১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে শহরের আবুল কাশেম সড়কে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার কার্যক্রম শুরু হয়। পৌর এলাকার আয়তন ৩৮ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৯৫ সালে প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উত্তীর্ণ হয় এটি। কিন্তু দুর্ভোগ ছিল পৌরবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী। ময়লা ফেলার জায়গা না থাকায় নাগরিকরা যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলতেন। আর কোরবানির ঈদে পশুর বর্জ্য যত্রতত্র ফেলায় পুরো শহরই কয়েক মাস মাত্রাতিরিক্ত দুর্গন্ধের মধ্যে থাকতো। তবে এবার ঈদে সেই দুর্ভোগ থেকে বেঁচেছে পৌরবাসী। স্যানিটারি ল্যান্ড ফিল ও পয়োবর্জ্য শোধনাগার চালু হওয়ায় ময়লা, আবর্জনা ও দুর্গন্ধমুক্ত হয়েছে পৌর এলাকা। শহরের সব ময়লা নির্দিষ্ট দিনে সংগ্রহ করার পর স্যানিটারি ল্যান্ড ফিলে ফেলা হচ্ছে।
শহরের যেখানে সেখানে গড়ে ওঠা ময়লার ভাগাড় সরিয়ে নেওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে পৌরবাসীর জীবনে। প্রশাসন বলছে, এতে শুধু নগরবাসীর দুর্ভোগই কমেনি বরং এ বর্জ্য থেকেই উৎপাদন হবে সার। গড়ে উঠবে চমৎকার চুয়াডাঙ্গা।
পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বুজরুকগড়গড়ি পাড়ায় ৩ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয় স্যানিটারি ল্যান্ড ফিল ও পয়োবর্জ্য শোধনাগার। এরজন্য আড়াই কোটি টাকায় জমি কিনে সাড়ে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে স্যানিটারি ল্যান্ড ফিল ও পয়োবর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ করে মেহেরপুর জেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জহিরুল লিমিটেড। ২০২১ সালের ২৮ মার্চ নির্মাণকাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর। এরপর ২০২৩ সালের ১৭ মে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে নির্দিষ্ট স্থান থেকে ময়লা সংগ্রহ করে এই ডাম্পিং স্টেশনে ফেলা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, সর্বমোট ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্যানিটারি ল্যান্ড ফিল ও পয়োবর্জ্য শোধনাগারে প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে পচনশীল ১২ টন বর্জ্য ও ১০ ট্রাক পয়োবর্জ্য সংগ্রহ করে ফেলা হচ্ছে। পচনশীল বর্জ্য থেকে পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতলসহ অন্য জিনিসগুলো বাছাই করার পর ডাম্পিং স্টেশনে ফেলা হচ্ছে। ট্রাক ও ভ্যানে করে বর্জ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে প্রতিদিন। পৌর কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত ফি নিয়ে বাসা বাড়ি থেকে পয়োবর্জ্য সংগ্রহ করছে।
এক সময় পয়োবর্জ্য পাইপ দিয়ে ড্রেনের লাইনে যুক্ত করে দিতেন বাড়ির মালিকরা। সেসবে পয়োবর্জ্য ড্রেনের পানির সঙ্গে মিশে নদীতে গিয়ে পড়তো। এতে নদীর পানি দূষিত হতো। ফলে নদীর পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। তবে এখন এসব সমস্যার সমাধান হয়েছে।
এই ডাম্পিং স্টেশন বা শোধনাগারে রয়েছে অফিস, পাম্প হাউজ, ফিল্টার, পলিশিং, সেটেলমেন্ট ট্যাংকসহ অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা। বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে জৈবসার উৎপাদন হবে। পৌরসভার এমন জনবান্ধব কার্যক্রমে বাসিন্দারা আনন্দিত।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বাসিন্দা খাইরুল ইসলাম বলেন, শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও প্রবেশদ্বারে ময়লার স্তূপ থাকতো। নাকে রুমাল দিয়ে চলাচল করতে হতো। এখন শহর থেকে আবর্জনা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ বাসাবাড়ি থেকে ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ করছে। এ ধরনের কর্মসূচি চালু থাকুক।
চুয়াডাঙ্গা ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ড পাড়ার বাসিন্দা মাহফুজ বলেন, বাস টার্মিনাল এলাকায় সড়কের দুই পাশে ফেলা হতো শহরের সব ময়লা। এখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতো। সাধারণ মানুষের চলাচলে কষ্ট হতো। পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে গিয়েছিল। এখন ময়লা নেই। স্বাস্থ্যঝুঁকিও নেই।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল আজিজ মিন্টু বলেন, ডাম্পিং স্টেশনটি আমার ওয়ার্ডে নির্মাণ করা হয়েছে। পৌর এলাকায় একসময় যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকতো। নানা সমস্যা ও দুর্ভোগ দেখা দিত। এখন পরিবেশ বেশ ভালো হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন জানান, সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের অংশ হিসেবে স্যানিটারি ল্যান্ড ফিল ও পয়োবর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমান পৌর পরিষদ নাগরিক সেবা দিতে বদ্ধপরিকর। পৌরসভার নাগরিকরা নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা রাখলে সংগ্রহ করা সহজ হয়। আর এই কোরবানির ঈদে পশুর বর্জ্য যত্রতত্র ছিল না। দ্রুত এই শোধনাগারে পৌরসভার কর্মীরা বর্জ্য সংগ্রহ করে ফেলেছেন। এতে সুফল পাচ্ছে পৌরবাসী।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভূঁইয়া বলেন, ময়লার বিষয়ে আগে বদনাম ছিল। বেশকিছু দিন আগে চালু করা হয়েছে পৌরসভার ডাম্পিং স্টেশনটি। পৌর এলাকার বুজরুকগড়গড়ি পাড়ায় এটি নির্মাণ করা হয়েছে। ওয়ার্ডগুলো থেকে ভ্যান গাড়িতে করে ময়লা সংগ্রহ করা হচ্ছে। শহর ময়লা-আবর্জনা মুক্ত হয়েছে। স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরেছে। বর্জ্য থেকে জৈবসার উৎপাদন হবে এক সময়। ময়লাও কাজে লাগছে। এভাবে গড়ে উঠবে চমৎকার চুয়াডাঙ্গা।
এফএ/এমএস