বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজের ভর্তি জালিয়াতির ঘটনায় আটক তিন কর্মচারীসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
শনিবার (১৯ আগস্ট) রাতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম বাদী হয়ে শাজাহানপুর থানায় মামলাটি করেন। মামলায় অজ্ঞাত আরও পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
এরআগে শনিবার বিকেলে কলেজের তিন কর্মচারীকে জালিয়াতির অভিযোগে আটক করে র্যাব ও পুলিশ। রোববার দুপুরে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের আদালতের মাধ্যমে করাগারে পাঠানো হয়।
মামলায় গ্রেফতাররা হলেন- শাজাহানপুর উপজেলার লতিফপুর দক্ষিণপাড়ার হারুনুর রশিদ (৪০), বগুড়া সদর উপজেলার জিগাতলার আমিনুর রহমান (৪৫) ও ইসলামপুর হরিগাড়ীর আব্দুল হান্নান (৪৫)। তারা সবাই বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজের অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত।
পুলিশ জানিয়েছে, এ মামলায় কাওছার আলী (২৪) নামে কলেজের এক সাবেক শিক্ষার্থীকেও আসামি করা হয়েছে। তিনি শাজাহানপুরের ওমরদীঘি চন্দ্রহাটা গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে। শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি নিজেকে কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী ও অফিস স্টাফ পরিচয় দিতেন।
আরও পড়ুন: পরীক্ষা দেওয়া হলো না ১৫ শিক্ষার্থীর, কলেজের তিন কর্মচারী আটক
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বাদি রাশেদুল ইসলাম শাজাহানপুরের শ্মশানকান্দী গ্রামের বাসিন্দা। গ্রেফতার হারুন ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে সরকারি শাহ সুলাতান কলেজে এইচএসসিতে ভর্তির কথা বলে তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ও মার্কশিট নিয়েছিলেন। একইভাবে হারুনের সহায়তায় অন্য আসামিরা রাশেদুলর মতো ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হাবিবা আক্তার আর সাব্বির হোসেনের কাছে ২০ হাজার এবং মিলনের কাছ থেকে ১৮ হাজার টাকা নেন। এ ছাড়া তাদের মার্কশিট, রেজিস্ট্রেশন, প্রশংসাপত্র নিয়ে রাখেন হারুন।
এ টাকা নেওয়ার পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের ভর্তির ভুয়া রশিদ ও রোল নম্বর দেওয়া হয়। সেই সুবাদে দুবছর যাবত ওই শিক্ষার্থীরা সরকারি শাহ সুলতান কলেজে শিক্ষার্থী হিসেবে ক্লাস ও পরীক্ষাগুলো দিয়েছেন। পরবর্তীতে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা করে আদায় করেন অভিযুক্তরা। কিন্তু পরীক্ষার প্রবেশপত্র তারা দিতে পারেননি। প্রবেশপত্র চাইলে বিভিন্ন অজুহাত দেখানো হতো ওই শিক্ষার্থীদের।
পরবর্তীতে গত ১৬ আগস্ট এইচএসসি পরীক্ষার দিনে শিক্ষার্থীরা কলেজে গিয়ে হারুন ও অন্যদের কাছে গিয়ে প্রবেশপত্রের জন্য চাপ দেন। তখন কলেজের অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন তাদের দেওয়া রোল নম্বরগুলো ভুয়া। কাগজে তাদের ভর্তির কোনো নথি নেই।
ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রচারের পর কলেজ কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। তারা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। শনিবার রাজশাহী বোর্ডের সচিব হুমায়ন কবিরের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল কলেজে আসে তদন্তের জন্য। দিনব্যাপী তারা ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থীদের লিখিত জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এক পর্যায়ে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে তদন্ত কমিটির সামনেই আমিনুর ও হারুনকে র্যাব আটক করে নিয়ে যায়। পরে হান্নানকে আটক করে শাজাহানপুর থানা পুলিশ। রাতে মামলা হলে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়।
মামলার বাদী ও ভুক্তোভোগী শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম বলেন, দিনে দিনমজুরের কাজ করে এর ফাঁকেই ক্লাস ও পড়াশোনা চালাতাম। এতকিছু বুঝিনি, তাদের ফাঁদে পড়ে জীবন শেষ হয়ে গেলো। এখন যদি আমাদের পরীক্ষা নেওয়া হতো তাহলে জীবনে ঘুড়ে দাঁড়ানোর সাহস পেতাম। পাশাপাশি জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।
শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতার তিন আসামিকে দুপুরে আদালতের মাধ্যমে করাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। তদন্তে আর কারা জড়িত তাও উঠে আসবে।
র্যাব-১২ বগুড়ার কোম্পানি কমান্ডার (পুলিশ সুপার) মীর মনির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সুর্নিদিষ্ট অভিযোগ ও ছায়া তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় দুজনকে গতকালই আটক করা হয়েছিল। আটক অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। হারুন জানিয়েছে এ ঘটনায় রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডর কিছু সদস্য জড়িত। তাদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
এসজে/জিকেএস