দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে ফেরদৌসি বেগম (২২) নামে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন স্বামী সাগর আহম্মেদ। এ ঘটনায় সাগর আহম্মেদ হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কয়েকটি আলামত জব্দও করেছে।
নিহত গৃহবধূ ফেরদৌসি বেগম জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার পশ্চিম বালিঘাটা গ্রামের ফিরোজ মিয়ার মেয়ে এবং সাগর আহম্মেদ ঘোড়াঘাট পালশা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর এলাকার নওশা মিয়ার ছেলে।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) সকালে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) আব্দুল্লাহ আল মাসুম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হাকিমপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শরিফুল ইসলাম ও ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান আসাদ।
এর আগে বুধবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে নিজবাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ধানক্ষেত থেকে ওই গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) আব্দুল্লাহ আল মাসুম জানান, চার বছর আগে ফেরদৌসি বেগমের সঙ্গে সাগর আহম্মেদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই সন্তান না হওয়াসহ নানা কারণে ফেরদৌসিকে শারীরিক নির্যাতন করতেন তার স্বামী। সর্বশেষ এক মাস আগে ফেরদৌসি বেগমকে মারপিট করেন সাগর। নির্যাতনের শিকার ফেরদৌসি রাগ করে বাবার বাড়িতে চলে যান। কয়েকদিন পর সাগর শ্বশুরবাড়িতে যান স্ত্রীকে আনতে। তবে বারবার মেয়েকে নির্যাতন করার প্রতিবাদে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এ সময় ফেরদৌসি বেগম দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখেন।
এরপর স্ত্রীকে নিজ বাড়িতে নিয়ে এসে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন সাগর। বুধবার সকালে বাড়ি থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে ধানের জমিতে গরুর জন্য ঘাস কাটতে যান ফেরদৌসি বেগম। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী কিছু সময় পর সাগর নিজেও সেই জমিতে গিয়ে স্ত্রীকে জাপটে ধরে জমির আইলের (পানি প্রবাহের সরু ড্রেন) ওপর শুইয়ে দেন এবং দুই হাত বেঁধে ফেলেন। এরপর নিজের কাছে থাকা দড়ি দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন সাগর। মৃত্যু নিশ্চিত হলে সেখানে ফেলে রেখে চলে যান তিনি।
এরপর দুপুরে ধানের জমিতে অজ্ঞাত নারীর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন খাড়িতে মাছ শিকার করতে যাওয়া কয়েকজন আদিবাসী। পরে তারা গ্রামবাসীকে জানালে স্থানীয় লোকজন থানায় খবর দেন। বিকেল সাড়ে ৩টায় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ নিজেদের হেফাজতে নেয়। সন্ধ্যা ৬টায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্বামী ২নং পালশা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর-মরিচা গ্রামের মৃত নওশা মিয়ার ছেলে সাগর আহম্মেদকে (২৪) আটক করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার ঘটনা শিকার করেন।
ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, পুলিশ সুপার স্যারের সার্বিক নির্দেশনায় আমরা ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন এবং আসামিকে গ্রেফতার করতে পেরেছি। বৃহস্পতিবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘাতক স্বামীকে বিকেলে দিনাজপুরের আদালতে ওঠানো হলে তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
মো.মাহাবুর রহমান/এফএ/জিকেএস