দেশজুড়ে

আইএইচটি শিক্ষার্থীদের চলমান বিক্ষোভে বগুড়ায় তীব্র যানজট

বগুড়ায় মামলার ৯ দিন পরও ছাত্রলীগ নেতা সজল ঘোষ গ্রেফতার না হওয়ায় ফের সড়ক অবরোধ করেছেন ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) শিক্ষার্থীরা।

রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের সাতমাথা-বনানী সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এতে সড়কের উভয়পাশে কয়েকশ যানবাহন আটকে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, বিকেল ৩টার দিকে আইএইচটি তৃতীয় বর্ষের শাহরিয়ার সিহাব নামে এক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সড়কেই বিছানায় শুয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

আইএইচটি শিক্ষার্থীরা জানান, প্রায় দেড় সপ্তাহ ধরে বগুড়ার আইএইচটি শিক্ষার্থীরা পাঠ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করছেন। শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবিতে চলমান এ বিক্ষোভ নিরসনে শিক্ষকরা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এমনকি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এছাড়া আইএইচটিতে বহিরাগত হিসেবে প্রবেশ ও শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত সজল কুমার ঘোষকেও পুলিশ এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি।

জিল্লুর রহমান নামে দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রশাসন প্রথম থেকেই প্রহসনের খেলায় মেতেছে। চাপে পড়ে সজলের বিরুদ্ধে মামলা নিলেও এখনো তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। ৯ দিন পরও সজল গ্রেফতার না হয়ে দিব্যি আমাদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

তৃতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী মুশফিকর রহিম বলেন, আমাদের দাবি মানা হলেই আন্দোলন প্রত্যাহার হবে। প্রশাসন এতদিন পরও কেন সজলকে গ্রেফতার করতে পারেনি এ উত্তর কী আছে?

এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিপাকে পড়েছেন রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন চালক ও যাত্রীরা। তীব্র যানজটে দুর্ভোগ বেড়েছে তাদের।

সোহাগ মিয়া নামে এক অটোরিকশা চালক বলেন, তিন ঘণ্টা ধরে এখানে আটকে আছি। দিন আনি দিন খাই। আজকের কামাই শেষ। এগুলো দেখার বলার কেউ নেই।

মঞ্জুর ইসলাম নামে এক সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক বলেন, কি আর বলি? এখানে সেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে আছি। যাত্রীরা রাগে ভাড়া না দিয়েই চলে গেছে। মাঝে আমার পেটে ভাত জোটেনা৷

বগুড়া আইএইচটির অধ্যক্ষ ডা. আমায়াত উল হাছিন বলেন, এ বিষয় নিয়ে ডিসি ও এসপির সঙ্গে কথা হয়েছে। ঢাকায় ডিজির কাছে গিয়েও কথা বলেছি।

শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার বিষয়ে কি উদ্যোগ নিয়েছেন জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, আমি তো কলেজে যেতে পারি না। আবার ঢাকায় ডিজি অফিসে গিয়েছি, ছুটিও ছিল। আমার পরিবর্তে এখন ভাইস প্রিন্সিপাল মীর ওমর ফারুক আছেন, তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ১৭ তারিখ থেকে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা। পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে।

এর আগে ২৯ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির হোস্টেলের মিল ম্যানেজার ও শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলামকে মারধর করেন সজল ঘোষ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করেন। প্রায় দুঘণ্টা সড়ক অবরোধ রাখার পর তারা কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। তখন থেকেই তারা কলেজের ভেতরে বিক্ষোভ চালিয়ে যান। পরদিন তিন দফা উত্থাপন করেন শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো বহিরাগত সন্ত্রাসীকে আশ্রয় ও প্রশ্রয়দানকারী অধ্যক্ষ ডা. আমায়াত-উল-হাসিনের অপসারণ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ইভটিজিংকারী সজল ঘোষের গ্রেফতার ও শাস্তি এবং সকল শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।

২ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগ নেতা সজল কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় মামলা হয়। তবে এর আগে থেকেই সজল পলাতক।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম বলেন, অভিযুক্ত সজলকে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। পুলিশের তিনটি দল মাঠে কাজ করছে। শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

এসজে/জিকেএস