এখন গুলশানের ছেলেরা যেমন ছেঁড়া জিন্স প্যান্ট পরে, গ্রামের ছেলেরাও তেমন ছেঁড়া জিন্সের প্যান্ট পরে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারদের সংগঠন বাংলাদেশ ইউনিয়ন সদস্য সংসদের (বাইসস) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রোববার (৯ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এখন গ্রামের ছেলে আর শহরের ছেলের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ গ্রাম থেকে আসলে বোঝা যেত যে সে গ্রাম থেকে আসছে। এখন আমার গ্রামের ছেলে আর ঢাকা শহরের গুলশানের ছেলের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। গুলশানের ছেলে যেমন ছেঁড়া জিন্সের প্যান্ট পরে, গ্রামের ছেলেও ছেঁড়া জিন্সের প্যান্ট পরে। গ্রামের ছেলে আর শহরের ছেলের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। অর্থাৎ ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, এখন অনেক মানুষ ভাবে যে যদি আমি গ্রামে গিয়ে থাকতে পারতাম। কারণ সেখানে নির্মল বাতাস এবং ক্ষেত থেকে তুলে আনা শাকসবজি, পুকুরের মাছ আছে। আজ অনেকেই ভাবে যে শহর থেকে যদি গ্রামে যেতে পারতাম। আমার গ্রাম আমার শহর বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে। এ পরিবর্তনের কথাটা জনগণকে দয়া করে বলবেন।
আরও পড়ুন: ব্যস্ততার মাঝেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেন হাছান মাহমুদ
ড. হাছান বলেন, দেশ যখন এভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তখন দেশকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠিত করে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তখন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয় তখন আমাদের জিডিপি গ্রোথ রেড ছিল। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আজ পর্যন্ত আমরা সেটি অর্জন করতে পারিনি। আমরা ৮ শতাংশের বেশি অর্জন করেছি। অর্থাৎ দেশ যখন সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু, তখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের এই দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সব প্রতিকূলতা, ঝড়, বন্যা জলোচ্ছ্বাসের প্রতিকূলতা, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের প্রতিকূলতা এবং অপরাজনীতির প্রতিকূলতা, মানুষ পোড়ানোর অপরাজনীতির প্রতিকূলতা, সব ষড়যন্ত্রকে ছিন্ন করে যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তখন আবার দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্রের সুযোগ আমাদের কোনো কোনো রাজনীতিবিদ করে দেয়।
‘আপনারা জানেন যে, গত সাড়ে ১৪ বছরে দেশ বদলে গেছে। কোনো ছেলে যদি ১৪ বছর আগে বিদেশ গিয়ে থাকে সে যখন ১৪ বছর পর দেশে আসে, সে তার শহর চিনতে পারে না, গ্রাম চিনতে পারে না, এটিই বাস্তবতা। তার শহরে গেলে মনে হয় ঢাকা শহর। উঁচু উঁচু দালান, সুন্দর রাস্তা, চার লেনের রাস্তা জেলা পর্যায়ে। উপজেলা শহর এখন জেলা শহরের রূপ ধারণ করেছে। গ্রামের যে মেঠো পথ মাড়িয়ে সে বিদেশে গিয়েছিল, সেই মেঠোপথ এখন আর নেই। সেই মেঠোপথ এখন ইট বিছানো রাস্তা বা কার্পেটিং হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সেটি আবার সিমেন্টের কংক্রিট দিয়ে বানানো হয়েছে। এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি বলে আমরা এই পরিবর্তনটা অনুভব করি না। কিন্তু যে হঠাৎ করে বহুদিন পরে দেখে, সে বুঝতে পারে দেশে কী পরিবর্তন ঘটে গেছে। আজ থেকে সাড়ে ১৪ বছর আগের কথা ভাবুন। একটি সাধারণ পরিবারে সপ্তাহে দু-তিন বেলা মাছ-মাংস খেতে পারতো। এখন প্রতি বেলায় মাছ অথবা মুরগি। অন্তত প্রতিদিন মাছ অথবা মুরগি থাকে।’
মন্ত্রী বলেন, আগে দাবি ছিল মোটা চাল, মোটা কাপড়। এখন মোটা চাল কেউ খায় না। মোটা চাল গরুকে খাওয়ায় অথবা হাঁস-মুরগিকে খাওয়ায়। আগে একজন রিকশাওয়ালা সারাদিন রিকশা চালিয়ে ঢাকা বা চট্টগ্রাম শহরে চার কেজির বেশি চাল কিনতে পারতো না। এখন একজন রিকশাওয়ালা সারাদিন রিকশা চালিয়ে কমপক্ষে ১০ কেজি চাল কিনতে পারে। এটিই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন আপনারা। তাই আপনাদের কাছে আমার বিনীত নিবেদন, এই যে পরিবর্তনটা ঘটে গেলো সাড়ে ১৪ বছরে, এটি সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে। সাধারণ মানুষ ভুলে গেছে যে সাড়ে ১৪ বছর আগে দেশের আনাচে কানাচে বিদ্যুৎ ছিল না। আমার বাড়িতেই বিদ্যুৎ ছিল না। হারিকেনের আলো বা চেরাগের আলোয় ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করতে হতো। এখন প্রাইমারি স্কুলের ছেলেকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় হারিকেন কাকে বলে, চেরাগ কাকে বলে, সে বলতে পারবে না। সেটি ড্রয়িং রুমে সাজিয়ে রাখার বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটিই পরিবর্তন।
আইএইচআর/এমএইচআর/জেআইএম