ভ্রমণ

হাওরে পানি না আসায় দেখা মিলছে না পর্যটকদের

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা কিশোরগঞ্জ। ভরা বর্ষা মৌসুম শুরু হলেও কিশোরগঞ্জের হাওরে এখনও তেমন পানি আসেনি। তাই এখনো হাওরে দেখা মেলিনি ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের বিচরণ।

এ কারণেই বিপাকে পড়েছেন জেলার করিমগঞ্জের বালিখলা ঘাটের প্রায় দুইশত নৌকার মাঝি। ধারদেনা করে লাখ লাখ টাকায় তৈরি করা নৌকা আর স্পিডবোটের ইঞ্জিন ঘুরছে না। শুয়ে-বসে অলস সময় পার করছেন তারা। নৌকা চালিয়ে আয় না হওয়া ঈদের আনন্দও নেই তাদের ঘরে।

আরও পড়ুন: ঈদের ছুটিতে একদিনেই ঘুরে আসুন সীতাকুণ্ডের ৩ স্থানে

জানা গেছে, বর্ষায় হাওরের নদীগুলোই পানিতে ফুলে ফেঁপে ওঠে। নদীর দুই তীর ছাপিয়ে ভাসায় হাওরের ফসলি মাঠ। সাগর হয়ে ওঠে চারপাশ। হাওরের বিশাল জলরাশির বুকে বিচ্ছিন্ন গ্রামগুলো দেখতে একেকটাকে ছোট দ্বীপের মতো লাগে।

দূর থেকে মনে হয় কচুরিপানা হয়ে পানিতে ভেসে আছে এ গ্রামগুলো। তাই বর্ষায় ভ্রমণপিপাসুদের জন্য সৌন্দর্যের বিপুল পসরা সাজিয়ে বসে থাকে কিশোরগঞ্জের হাওর।

এছাড়া কিশোরগঞ্জের হাওরের তিন উপজেলার ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামের মধ্যে সারা বছর চলাচলের জন্য ৮৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার অলওয়েদার সড়ক নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

আরও পড়ুন: এবারের ঈদে যে কারণে সুন্দরবনে যেতে পারবেন না পর্যটকরা

২০২০ সালের ৮ অক্টোবর গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নান্দনিক এ সড়কের দু’পাশে থৈ থৈ জলরাশি ও আকাশে সাদা মেঘের ভেলা।

মেঘ আর পানির এই মনোরম মিতালি দেখতে বর্ষায় হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন হাওরের অলওয়েদার সড়কে। তবে এবার বর্ষা মৌসুম শুরু হলে হাওরে নেই পানি, এখনো দেখে মেলেনি ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের।

পর্যটক না থাকায় ঘুরছে না নৌকা আর স্পিডবোটের ইঞ্জিন। শুয়ে-বসে অলস সময় পার করছেন নৌকার মাঝিরা।

আরও পড়ুন: ঈদে পরিবার-প্রিয়জন নিয়ে ঘুরে আসুন ‘ঠিকানায়’

করিমগঞ্জ উপজেলার চং নোয়াগাঁও গ্রামের ইঞ্জিন চালিত নৌকার মাঝি হামিদু ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, পর্যটকদের আশায় নিজের জমানো কিছু টাকা ও কিছু টাকা ঋণ নিয়ে সাড়ে লাখ টাকায় নৌকা তৈরি করেছেন।

এখনো হাওরে পানি আসেনি সে কারণেই পর্যটকও আসতেছে না। তাই নৌকাই চালু করতে পারছি না। আমাদের ইনকাম পথ বন্ধ আছে।

একই গ্রামের ইঞ্জিন চালিত নৌকার মাঝি ফাইজুল ইসলাম বলেন, ‘পর্যটকদের ভাড়া বহনের আশায় ৪ লাখ টাকা খরচ করে নৌকা তৈরি করেছি। হাওরে পানি নাই তাই পর্যটকও আসতেছে না। গত বছরে বর্ষায় ১ লাখ টাকা ইনকাম হয়েছিল।’

আরও পড়ুন: ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন মনোমুগ্ধকর রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই সড়ক

স্পিডবোট মালিক জাকির হোসেন জানান, বালিখলা ঘাট থেকে ৭টি স্পিডবোট হাওরে চলাচল করে। ভরা বর্ষার মৌসুম থাকলেও হারে তেমন পানি নেই। এ কারণেই কোনোমতে ৪টি স্পিডবোট চলাচল করতেছে। গত বছর খরচ বাদে আমরা দেড় লাখ টাকা আয় হয়েছিল।

নৌকায় রঙের কাজ করেন মজিবুর রহমান (মজিব আর্ট) মিস্ত্রি জানান, গত বছর অনেকগুলো নৌকা আর্ট করেছি এবার তেমন কাজ নেই। অবস্থা বেশি ভালো না, পানি আসলেই বোঝা যাবে কী হবে, দিনকাল অনেক কষ্ট যাচ্ছে।

নৌকার মিস্ত্রি আক্তার মিয়া বলেন, ‘নৌকা তৈরির কাজ শিখে বিপদে রয়েছি। সব কিছুর দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নৌকা তৈরির স্টিলের দাম বাড়ছে। তাই এ বছর মাত্র ১টি নৌকা তৈরি করেছি।’

আরও পড়ুন: বর্ষায় রূপ ফিরছে হাকালুকি হাওরে, থই থই করছে পানি

‘এ কাজ করে দিন আর চলছে না। পরিবার নিয়ে খুবই কষ্টে আছি। এটি নৌকা তৈরি করেছি। ৬ হাজার ফুটের নৌকা তৈরি করতে ৪ লাখ টাকা খরচ হয় আর ১০ হাজার ফুটের হলে ৫ লাখ।’

নৌকা সমিতির সভাপতি বকুল মিয়া জাগো নিউজকে জানান, জৈষ্ঠ্যমাস থেকে হাওরে পানি আসা শুরু হয়ে যায়। পানির সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকরা হাওরে আসে। নৌকা ভাড়া শুরু হয়ে যায়। মাঝিদেরও আয় ইনকাম শুরু হয়।

বালিখোলা ঘাটে প্রায় দেড় শতাব্দী নৌকা পর্যটক আনা নেওয়ার কাজ করে। হাওরে ৫ মাসে পানি থাকে। একজন মাঝি এ সময় আড়াই লাখ টাকার মতো আয় করতে পারেন। এবার পানি না থাকায় মাঝিরা কষ্টে আছে।

এসকে রাসেল/জেএমএস/এএসএম