নওগাঁর সীমান্তবর্তী ধামইরহাট উপজেলার উমার ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম উত্তর দূর্গাপুর। সেই গ্রামের আব্দুর রহমানের ঘরে জন্ম শোয়াইবুল ইসলাম প্লাবনের। স্থানীয় স্কুল থেকে ২০১২ সালে এসএসসি পাস করেন তিনি। পরে রাজশাহী টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লিট করেন।
২০১২ সালে রাজশাহীতে প্রথম এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে ধারণা পান। এরপর থেকেই ফ্রিল্যান্সার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। যদিও শুরুতে মুখোমুখি হতে হয় নানা বাধা-বিপত্তির। দীর্ঘ ছয় বছরের কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্য আজকে তাকে সফলতার মুখ দেখিয়েছে। এখন তার প্রতি মাসে গড়ে আয় সাত লাখ টাকার মতো। যদিও শুরু করেছিলেন মাত্র ৫০ ডলার দিয়ে।
বর্তমানে ২৭ বছরের এই যুবক কাজ করছেন ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসে ডিজিটাল মার্কেটিং ও ভিডিও সম্পাদনার টপ রেটেড-প্লাস ফ্রিল্যান্সার হিসেবে।
সম্প্রতি জাতীয় ফ্রিল্যান্সার সম্মেলন ২০২৩-এ রাজশাহী বিভাগীয় বেস্ট ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের হাত থেকে পুরস্কারও গ্রহণ করেন।
শোয়াইবুল ইসলাম প্লাবনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, ২০১২ সালে রাজশাহী টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়ার পর প্রথমে এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে অনলাইন থেকে টাকা আয়ের বিষয়টি জানি। এরপর ইউটিউবে দেখতাম কীভাবে টাকা ইনকাম করা যায়। প্রথমে খুব একটা ভালো বুঝতাম না। তখন বড় ভাইদের সহযোগিতা নিতাম। ধীরে ধীরে অনেক কিছুই শিখতে থাকি। কাজ শেখার পর কাজ পাচ্ছিলাম না। যারা পারত তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিতাম।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে আপওর্য়াকে প্রথম কাজ পাই। সে সময় খুব একটা বেশি ইনকাম করতে পারতাম না। মাসে চার-পাঁচ হাজার টাকা পেতাম। কিন্তু পরিবার থেকে ফ্রিল্যান্সিং কী বুঝতো না। এছাড়া বিভিন্ন কারণে ফ্রিল্যান্সিং করা বন্ধ হয়ে যায়।
প্লাবন বলেন, এরপর ময়মনসিংয়ের একটি টেক্সটাইল কোম্পানিতে চাকরি শুরু করি ২০১৮ সালের শেষের দিকে। সেখানেও কম্পিউটারের কাজ করতে হতো। কাজের পাশাপাশি ইউটিউবে মিনহাজ ভাইয়ের বিভিন্ন ভিডিও দেখা শুরু করলাম। তবে চাকরির যা বেতন পেতাম তা দিয়ে নিজে ঠিকমতো চলা কষ্ট হয়ে যেত। তারপর আবারও সেই ফ্রিল্যান্সিংয়ে ফিরে আসি এবং কাজ শুরু করি। ২০২২ সালে ২৫ মার্চে আপওর্য়াকে টপ রেটেড প্লাস হই। ৫০ ডলার দিয়ে শুরু করলেও এখন প্রতিমাসে পাঁচ থেকে সাত হাজার ডলার আয় করতে পারি। তবে বর্তমান অবস্থায় আসতে আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। এখন পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসীও দারুণ খুশি। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভবিষ্যতেও ফ্রিল্যান্সিং জগতেই থাকতে চাই। এছাড়া এলাকার আগ্রহী স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থী ও বেকার যুবকরা কেউ ফ্রিল্যান্সিং শিখে উপার্জন করতে চাইলে তাদের সহযোগিতা করবো।
এই তরুণ ফ্রিল্যান্সার নতুনদের উদ্দেশ্যে বলেন, সময় কারও জন্য বসে থাকে না। ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টা এমন আপনার স্কিল যত ভালো হবে আপনি তত টাকা ইনকাম করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ের পেছনে লেগে থাকতে হবে তাহলে সফলতা আসবেই। বর্তমানে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পাওয়া অনেক কষ্টসাধ্য। সে জায়গা থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং শিখে আপনি চাইলে ঘরে বসে ইনকাম করতে পারবেন।
উমার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক বলেন, জাতীয় ফ্রিল্যান্সার সম্মেলন ২০২৩-এ রাজশাহী বিভাগীয় বেস্ট ফ্রিল্যান্সারের হিসেবে সে যে পুরস্কার পেয়েছে এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয় এবং শোয়াইবুল ইসলামও আমাদের ইউনিয়নের গর্ব। আমাদের বিশ্বাস তার দেখাদেখি অনেক বেকার যুবক ফ্রিল্যান্সিং শিখে টাকা আয় করে স্বাবলম্বী হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আইসিটি প্রতিমন্ত্রীও ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিষয়গুলো খুব গুরুত্ব দেন। যারা ফ্রিল্যান্সার হতে উৎসাহী তাদের কীভাবে সহযোগিতা করা যায় সে বিষয়ে আমরা চেষ্টা করবো।
এমআরআর/জিকেএস