অর্থনীতি

স্থল শুল্ক রাজস্ব আদায়ের নামে চলছে হরিলুট

স্থল শুল্ক রাজস্ব আদায়ের নামে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সরকারি অর্থ হরিলুট করেছেন। ট্রেজারি চালানে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে পুরো টাকাটাই নিজেদের পকেটস্থ করে ফাঁকি দেয়া হয়েছে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব। শুধু তাই নয়, নিলামে পণ্য বিক্রি করে সেই টাকা সরকারি ফান্ডে জমা না দিয়ে ভাগ ভাটোয়ারা করে নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।  জাতীয় সংসদ ভবনে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বিশেষ অডিট রিপোর্টে এসব চিত্র উঠে এসেছে। কমিটি আত্মসাৎকৃত টাকা উদ্ধার এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার সুপারিশ করেছে। কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে স্থল শুল্ক রাজস্ব আদায় ও হিসাবভুক্তি কার্যক্রম সম্পর্কিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ২০০৬-০৭ ও ২০০৮-২০০৯ অর্থ বছরের হিসাবের উপর বিশেষ অডিট রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হয়। উপস্থাপিত রিপোর্টে আমদানিকৃত পণ্য সঠিক হারমোনাইজড সিস্টেম কোডে শুল্কায়ন না করায় শুল্ক কর বাবদ সরকারের ৯১ লাখ ৪২ হাজার ১৪৮ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয়। তবে কমিটি উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে প্রি-শিপমেন্ট ইনস্পেকশন এবং বিল অব লেডিংয়ের কপি যাচাই করে এই টাকা আদায়যোগ্য কি-না তা যাচাই করতে বলেছে। আদায়যোগ্য না হলে বিষয়টি অতিদ্রুত নিষ্পত্তি এবং আদায়যোগ্য বিবেচিত হলে আদায় প্রক্রিয়া শুরু করার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। এদিকে বৈঠকে ট্রেজারি চালান জালিয়াতির মাধ্যমে ৩২ লাখ ২০ হাজার ২২৫ টাকা রাজস্ব ক্ষতি উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি ত্রি-পক্ষীয় মিটিংয়ে বিষয় দু’টি যাচাই সাপেক্ষে অনধিক ৩০ দিনের মধ্যে এই টাকা আদায়ের সুপারিশ করেছে। আদায়কৃত ট্যারিফের ৪৯ শতাংশ ভ্যারিয়েবল রয়্যালটি পরিশোধ না করায় ১ কোটি ৩০ লাখ ৭২ হাজার ১৯২ টাকা আদায়যোগ্য এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুরোপুরি কমার্শিয়াল অপারেশন শুরু না করায় লিকুইডেটেড ড্যামেজ বাবদ ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা আদায়যোগ্য মর্মে উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি আগামী সাত দিনের মধ্যে জমাকৃত টাকার প্রমাণাদি দেখে অডিট অফিসের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে বিষয় দু’টি নিষ্পত্তির সুপারিশ করে।বৈঠকে উপস্থাপিত রিপোর্টে বলা হয়, বন্দর ব্যবহারকারীর নিকট থেকে মুসক কম আদায় করায় সুদসহ ১ কোটি ৪৮ লাখ ৮০ হাজার ৯৮৭ টাকা সরকারের ক্ষতি হয়েছে। ভ্যারিয়েবল রয়্যালটি আংশিক পরিশোধ করায় ক্ষতি হয়েছে ২৮ লাখ ২৯ হাজার ৩৭৫ টাকা। ট্যারিফ সিডিউলে বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও আমদানিকৃত পণ্যের বিপরীতে বাণিজ্যিক ভ্যাট, মুসক ও অন্যান্য শুল্ক কর অনাদায় অথবা সঠিক হারে আদায় না করায় ক্ষতি হয়েছে ৮৪ লাখ ৭৭ হাজার ৮৫৬ টাকা এবং নিলামে বিক্রিত পণ্যের বিক্রয়লব্ধ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান না করায় সরকারের ৭৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮২৯ টাকা ক্ষতি হয়েছে। কমিটি এসব টাকা সংশ্লিষ্টদের নিকট থেকে দ্রুত আদায় করার তাগিদ দিয়েছে।  কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মো. আব্দুস শহীদ, পঞ্চানন বিশ্বাস, মো. অফসারুল আমীন, শামসুল হক টুকু, মইন উদ্দীন খান বাদল এবং মো. রুস্তম আলী ফরাজী অংশ নেন। অডিট অফিস, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।এইচএস/একে/এবিএস