কুড়িগ্রামে উজানের ঢল আর ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় ৬৫০টি পুকুর ডুবে গেছে। ফলে পুকুরে থাকা প্রায় ১৩০ মেট্রিক টন পোনা মাছ ভেসে গেছে বলে জানিয়েছে মৎস্য অফিস। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ছয় শতাধিক মৎস্যচাষি।
প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই অনেকের পুকুর ডুবে গেছে। কারও প্রস্তুতি থাকলেও পানির তোড়ে ভেঙে গেছে পুকুরপাড়। কেউবা জাল দিয়ে ঘিরেও আটকাতে পারেননি পুকুরের মাছ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুড়িগ্রামের রাজারহাটের ঘড়িয়াল ডাঙা, জয়কুমর; নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙা ও কালিগঞ্জ; ফুলবাড়ীর উপজেলার গোরকমণ্ডপ, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি, যাত্রাপুর; উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ, থেতরাই; চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ, থানাহাট; রৌমারী উপজেলার সাহেব গঞ্জ ও রাজিবপুর সদর ইউনিয়নের ৬০০ মৎস্যচাষির পুকুর ডুবে মাছ ভেসে গেছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে অর্ধশতাধিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি, পাঠদান বন্ধ
কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বন্যায় জেলায় ৬০০ মৎস্যচাষির ৬৫০টি পুকুর ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া পুকুরগুলো থেকে ১৩০ মেট্রিক টন পোনা মাছ ভেসে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ ২৬ লাখ টাকা।
নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙা ইউনিয়নের মৎস্যচাষি জলিল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘এক রাতের বন্যায় আমার চার বিঘা পুকুরের ২৫ মণ মাছের পোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পেঁপে গাছসহ অন্যান্য সবজি নষ্ট হওয়ায় ৬-৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
রাজারহাট উপজেলার জয়কুমর এলাকার আসলাম হোসেন বলেন, মাছচাষের আয় দিয়ে আমার সংসার চলে। চলতি বছর তিন বিঘা পুকুরে প্রায় ২০ মণ মাছের পোনা ছেড়েছি। মাছের বাড়ন্ত ভালো ছিল। হঠাৎ পানি আসায় আমার পুকুরের একপাড় ডুবে গেছে। অনেক চেষ্টা করেছি। জাল দিয়ে পুকুর ঘিরে রেখেও মাছ আটকাতে পারিনি।’
আরও পড়ুন: ‘ঘরে চাল থাকলেও আগুন জ্বালানোর উপায় নাই’
তিনি বলেন, ধারদেনা করে পুকুরে মাছ ছেড়েছি। বানের পানিতে সব ভেসে গেলো। এখন ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবো তা নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের জয়নাল মিয়া বলেন, ‘রাস্তার পাশে দুই বিঘা জমিতে মাছচাষ করেছি। পানি বাড়ার খবরে পুকুরের চারপাশ জাল দিয়ে ঘিরে রেখেছি। রাতে পানির চাপে রাস্তা উপচে পুকুরপাড় ভেঙেছে। এতে পুকুরে থাকা সব মাছ ভেসে গেছে।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় বলেন, আমরা প্রতিদিনই মাছচাষিদের খোঁজখবর নিচ্ছি। তাদের পরামর্শ দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিদের তালিকা তৈরির কাজ চলমান।
ফজলুল করিম ফারাজী/এসআর/জেআইএম