে বলেন, বরগুনায় কোনো সিনেমা হল নেই। সুস্থ বিনোদনের জন্য কোনো জায়গাও নেই। তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোথাও যাওয়া যায় না। পরিবারের সবাইকে নিয়ে একত্রে সিনেমা দেখার যে আনন্দ সেটি আমরা হারাচ্ছি। ঘর থেকে বের হতে না পারায় তরুণ প্রজন্ম ঝিমিয়ে পড়ছে।
সাজ্জাদ আহমেদ নামে এক যুবক বলেন, ভালো ও পারিবারিক ছবি এখন তেমন নির্মাণ হয় না। এছাড়া পাইরেসির কারণে সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. রুহুল আমিন বলেন, মানসম্মত সিনেমা তৈরি হলে আবার মানুষ সিনেমা হলে যাবে। আগের মতোই সবাই বিনোদন পাবে।
বরগুনা লিটেল থিয়েটারের সভাপতি ও নাট্যকর্মী জাহাঙ্গির কবির খোকন জাগো নিউজকে বলেন, বরগুনায় এক সময় সিনেমা হল ছিল। আমারা সিনেমা দেখতে যেতাম এবং সময়গুলো ভালোভাবে উপভোগ করতাম। তখনকার সময়টা বর্তমান সময়ের সঙ্গে মেলানো যায় না। সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাচ্চারা সারাদিন মোবাইল গেম নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বাইরে বের হয় না। ফলে বিনোদন একেবারে সীমিত হয়ে গেছে। ঘরবন্দি হয়ে হয়ে পড়েছে বিনোদন।
তিনি আরও বলেন, আশা করি বরগুনায় আবার সিনেমা হল চালু হবে। বাচ্চার বিনোদনের নতুন মাত্রা পাবে। ভালো ছবি মুক্তি পেলে মানুষ আবার সিনেমা হলে যাবে।
শ্যামলী সিনেমা হলের মালিক মো. শাহিন সিকদার জাগো নিউজকে বলেন, বরগুনায় আমার বাবা জালাল আহমেদ সিকদার (চান মিয়া) ১৯৭০ সালে বরগুনায় প্রথম জেনারেটরের মাধ্যমে শ্যামলী সিনেমা হলটি চালু করেন। ১৯৮৪ সালে হল ব্যবসায় আমি যুক্ত হই। পরে বরগুনার পাথরঘাটার কাকচিড়া ও আমতলীতে আরও দুটি হল নির্মাণ করি মোট তিনটি সিনেমা হল আমার চালু ছিল এবং আরও দুটি সিনেমা হল তৈরি করতে পাথরঘাটা ও তালতলীতে জমি কিনি। কিন্তু ধীরে ধীরে হল ব্যবসার পরিস্থিতি খারাপ দেখে জমি ফের বিক্রি করে দেই। মানসম্মত সিনেমা না থাকায় এবং হলে লোক না আসায় লোকসানের কারণে বন্ধ করতে হয়েছে চালু হলগুলো।
তিনি আরও বলেন, সরকারি সহযোগিতা ছাড়া হল ব্যবসা করা আর সম্ভব হবে না। যদি সরকারি সহযোগিতা পাই তবে জেলায় পুনরায় একটি সিনেমা হল তৈরির ইচ্ছা আছে।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা কালচারাল অফিসার তানজিলা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, বরগুনার মানুষ সাংস্কৃতিক মনা। যদি আবার সিনেমা হল নির্মাণ হয় তবে অবশ্যই মানুষ হলে যাবে এবং সিনেমা দেখবে।
এসজে/এমএস