লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার মদাতি ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের বিরুদ্ধে মাতৃত্বকালীন ভাতার বিনিময়ে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে প্রায় দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ও চেয়ারম্যানের সই জাল করার অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর থেকে দরিদ্র মায়েদের জন্য মাতৃত্বকাল ভাতা প্রদান কর্মসূচি ও কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল কর্মসূচিকে একীভূত করে মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি চালু করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মদাতি ইউনিয়নে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৩৭৪ জন মা এ সুবিধা পাচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ইউপি সচিব সাহেদুল ইসলাম মাতৃত্বকালীন ভাতা পেতে সুফলভোগী মায়েদের কাছ থেকে নিজ সইয়ে রসিদ মূল্যে ৫০০ টাকা করে আদায় করেছেন। সে হিসেবে ৩৭৪ জনের কাছ থেকে এক লাখ ৮৭ হাজার টাকা আদায় করেছেন তিনি।
সুফলভোগী কয়েজন নারী ও তাদের স্বামীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা কেউই জানেন না কী কারণে ৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।
মাহমুদুল হাসান নামের একজন বলেন, ‘আমার আগের বছর ও চলতি বছরের বসতবাড়ির কর (হোল্ডিং ট্যাক্স) দেওয়া আছে। কিন্তু এসবের নামে আমার স্ত্রীর কাছে ৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। আমরা এ টাকা ফেরত চাই।’
ভাতাভোগী নাসিমা বেগম ও জান্নাতুন বলেন, ‘সচিব আমাদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে নিয়েছেন। আমরা আগে জানতাম না যে মাতৃত্বকালীন ভাতার বিনিময়ে সরকার কোনো টাকা নেয় না। আমরা এ টাকা ফেরত চাই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সুফলভোগীর স্বামী বলেন, ইউপি সচিব সাহেদুল ইসলাম একটি রসিদ ধরিয়ে দিয়ে ৫০০ টাকা নিয়েছেন। এর বিনিময়ে তার স্ত্রীকে ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ভাতা চার হাজার ৮০০ টাকা দেওয়া হয়।
ওই ইউনিয়নের কৈটারী, মৌজা শাখাতি, বাবুরহাটসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে একাধিক সুফলভোগী নারী ও তাদের স্বামীদের সঙ্গে কথা বলে ৫০০ টাকা করে আদায়ের সত্যতা পাওয়া গেছে।
টাকা আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে মদাতি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘মাসিক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তা (৫০০ টাকা) বসতবাড়ির কর (হোল্ডিং ট্যাক্স) বাবদ আদায় করা হয়েছে এবং তা ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে।’
তবে রেজুলেশন বইয়ে মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও সভার সভাপতি হিসেবে চেয়ারম্যানের কোনো অনুমোদন নেই। কোনো টাকা ব্যাংকে জমাও হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বিপ্লব দায়িত্ব নেন। কিন্তু রেজুলেশন বইয়ে দেখা যায়, ২০২০ সালের ১৫ জুন রেজুলেশনের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের ১৩ লাখ ৬৬ হাজার টাকার কয়েকটি প্রকল্প পাস করান সচিব। সেখানে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের সিল ও সই রয়েছে।
আগের চেয়ারম্যানের আমলের তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় বর্তমান চেয়ারম্যানের সই জালিয়াতির বিষয়ে সচিব সাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘এটি অনিচ্ছাকৃত টাইপিং মিস্টেক।’
তবে পরবর্তীতে সংশোধনী কেন দেওয়া হয়নি তা জানতে চাইলে সদুত্তর দিতে পারেননি সাহেদুল।
এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বিপ্লব জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভাতাভোগীদের কাছে টাকা নেওয়া ও আমার সই জাল করার বিষয়টি সত্য। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই এই ইউপি সচিব আমাকেই পাত্তাই দেয়নি।’
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহির ইমাম বলেন, বিষয়টি মৌখিকভাবে জেনেছি। এ বিষয়ে আরও খোঁজখবর নেওয়া হবে।
রবিউল হাসান/এসআর/জিকেএস