দেশজুড়ে

ক্ষতিগ্রস্তরা ঢেউটিন পেলেও ৩০০০ করে টাকা না পাওয়ার অভিযোগ

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ১৮২টি পরিবারে ২০০ বান্ডিল ঢেউটিনের সঙ্গে গৃহমঞ্জুরির টাকা পরিশোধ করা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি জানাজানির পর সমালোচনা শুরু হয়েছে।

টাঙ্গাইল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িঘর মেরামত/পুনঃনির্মাণে মানবিক সহায়তা হিসেবে মির্জাপুর উপজেলায় বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ২০০ বান্ডিল ঢেউটিন ও গৃহমঞ্জুরির জন্য ছয় লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়। এজন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে এলাকার দুস্থ ও অসহায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা সংগ্রহ করেন। পরে তিনি তালিকা প্রস্তুত করে তার প্যাডে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠান। ওই তালিকা অনুযায়ী উপজেলার ১৮২টি পরিবারের মধ্যে ২০০ বান্ডিল ঢেউটিন বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়।

গত ৫ আগস্ট উপজেলা পরিষদের মিলনায়তনের সামনে এসব ঢেউটিন ও টাকা বিতরণকাজের উদ্বোধন করা হয়। এসময় স্থানীয় সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ ছাড়াও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিলা বিনতে মতিন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আশরাফুজ্জামানসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রণালয়ের পত্রে প্রতি বান্ডিল ঢেউটিন বিতরণের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে তিন হাজার টাকা ক্রস চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে উল্লেখ থাকলেও তা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

সরিষাদাইর গ্রামের সাইফুল ইসলাম, বান্দরমারা গ্রামের কমলা বেগম, কাণ্ঠালিয়ার নিতাই সরকার ও পুষ্টকামুরী গ্রামের তুষ্ট পাল জানান, তারা ঢেউটিন পেয়েছেন। তবে টিনের সঙ্গে টাকা দেবে এ কথা কেউ তাদের বলেননি।

লতিফপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ শিকদার জানান, ১০ জনের নামের তালিকা দিলেও তাকে ৯ বান্ডিল ঢেউটিন দেওয়া হয়েছে। তাও আবার দুই ফাইল কম দেওয়া হয়েছে। টিনের সঙ্গে টাকা বা চেক দেওয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।

উয়ার্শী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন বলেন, তার ইউনিয়নে ১০ জনকে ১০ বান্ডিল ঢেউটিন দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো টাকা বা চেক দেওয়া হয়নি। চেক বা টাকা দেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাদের জানাননি।

বাঁশতৈল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আজহারুল ইসলাম বলেন, তিনি উপস্থিত থেকে ১০ বান্ডিল টিন সংগ্রহ করেছেন। টিনের সঙ্গে টাকা বা চেক দেওয়া হয়নি।

পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলম মিয়া বলেন, ১০ জনকে ১০ বান্ডিল ঢেউটিন দেওয়া হয়েছে। তবে ঢেউটিনের সঙ্গে টাকা বা চেক দেওয়ার বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা তাদের কিছু জানাননি।

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আশরাফুজ্জামানের সঙ্গে মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

তবে একই অফিসের কার্যসহকারী মীর সাকিব হোসেন জানান, ক্রস চেকের মাধ্যমে উয়ার্শী, গোড়াই ও লতিফপুরে কয়েকজনকে টাকা দেওয়া হয়েছে।

অন্যদের টাকা না দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে পিআইও স্যার বলতে পারবেন।’ এ পর্যন্ত কতজনকে ঢেউটিন দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেননি তিনি।

টাঙ্গাইল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা বলেন, মানবিক সহায়তা প্রকল্পে এক বান্ডিল ঢেউটিনের সঙ্গে তিন হাজার করে টাকা বিতরণ করার কথা। মির্জাপুর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তাকে ২০০ বান্ডিল ঢেউটিন ও ছয় লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ঢেউটিন দেওয়া হলেও চেক বিতরণ করা হয়নি—এ বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাকিলা বিনতে মতিন বলেন, ঢেউটিন বিতরণের সময় কয়েকজনকে চেক দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।

এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক (উপ সচিব) মো. নুরুল হক চৌধুরী বলেন, ক্রস চেক ছাড়া ঢেউটিন বিতরণের সুযোগ নেই।

এস এম এরশাদ/এসআর/জেআইএম