দেশজুড়ে

তিন দিনের মাথায় ফের খালি হাতে ফিরতে হলো জেলেদের

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপের কারণে ফের সমুদ্র উত্তাল হওয়ায় নিরাপদ আশ্রয়ে তীরে ফিরছে মাছ ধরার শতশত ট্রলার।

বুধবার (২ আগস্ট) পটুয়াখালীর বড় দুটি মৎস্যবন্দর আলীপুর ও মহিপুর ঘাটে জেলেরা আশ্রয় নিয়েছেন।

জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২৩ জুলাই রাতে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সমুদ্রে মাছ শিকারে নামলে তার ঠিক দুই দিনের মাথায় সমুদ্র উত্তাল হলে ২৫ জুলাই বিকেল থেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে আসেন জেলেরা। এরপর গত শুক্রবার ফের মাছ শিকারে সমুদ্রে যান তারা। তবে তার তিন দিনের মাথায় বৈরি আবহাওয়ার প্রভাবে আবারও ফিরে আসতে হয়েছে ছেলেদের। এতে একদিকে লোকসানের মুখে পড়ছেন তারা, অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়ছে জেলেদের পেশা।

আরও পড়ুন: উত্তাল সমুদ্র, শূন্যহাতেই নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরছে মাছ ধরার ট্রলার

আলীপুর-মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র দুটি ঘুরে দেখা যায়, স্থানীয় জেলে ছাড়াও কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ভোলা, মোংলা, বাঁশখালীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের জেলেরা আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় সেখানে আশ্রয় নেন। জেলেদের পদচারণায় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র মুখর থাকলেও তাদের মুখ মলিন। জেলেরা বলছেন, বছরের বেশিরভাগ সময়ে এভাবে অবরোধ আর আবহাওয়া খারাপ হলে তাদের এ পেশায় টিকে থাকা দায় হয়ে যাবে।

এফভি তমা ট্রলারের মাঝি মনির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ভোলার জেলে। তিনদিন আগে সমুদ্র নেমে হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে আজকে এখানে আশ্রয় নিয়েছি। পরপর দুইবার সমুদ্রে নেমে ঝড়ের কবলে পড়ে আমাদের প্রায় সাত লাখ লোকসান হয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘নিষেধাজ্ঞা শেষ নিম্নচাপ শুরু, আমরা খামু কী’

এফবি লাইজু ট্রলারের মাঝি রুম্মান হাওলাদার জাগো নিউজকে বলেন, ৬৫ দিনের অবরোধ শেষ করে আমরা সমুদ্রের নামার পরে দুইদিন মাছ ধরেছিলাম। এইবার গিয়েও তিনদিনের মাথায় আশ্রয় নিতে হয়েছে। জীবন বাজি রেখে সমুদ্রে গিয়েও থাকতে পারছি না। আমরা সরকারের কাছে সহযোগিতা চাই।

মহিপুর মৎস্য আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজু হোসেন রাজা বলেন, সমুদ্র উত্তাল হওয়ায় পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থানের জেলেরা এই বন্দরে আশ্রয় নিচ্ছে। গতকাল থেকে আবহাওয়া খারাপ হওয়া শুরু করলে সমুদ্রে থাকা জেলেরা সবাই আশ্রয় নিতে শুরু করে। হাজারের অধিক ট্রলার এরইমধ্যে চলে এসেছে। সমুদ্র থেকে আসার সময় চারটি ট্রলার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। তবে জেলেদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। বছরে দুইবার অবরোধ এবং বৈরি আবহাওয়ার প্রভাবে জেলেদের পেশা সংকটের মুখে পড়েছে।

পটুয়াখালী জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষক জয়দেব কবিরাজ জাগো নিউজকে বলেন, গভীর নিম্নচাপটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ-বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় স্থল নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে। স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এর ফলে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে।

আরও পড়ুন: সাগর উত্তাল, কুয়াকাটায় পর্যটকদের নিরাপদে থাকার নির্দেশ

তিনি আরও বলেন, পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৩ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

আসাদুজ্জামান মিরাজ/এমআরআর/জেআইএম