পাবনার ঈশ্বরদীতে পদ্মা নদীর পানি প্রতিদিনই গড়ে ৫-৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। আট দিনের ব্যবধানে পদ্মায় পানি বেড়েছে ১ দশমিক ২১ মিটার। বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা পরিমাপ করা হয় ১১ দশমিক ৯৬ মিটার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের রিডার হারিফুন নাঈম ইবনে সালাম।
এদিকে পদ্মার বাড়ন্ত পানি দেখতে প্রতিদিনই দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড় জমছে। পানি বাড়ার খবর পেয়ে হার্ডিঞ্জ ব্রিজে এসেছেন ঈশ্বরদীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী খায়রুল ইসলাম।
তিনি বলেন, পদ্মায় পানি বেড়েছে শুনে দেখতে এলাম। পদ্মা নদী দেখে মনে হচ্ছে নদী তার যৌবন ফিরে পেয়েছে। ছোট বেলায় নদীতে এমন ভরপুর পানি দেখতাম। অনেক দিন পর পদ্মার সেই চিরচেনা রূপ দেখলাম। এখানে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু আছে। সুন্দর মনোরম পরিবেশে একটু সময় কাটালাম।
উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের কলেজ ছাত্র নাসিম হোসেন বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকার পরিবেশ এমনিতেই খুবই সুন্দর। সময়-সুযোগ পেলে বন্ধু ও ভাইদের নিয়ে বেড়াতে আসি। এখন পদ্মায় পানি বেড়েছে এটি দেখেও খুব ভালো লাগছে।
নদীর মাঝি শহিদুল ইসলাম বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরে পানি বেড়েই চলেছে। ব্রিজের ১৩টি গার্ডার পানির নিচে চলে গেছে। বাকি দুই গার্ডারের ওপরও যেকোনো সময় পানি উঠে যেতে পারে। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় আশপাশের চরাঞ্চল ও ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
মাঝি তুহিন মালিথা বলেন, আট দিন ধরে পানি বাড়ছে। অন্য বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে পানি বাড়ে। এবার আগে থেকেই পানি বাড়ছে। নদীর চরের ফসলি জমি ডুবে গেছে। কলার বাগান ও আখের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
এদিকে, পানি বাড়ায় পদ্মার চরাঞ্চলের ফসলের জমি তলিয়ে যাচ্ছে। এতে করে কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। উপজেলার সাঁড়া ও লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের পদ্মার চরাঞ্চল তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে সাঁড়ার মোল্লার চর, বিলবামনির ৩২৫ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এখানকার ২২৫ বিঘা জমিতে আখের জমিতে পানি উঠেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এসব আখ পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
মোল্লার চরের ১০ বিঘা জমিতে আখের আবাদ করেছেন আমজাদ হোসেন মোল্লা। তিনি বলেন, আখের জমিতে পানি উঠে গেছে। এখনো পুরোপুরি আখ ডুবে যায়নি। তবে যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে দুই চারদিনের মধ্যেই ডুবে যেতে পারে।
উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নের কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, পদ্মার চরে জেগে ওঠা সবচেয়ে বড় চর বিলবামনি। এ চরের ৩২৫ হেক্টর জমি এখন পানির নিচে। এখানকার জমিতে এখন শুধুমাত্র আখের ফসল আছে। আখের জমিতে পানি উঠলেও এখনো তলিয়ে যায়নি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জাগো নিউজকে বলেন, পদ্মা নদীর তীরবর্তী চরের কিছু ফসলি জমিতে পানি উঠেছে। কিন্তু পানি বাড়ার কারণে ফসলের তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। প্রতিটি ইউনিয়নে কর্মকর্তা কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। পানি বৃদ্ধির কারণে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হলে তা সঙ্গে সঙ্গে কৃষি অফিসকে জানাবে।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, বৃষ্টিপাত-পাহাড়ি ঢল ও পার্শ্ববর্তী দেশে বন্যার কারণে পদ্মার পানি বেড়েছে। পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৩.৮০ মিটার। এখানে বর্তমানে পানির উচ্চতা ১১ দশমিক ৯৬ মিটার। তাই এখনো বিপৎসীমা থেকে বেশ দূরে আছে পদ্মার পানি। পদ্মার পানি গত তিন দিনে তুলনামূলক কম বেড়েছে। এর আগের সাতদিন বেশি বেড়েছিল। আশা করি পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে না।
এসজে/জেআইএম