আন্তর্জাতিক

ব্রাসেলস হামলা : আবদেসালামকে গ্রেফতারের প্রতিশোধ?

প্যারিসে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের ১৩ নভেম্বরের হামলায় ১৩০ জনের প্রাণহানির পর মঙ্গলবার সকালে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠলো। দেশটির প্রধান বিমানবন্দর ও মেট্রোরেল স্টেশনে এক ঘণ্টার ব্যবধানে তিনটি বিস্ফোরণে ২৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী ওই হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে প্যারিস হামলায় জড়িত বেলজিয়ামের নাগরিক সালেহ আবদেসালামকে গ্রেফতারের চারদিনের মাথায় ব্রাসেলসের এই বিস্ফোরণের মাধ্যমে কী কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী প্রতিশোধ নিলো? এমন প্রশ্ন এখন বিশ্লেষকদের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে।ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের আফ্রিকা প্রতিনিধি জ্যাসন বার্ক ব্রাসেলসের হামলা নিয়ে একটি বিশ্লেষণী প্রতিবেদন করেছেন। সেখানে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, এটা কি প্রতিশোধমূলক হামলা? নতুন সেল ও অযোগ্য নিরাপত্তা সার্ভিসের প্রমাণ? গত বছর প্যারিস হামলায় জড়িত সন্দেহে গত শুক্রবার আটক সালেহ আবদেসালামের নেটওয়ার্ক এখনো সচল? অথবা মঙ্গলবার সকালের এই হামলা সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো তথ্য ছিল নাকি ওপরের কোনোটিই নয়?ব্রাসেলসের বিস্ফোরণ এ ধরনের মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রশ্ন সামনে এনেছে, যদি তাই হয় তাহলে খুব সম্ভবত এটি একটি সন্ত্রাসী হামলা। এসবের মধ্যে প্রথম যে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে, তা হলো ইউরোপে ইসলামি চরমপন্থীদের হুমকি হয় বাড়বে অথবা কমে যাবে, তবে যখন শুধুমাত্র একজনকে গ্রেফতার করা হয় তখন ওই গোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এমন চিন্তা করাও ঠিক নয়, কেননা তাকে দীর্ঘসময় ধরে খোঁজা হয়েছে। দ্বিতীয়ত এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার সময় যারা বাধা দিয়েছে। এর একটি বাস্তব এবং মনস্তাত্ত্বিক দিক রয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী অ্যাজেন্সিকে দ্রুত তথ্য সংগ্রহ করে অভিযান চালিয়ে নতুন হামলা চালানোর আগে সন্দেহভাজনদের আটক করতে হবে। এ রকম নিরলস চাপের মাধ্যমে সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের দ্রুত পতন ঘটাতে হবে, যা গত দশকে মধ্যপ্রাচ্য ও ইরাকে দেখা গেছে। আর সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য হচ্ছে তারা সন্ত্রাস ও সহিংসতা ঘটাতে পারে তা দেখানো। এই হামলা ততটা প্রতিশোধমূলক নয়, তবে তাদের ধারাবাহিক সক্ষমতার প্রদর্শন। তাদেরকে ধ্বংস করা যাবে কিন্তু তারা বলছে, এটা সম্ভব নয়। তবে নিরাপত্তাবাহিনীর কাছে আবদেসালামের কাছ থেকে তথ্য ফাঁস হওয়ার আগে চরমপন্থী নেটওয়ার্কের কোনো কিছু ঘটানোর চেষ্টার সম্ভাবনা থাকতে পারে। রোববার বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিদিয়ার রেয়ান্ডারস বলেছেন, রাজধানীতে হামলার পরিকল্পনা ছিল তার। একই সঙ্গে ব্রাসেলসে নতুন করে হামলা চালানোর জন্য তিনি প্রস্তুত এবং এটা সম্ভবত সত্যি, কারণ প্রথম তল্লাশিতে আমরা প্রচুর অস্ত্র, ভারী অস্ত্র ও একটি নতুন নেটওয়ার্কের সন্ধান পেয়েছি। এর আগে গত নভেম্বরে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের ছয়টি স্থানে ভয়াবহ হামলায় ১৩০ জন নিহত হয়। ওই হামলার দায় স্বীকার করে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। এরপর প্যারিস হামলার মূল হোতা সালাহ আবদে সালাম প্যারিসে পালিয়ে যায়। পরে কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে আবদেসালামকে আটক করে বেলজিয়াম পুলিশ। ব্রাসেলস পুলিশ বলছে, প্যারিস হামলায় জড়িত আরো দুই সন্দেহভাজন এখনো আত্মগোপনে রয়েছে। (সংক্ষেপিত)এসআইএস/আরআইপি