জামালপুর সদর উপজেলায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে রাকিবুল (৩২) নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে টয়লেটে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। টয়লেটেই নাওয়া-খাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছু করছেন তিনি। যা মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে জানিয়েছেন মানবাধিকারকর্মীরা।
স্থানীয়দের দাবি, পৈতৃক সম্পত্তি একাই ভোগ করতে রাকিবুলকে আটকে রেখেছেন সৎ ভাই স্কুলশিক্ষক রফিকুল ইসলাম।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের হায়দার আলীর প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। এরপর জন্ম নেয় রাকিবুল। ছোটকাল থেকেই সে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। বাংলা শিক্ষার পাশাপাশি কুরআন শিক্ষাও গ্রহণ করেন তিনি। পড়ালেখা করেন দশম শ্রেণি পর্যন্ত। ছোট বয়সে হঠাৎ বিদ্যালয়ের সহপাঠীদের সঙ্গে বিবাদে জড়ালে পাগল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় তাকে। বাবা হায়দার আলী বেঁচে থাকা অবস্থায় চিকিৎসা করান তার। বাবা মারা যাওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় চিকিৎসা। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে একটি জীর্ণশীর্ণ টয়লেটে বন্দি করে রাখা হয়েছে তাকে। এরপর থেকেই ওই ঘরেই নাওয়া খাওয়া, প্রস্রাব পায়খানা সব কিছু করছেন তিনি।
রাকিবুলের সাথে কথা বলে বুঝার উপায় নেই তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি তার নিজের নাম বলতে পারেন, বাবার নাম বলতে পারেন, নামাজ পড়তে পারেন, কোরআন তেলাওয়াত করতে পারেন, কোরআনের বিভিন্ন সুরা কেরাত মুখস্থ পাঠ করতে পারেন। এছাড়া বদ্ধ ঘরে থাকতে তার ভীষণ কষ্ট হয় তাও প্রকাশ করতে পারেন।
তবে সৎ ভাই রফিকুল ইসলামের দাবি, রাকিবুলের চিকিৎসার জন্য পাবনা মানসিক হাসপাতালে সাড়ে তিন মাস চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবু সুস্থ হয়নি রাকিবুল। সে এখন সম্পূর্ণ মানসিক ভারসাম্যহীন। তাই তাকে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি। দীর্ঘ এক যুগ ধরে ছেলেটির ওপর অমানবিক নির্যাতন চলছে। যা চরম শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই দ্রুত প্রশাসনিক উদ্যোগ নিয়ে ছেলেটিকে উদ্ধার এবং সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানাই। এছাড়া ওর মা যদি আইনগত কিংবা চিকিৎসা সহায়তার জন্য আমাদের কাছে আসেন তাকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটুস লরেন্স চিরান জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি এরই মধ্যে শুনেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাজ শুরু করেছি। এছাড়া অভিযুক্ত রফিকুল ইসলামের সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনি (রফিকুল) বলেছেন, রাকিবুলকে অনেক চিকিৎসা করিয়েছেন তারা। কিন্তু সে ভালো হচ্ছে না। তাই তারা তাকে আটকে রেখেছেন।
মো. নাসিম উদ্দিন/এসজে/জিকেএস