সংগীতের মানুষদের মিলনমেলা হিসেবেই উদযাপিত হয় এমআইবি (মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) -এর আয়োজনে ‘গান মেলা’। গেল বছর ছিলো এর প্রথম আয়োজন। সফলতা ও দারুণ সাড়া পাওয়ায় প্রতি বছরই এটি আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আয়োজকেরা। সে মতেই চলছিলো দ্বিতীয় বছরের প্রস্তুতি। কিন্তু বাধ সেধেছে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। গতবারের মতো এবারেও গান মেলার জন্য ভেন্যু ভাবা হচ্ছে একাডেমি চত্বরকে। তাই একাডেমির অনুমতি চেয়ে আবেদনও করা হয়েছে। তবে গতবারের ভেন্যু শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মেলার আয়োজন হবে কিনা, সেটা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। সময় ঘনিয়ে এলেও শিল্পকলা একাডেমি আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও অনুমোদন দেয়নি মেলা করার। বরং দিন যত ঘনাচ্ছে নানা জটিলতা সৃষ্টি করছে একাডেমি কর্তারা। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে শিল্পকলা একাডেমি ও তার মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।এদিকে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংগীতাঙ্গনের মানুষেরাও। তাদের দাবি শিল্পকলা কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এখানে শিল্পের সব কলাই চর্চা করা হবে। গানের মানুষরা সচরাচর ওদিকে যান না। বছরে কয়েকটা দিন একটা উৎসব পালন করতে চাইছেন। কোন যুক্তিতে অজুহাত দেখাবেন শিল্পকলার মহাপরিচালক!এ বিষয়ে এমআইবির সভাপতি ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান লেজার ভিশনের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান বলেন, ‘শিল্পকলা একাডেমি আমাদের মেলা আয়োজন করার অনুমোদন দিচ্ছে না। আমরা গত বছর সফলভাবে মেলাটি করেছিলাম। আমরা চেয়েছি, এ মাঠেই প্রতিবছর মেলার আয়োজন করতে। কিন্তু তারা (শিল্পকলা একাডেমি) আমাদের অনুমতি দিচ্ছে না! এতে খুবই অবাক হলাম আমরা।’তিনি আরো বলেন, ‘শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ভাই আমাদের বলেছেন, তাদের অস্তিত্ব বিলীন করে নাকি আমাদের মেলার জায়গা দিতে পারবেন না। এটা কী ধরনের কথা, সেটাই আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।’এদিকে সিএমভির কর্ণধার ও এমআইবি’র মহাসচিব এসকে শাহেদ আলী বলেন, ‘আমরা গত বছর শিল্পকলার সমর্থন নিয়ে সুন্দর-সুষ্ঠুভাবে মেলা পরিচালনা করেছি। এখানে শিল্পকলার অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার মতো প্রসঙ্গই আসতে পারে না। তাছাড়া শিল্পকলা তো শুধু নাটকের জন্য নয়, গান কী তাহলে শিল্পকলার অংশ নয়? বাংলা গানের প্রচার ও প্রসার কী শিল্পকলা চায় না?’তিনি বলেন, ‘মহাপরিচালকের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে সংগীতাঙ্গনে। আমার প্রত্যাশা শিল্পকলা এবং সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি বিবেচনা করবেন বাংলা গানের বিকাশের স্বার্থে।’এদিকে এ ব্যাপারে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘শুধু আমি অনুমতি দিলেই তো হবে না। গানের মেলা আয়োজনের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অনুমতিটাই আসল। সেখানে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় যদি অনুমতি দেয় তাহলে মেলা হবে, অনুমতি না দিলে আমাদের পক্ষ থেকে কিছুই করার নেই।’এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিল্পকলা একাডেমির একজন কর্মকর্তা জানান, গতবছর ‘গান মেলা’ একাডেমির নাট্যচর্চায় ব্যাঘাত ও শব্দ দূষণ করেছে। এই ইস্যু ধরেই এবার মেলা করার অনুমতি পাচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা।অন্যদিকে, শিল্পকলায় ভেন্যুর অনুমোদন না পেলেও ‘গান মেলা’ হবেই। এমন আশ্বাস দিয়েছেন এমআইবি নেতারা। গতবারের মতো এবারের মেলাও ১০ দিনের হবে। এমআইবির মহাসচিব ও সিএমভির কর্ণধার এসকে শাহেদ আলী বলেন, ‘একটা ভেন্যুর কারণে তো আর মেলা আটকে থাকতে পারে না। রাজধানীতে ভেন্যুর অভাব নেই। তবে শিল্পকলা একাডেমি এখনও আমাদের প্রথম পছন্দ। তবে আমরা বিকল্প ভেন্যুও দেখে রাখছি। এ ব্যাপারে সরকারের ও সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের সহযোগিতা কামনা করছি।’ জানা গেছে, এবারের মেলা ঘিরেও থাকছে নতুন নতুন চমক। এবারও শতাধিক অডিও-ভিডিও অ্যালবাম প্রকাশ পেতে যাচ্ছে মেলায়। পাশাপাশি থাকবে প্রতিদিন উন্মুক্ত মঞ্চে বাংলাদেশের গান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এবং জমকালো কনসার্ট।এলএ/আরআইপি