দেশজুড়ে

সিলেটে ভোটের মাঠে নাটকীয়তা

সারাদেশের ন্যায় প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে সিলেট সদরের ৮ ইউনিয়নে আগামীকাল মঙ্গলবার প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দলীয় প্রতীকে হওয়া এ নির্বাচনে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। ফলে ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগই।এদিকে, রোববার রাত ১২টায় বন্ধ হয়ে গেছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। সোমবার নির্বাচন কমিশন সিলেট সার্ভার কার্যালয় থেকে ব্যালট বক্স, ব্যালট পেপার, সিল এবং অমোচনীয় কালিসহ নির্বাচনী সকল সরঞ্জাম কড়া নিরাপত্তায় ভোট কেন্দ্রে নিয়ে গেছেন প্রিজাইডিং অফিসাররা।জেলার আট ইউনিয়নের মধ্যে চারটিতেই বিদ্রোহী প্রার্থীরা স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই পাঁচ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীকে বহিষ্কার করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। তাদের এই বহিষ্কারে ভোটের মাঠে দেখা দিয়েছে নানা নাটকীয়তা।ক্ষণে-ক্ষণে বদলাচ্ছে দৃশ্যপট। আর যেসব এলাকায় বিদ্রোহী নেই সেসব এলাকায় ‘চোখরাঙা’তে শুরু করেছেন নেতারা। এ অবস্থায় সিলেট সদরের ৯৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫০টি কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। এসব কেন্দ্রে আগেভাগেই বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। ভোটের ৭২ ঘণ্টা আগে সিলেট সদরের নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে তিন প্লাটুন বিজিবি। শনিবার রাত থেকে নির্বাচনী এলাকায় টহল শুরু করেছেন বিজিবি সদস্যরা। এ নিয়ে ভোটের আগেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে বিরাজ করছে অস্থিরতা। সিলেট সদর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রথম দফা নির্বাচন হচ্ছে। এই ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে চারটিতেই শুরু থেকে বিদ্রোহের মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ খাদিমপাড়া ইউনিয়নে তুমুল বিদ্রোহ চলছে।আওয়ামী লীগের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বেলালের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়ে ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী অ্যাডভোকেট আফসর আহমদ। পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন টুলটিকর। এটিও নগরের লাগোয়া ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে শুরুতেই নৌকার প্রার্থীকে ‘বিএনপি নেতা’ বলে অভিহিত করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এ কারণে এই ইউনিয়নে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামী লীগের আলী আহমদ তৃণমুল নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জমিয়ে তুলেছেন ভোটের মাঠ। ভোটের আগেই এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে বিদ্রোহপ্রবণ মোগলগাঁও এবং জালালাবাদ ইউনিয়নে। এর মধ্যে মোগলগাঁওয়ে শামসুল ইসলাম টুনু ও জালালাবাদে মনফর আলী পূর্বে থেকেই সুসংহত অবস্থানে রয়েছেন।এদিকে, গত বুধবার আওয়ামী লীগ থেকে তাদের ৫ জনকেই বহিষ্কার করা হয়েছে। আর এই বহিষ্কারের খবরে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে প্রচণ্ড ক্ষোভ। আর এই ক্ষোভেই এখন চারটি ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলের কর্মীরা। এই যখন অবস্থা তখন বিএনপির দুর্গ যেসব ইউনিয়ন সেখানেও দেখা দিয়েছে নানা নাটকীয়তা।সিলেট সদর উপজেলার আট ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৯৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫০টিই ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৪৫টি কেন্দ্র সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ প্রশাসন।মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ৫০টি ও সাধারণ ৪৫টি কেন্দ্রে ছয়জন করে পুলিশ সদস্য মোতায়েন রাখা হবে। এছাড়া প্রতি তিনটি কেন্দ্রে একটি করে মোবাইল টিম ও প্রতি ইউনিয়নে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। পাশাপাশি বিজিবি, র্যাব সদস্য ও আনসার সদস্যরা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করে যাবেন।বিজিবির ৫ ব্যাটালিয়ন পরিচালক লে. কর্নেল মো. আবদুর রাজ্জাক তাপাদার জাগো নিউজকে জানান, ইতোমধ্যে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আর নির্বাচনের পরের দিন পর্যন্ত তারা টহলে থাকবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সোমবার রাত ১২টা থেকে আগামীকাল মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। একই সঙ্গে শুক্রবার রাত থেকেই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে মোটরসাইকেল চলাচলে। রোববার সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষে নির্দেশনার আলোকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় নির্বাচনের আগের দিন ২১ মার্চ মধ্যরাত থেকে ২২ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় টেক্সিক্যাব, বেবিটেক্সি, সিএনজি অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পো, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো।প্রসঙ্গত, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে সিলেট জেলার সদর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে কাল ভোট হচ্ছে। এই আট ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ-বিএনপির দলীয় প্রার্থীসহ মোট ৪৯০ জন প্রার্থী রয়েছেন। যার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৪০ জন, সংরক্ষিত মহিলা পদে ৯১ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩৫৯ জন প্রার্থী লড়ছেন।এছাড়া সদর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে মোট ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৭ হাজার ৩৭০ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৬ হাজার ১৫১ জন। আর নারী ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ১ হাজার ২১৯ জন। সবচেয়ে বেশি ৫৬ হাজার ভোটার ৪ নং খাদিমপাড়া ইউনিয়নে। সবচেয়ে কম ভোটার ১১ হাজার ১ নং জালালাবাদ ইউনিয়নে।ছামির মাহমুদ/এমএএস/আরআইপি