টাঙ্গাইলে চিকিৎসা সেবার নামে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে শত শত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই চলছে জেলার বৃহৎ সংখ্যক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালীর ছত্রছায়া ও স্বাস্থ্য বিভাগের অসাধু কতিপয় কর্মকর্তার সহযোগীতায় গড়ে ওঠা এসব অনুমোদনহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের ভ্রাম্যমাণ আদালতের যৌথ অভিযানের অভাবে দিন দিন বেড়েই চলেছে। অপরদিকে সাধারণ মানুষকে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এসে হতে হচ্ছে প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্থ।জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সুত্রে জানা যায়, জেলায় অনুমোদিত ৮০টি ক্লিনিক ও ৮৫টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পাশাপাশি প্রায় ৭০টি অনুমোদনহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে।সরেজমিনে ঘুরে ও রোগীদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টাঙ্গাইলে স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমতি না নিয়েই যত্রতত্র ও অলিগলিতে গড়ে উঠেছে ক্লিনিক ও ডায়েগনস্টিক সেন্টার। ফলে প্রতিনিয়তই প্রতারিত হচ্ছে রোগীরা। রোগ নির্ণয়ের পর্যাপ্ত পরিমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি, দক্ষ টেকনিশিয়ান না থাকলেও সরকারি হাসপাতালে মানমস্মত চিকিৎসা না পাওয়া রোগীরা ক্লিনিকেই হুমড়ী খেয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে। আর এই সুযোগে ক্লিনিক মালিকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে অসহায় রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক ক্লিনিকে আধুনিক যন্ত্রপাতি, দক্ষ প্যাথলজিস্ট ও সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষের নজরদারীর অভাবে অধিকাংশ ক্লিনিকেই অদক্ষ প্যাথলজিস্ট দিয়েই চলছে পরিক্ষা নিরিক্ষার কাজ। ফলে প্রতিনিয়তই প্রতারণাসহ আর্থিক ক্ষতির সম্মূখিন হচ্ছে রোগীরা। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাতারাতি নতুন নতুন ক্লিনিক গড়ে উঠছে। এতে অসহায় রোগীর পাশাপাশি অনুমোদনপ্রাপ্ত ক্লিনিক মালিকরা চরম ক্ষতির সম্মুক্ষিন হচ্ছে বলে জানা গেছে।স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে গড়ে ওঠা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অবস্থানে রয়েছে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন সাবালিয়ায় গড়ে ওঠা জনসেবা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। প্রতিষ্ঠানটির টিনসেড ঘরে চলছে এক্স-রে মেশিন। পরীক্ষা নিরীক্ষার অধিকাংশ যন্ত্রাংশই পরিচালনা করছে অদক্ষ কর্মীরা। একই ভাবে পরিচালিত হচ্ছে পদ্মা ক্লিনিক নামের অপর একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি লাইসেন্সের আবেদন করেই চালিয়ে যাচ্ছে চিকিৎসা সেবা। প্রতিষ্ঠানটিতে নেই মান সম্মত চিকিৎসক।চিকিৎসা সেবার নাম ভাঙিয়ে দেদারছে চলছে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা। এতে একদিকে অনুমোদনপ্রাপ্ত ক্লিনিক মালিকরা ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে অন্যদিকে রোগীদের আর্থিক ক্ষতিসহ রোগী মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনুমোদনপ্রাপ্ত ক্লিনিক মালিকরা।এ প্রসঙ্গে অনুমোদনহীন ক্লিনিক মালিকরা বলছেন, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে এবং নিয়ম জেনেই এ ব্যবসা শুরু করেছেন তার।তবে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ ইবনে সাঈদ বলেছেন, অনুমোদনবিহীন ক্লিনিক মালিকদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, টাঙ্গাইলের সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর তুলনায় সিট কম থাকায় ক্লিনিকের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। তবে অনুমোদনহীনভাবে পরিচালিত ক্লিনিকগুলো বন্ধে দ্রুত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। আরিফ উর রহমান টগর/এফএ/এবিএস