রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে ছয় কোটি টাকার মরিচখালি-ইন্দাচুল্লি সড়কটির অধিকাংশই ভেঙে এখন খালে পরিণত হয়েছে। এতে আড়াই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রাস্তা পার হতে নৌকায় উঠতে হচ্ছে কয়েকটি এলাকার মানুষকে। চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শত শত শিক্ষার্থীকে। অবিলম্বে সড়কটি সংস্কারের দাবি ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের।
জানা গেছে, কৃষিপ্রধান এ অঞ্চলটির গুরুত্ব বিবেচনায় ২০০৫ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর উপজেলার গুণধর ইউনিয়নের মরিচখালি বাজার থেকে ইন্দাচুল্লি পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার ডুবোসড়ক (সাব মার্সিবল) নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে এই ডুবো সড়ক নির্মাণের ফলে শুকনো মৌসুমে কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত সুবিধার আওতায় আসে।
কিন্তু চরম উদাসীনতা ও অবহেলায় ছয় কোটি টাকার সড়ক পথটি দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থার বাইরে থেকে যায়। ফলে দিনে দিনে জরাজীর্ণ ও ধ্বংস হতে হতে অস্তিত্ব হারাতে চলেছে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি। বর্তমানে এ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত তৈরি হতে হতে অর্ধেকের বেশি স্থান খালে পরিণত হয়েছে। অবশিষ্ট সড়কপথও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে আড়াই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রাস্তা পার হতে এখন শুকনো মৌসুমেও নৌকায় উঠতে হয়। এতে এ অঞ্চলের কয়েকটি গ্রামের কৃষিজীবী মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পাশাপাশি চরম দুর্ভোগ-ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রবিন জানায়, বাড়ি থেকে স্কুলে যেতে সময় লাগার কথা ১০ মিনিট। কিন্তু এখানেই খারাপ রাস্তার জন্য সময় লাগে ৪৫ মিনিট। পাঁচ শতাধিক ছাত্রছাত্রী এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। এই রাস্তার কারণে সবাইকে কষ্ট করে যাতায়াত করতে হয়। আমরা চাই দ্রুত এ রাস্তা মেরামত করা হোক।
গ্রামের যুবক কবির ভূইয়া জানান, রাস্তাটি এখন আমাদের জন্য মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হেঁটে এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা যায় না। অনেক সময় ছোটখাটো গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় উল্টে পড়ে যায়। রোগী নিয়ে যেতেও ভয় লাগে।
দুর্দশাগ্রস্ত মরিচখালি-ইন্দাচুল্লি সড়কটি সরেজমিনে পরিদর্শনকালে গুণধর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থায় চরম উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি এখন এলাকাবাসীর জন্য মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। অনেকে নৌকার পরিবর্তে হেঁটে পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আহত হচ্ছেন।
গুণধর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবু সায়েম রাসেলের অভিযোগ, সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আজ ওই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। এখন এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে আড়াই কিলোমিটার পথ পার হতে শুকনো মৌসুমেও নৌকায় উঠতে হয়। অথচ শুকনো মৌসুমে ধান-ভুট্টাসহ শত শত মণ কৃষিপণ্য নিয়ে এখানকার কয়েকটি গ্রামের পাশাপাশি নিকলী ও মিঠামইন উপজেলার লোকজন প্রতিদিন এ পথে আসা যাওয়া করে।
এ সময় তিনি আরও বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে এ রাস্তাটির দু’পাশে মাটি ভরাট করা ছাড়া আর কিছু করা সম্ভব হয়নি। দুর্বল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও বর্ষার প্রবল ঢেউয়ে স্থানে স্থানে সড়ক ধসে পড়ে বিরাট বিরাট গর্ত তৈরি হয়েছে। উপজেলা পরিষদের প্রায় প্রতিটি মাসিক সভায় সড়কটির এমন পরিস্থিতি তুলে ধরে উপজেলা প্রকৌশলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত সংস্কারের ব্যবস্থা না নেওয়ায় অবশিষ্ট রাস্তাও ধ্বংস হতে চলেছে।
এলজিইডির কিশোরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমিরুল ইসলাম সড়কটির নাজুক অবস্থা স্বীকার করে চলতি মৌসুমে এটি সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।
এফএ/জেআইএম