সিরাজগঞ্জ সদরে যমুনা নদীবেষ্টিত কাওয়াকোলা ইউনিয়ন। এটি সিরাজগঞ্জ পৌরশহরের মূল ভূখণ্ড থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন। চরাঞ্চলের প্রায় ১৪ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে ৩১টি গ্রাম নিয়ে ইউনিয়নটি অবস্থিত।
ছয়-আট কিলোমিটার জলপথ নৌকায় পাড়ি দিয়ে এ বাসিন্দাদের শহরের মূল ভূখণ্ডে পৌঁছে নাগরিক ও ভূমি অফিসের সেবা নিতে হয়। মূলত সড়ক পথ না থাকা ও বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল হওয়ায় ইউনিয়নটি এখনো অনেকটা পিছিয়ে আছে। ভৌগোলিক কারণে স্বাধীনতার এত বছর পর ২০২২ সালে ওই ইউনিয়নে পৌঁছেছে বিদ্যুৎ।
শহরের সঙ্গে এ ইউনিয়নের সহজ কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় বছরের পর বছর স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এখানকার বাসিন্দারা। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তবে ওই ইউনিয়নে তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। যার মাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসা ও বিনামূল্যে ওষুধ পেয়ে সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছে। তবে রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে সহজে দূরের হাসপাতালে নেওয়া যায় না।
কাওয়াকোলা ইউনিয়নের বড় কয়ড়া গ্রামের বাসিন্দা সেফালী খাতুন বলেন, যুগ যুগ ধরে এখানকার মায়েরা স্থানীয় কিছু অপ্রশিক্ষিত নারীর সহযোগিতায় সন্তান প্রসব করে আসছেন। ব্যথা উঠলে নদী পার হয়ে সদর হাসপাতালে যাওয়ার সময় পাওয়া যায় না। এ চরে বাল্যবিয়েরও প্রবণতা বেশি। তাই এখানকার নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। এ ইউনিয়নে প্রায় ১৭ হাজার মানুষের বসবাস। তবে স্থায়ীভাবে বসবাস করে প্রায় ১০ হাজার মানুষ। বাকিরা যমুনা নদীর ভাঙনের ভয়ে অন্য জায়গায় বসবাস করে।
কাটাঙ্গাচর গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুস সাত্তার বলেন, আমরা বসবাস করি ইউনিয়নে। কিন্তু সেবা নিতে নৌকায় যমুনা নদী পার হয়ে যেতে হয় শহরে। কারণ আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ ও ভূমি অফিস শহরের পুরাতন জেল খানা ঘাটে। আমরা চরাঞ্চলে বাস করি এ জন্য কেউ আমাদের ঠিকভাবে খোঁজই রাখে না। এমনকি এনজিওর লোকজনও যায় না। আমরা নাকি ঋণ নিলে পরিশোধ করতে পারবো না।
পুরাতন জেলখানা ঘাটের কয়েকজন জানান, চরাঞ্চলে এখনো আদি যুগের চিকিৎসাসেবা চলমান আছে। ঝাড়ফুঁক, পানি পড়া, হাত-পা ভাঙলে বাঁশের চটি লাগানো- এসব প্রচলিত হাতুড়ে সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন মানুষ। অনেকেই আবার দীর্ঘদিনের অসুস্থতাকে সঙ্গী করে বেঁচে আছেন।
কাওয়াকোলা ইউনিয়নের বাসিন্দা আলী আশরাফ বলেন, যমুনার ভাঙন আতঙ্কে আমরা এখন শহরে বসবাস করি। আমাদের মতো অনেকেই অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্য জায়গায় বসবাস করছেন। কেউ কেউ এলাকা ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন।
এ বিষয়ে কাওয়াকোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া মুন্সী জাগো নিউজকে বলেন, এ ইউনিয়নটি ভৌগোলিক অবস্থায় যমুনা নদী বিধৌস্ত এবং দুর্গম চরাঞ্চলে। এ জন্য বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয় এখানকার মানুষকে। মূলত এ ইউনিয়নের মানুষ জীবিকা ও জীবন রক্ষায় প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে চলতো। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত মুন্নার চেষ্টায় পিছিয়ে পড়া দুর্গম চরাঞ্চলে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জীবনমান এখন বেশ উন্নত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতি বছরই ইউনিয়নটি কিছু অংশ যমুনায় বিলীন হচ্ছে। এ জন্য আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি এ ইউনিয়নটি রক্ষা করতে যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি স্থায়ী বাধ নির্মাণ করা হয়। আর সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে স্থায়ী ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণের চেষ্টা চলছে। সেটি বাস্তবায়ন হলে ইউনিয়নবাসীর কষ্ট অনেকটাই লাঘব হবে।
এম এ মালেক/এমএস