পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র সাতদিন বাকি আছে। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গায় দেড় লক্ষাধিক গবাদিপশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে এখনো জমে ওঠেনি পশু বেচাকেনা। হাটে ক্রেতার উপস্থিতি তুলনামূলক কম। অনলাইনে বেচাকেনায়ও তেমন সাড়া নেই।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে, এ বছর জেলার চারটি উপজেলায় ঈদ উপলক্ষে দেড় লক্ষাধিক পশু লালন-পালন করেছেন প্রায় ১২ হাজার খামারি। এরমধ্যে গরু ও মহিষ ৪৩ হাজার এবং ছাগল ও ভেড়া ৯৩ হাজার। স্থানীয় বাজারে ৭০ হাজারের মতো গরু, মহিষ ও ছাগলের চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে গরু ও মহিষ ২০ হাজার এবং ছাগল ৫০ হাজার। উদ্বৃত্ত ২৩ হাজারের মতো গরু, মহিষ ও প্রায় ৫০ হাজার ছাগল ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার চাহিদা মেটাবে।
আলমডাঙ্গা উপজেলার খামারি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছর কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে আমরা গরু লালন-পালন করে থাকি। গরু হৃষ্টপুষ্ট ও লালন-পালন করতে নিজেদের ব্যক্তিগত বিনিয়োগের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিতে হয়। প্রস্তুত পশু বিক্রি করে আবার সেসব ঋণ পরিশোধ করা হয়। কিন্তু এ বছরের পরিস্থিতি পুরোটাই ভিন্ন। জেলায় সপ্তাহে চারটি বড় বড় পশুর হাট বসলেও ক্রেতাদের উপস্থিতি কম। ফলে বাধ্য হয়ে গরু ফিরিয়ে আনতে হচ্ছে।’
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার খামারি মামুন বলেন, কোরবানির এ সময়ে জেলার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রস্তুত কা পশু ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। কিন্তু এবার সেসব এলাকায় হাটের বাজার খুবই মন্দা। দাম না পাওয়ায় পশুর হাটে তুলে আবার ফিরিয়ে আনার মতো ঘটনাও ঘটছে অহরহ।’
ডুগডুগি হাটে পশু কিনতে আসা শাহাবুল নামের একজন ক্রেতা বলেন, প্রতিবছর খামার থেকে গরু কিনি। খামার থেকে গরু কিনলে সুবিধা আছে। ঈদ পর্যন্ত গরু খামারে রাখা যায়। বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয় না। তবে এ বছর গরুর দামটা একটু বেশি।
হাটে গরু কিনতে আসা নাসির উদ্দিন বলেন, কোরবানির জন্য মাঝারি গরু খুঁজছি। এ বছর গরুপ্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দাম বেশি মনে হচ্ছে। যেহেতু কোরবানি করতে হবে তাই বেশি দাম দিয়েই গরু কিনতে হবে।
কথা হয় আলমডাঙ্গা পশুহাটের প্রবীণ ব্যাপারী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, কোরবানির সময় জেলার পশুহাটগুলোর মধ্যে আলমডাঙ্গার হাটে সবচেয়ে বেশি গরু আসে। আজকের (বুধবার) হাটে যে পরিমাণ গরু উঠেছে তার সংখ্যা অনেক বেশি। হাটে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা দামের গরু রয়েছে। তবে সকাল থেকে চোখে পড়া সবচেয়ে বড় গরুটির মূল্য ধরা হয়েছে ১৭ লাখ টাকা। তবে ক্রেতার সংখ্যা কিছুটা কম।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরিষাডাঙ্গা গ্রামের খালেক শাহ জানান, তার খামারে পঞ্চাশের বেশি ছাগল রয়েছে। তবে তিনি দাম নিয়ে হতাশ। তাই হাটে নিয়ে ছাগল বিক্রি না করে আবার খামারে ফিরত এনেছেন।
অনলাইন বাজার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা গ্রামে বাস করি। অনলাইন বাজার সম্পর্কে আমাদের তেমন কোনো ধারণা নেই। আমাদের কেউ এ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়নি। তাই অনলাইনের ওপর ভরসা কম।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিহির কান্তি বিশ্বাস জানান, গরু লালন-পালন বাবদ খরচ কমিয়ে আনতে ও স্বাস্থ্যসম্মত গোশত উৎপাদনে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু হৃষ্টপুষ্ট করতে খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উদ্বৃত্ত পশু বিক্রির জন্য অনলাইন বাজার ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
অনলাইনে পশু বেচাকেনার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনলাইন পশুহাট’ নামে একটি ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছে। এখানে জেলার খামারিরা তাদের গরু-ছাগলের ছবি, বর্ণনা, সম্ভাব্য দাম, যোগাযোগের জন্য ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করছেন। তবে, ঈদের আগ মুহূর্তে অনলাইনভিত্তিক বেচাবিক্রি বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টরেট (এনডিসি) শাহাদাত হোসেন জানান, করোনাকালীন সংক্রমণরোধে ক্রেতা-বিক্রেতাদের পশুর হাটে যেতে নিরুৎসাহিত করা হয়। সেই সময় বিকল্প হিসেবে অনলাইনে পশু বেচাকেনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যেটা এখনো চলমান। তবে প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে এতে এখন সাড়া কেমন, সে বিষয়ে আমার জানা নেই।
হুসাইন মালিক/এসআর/এমএস