দেশজুড়ে

একরামের আসনে এমপি হতে চান ২ আওয়ামী লীগ নেতা

নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। এবারের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তার আসনে নৌকা পেতে মরিয়া আওয়ামী লীগের দুই নেতা। তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম ও সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন।

এদিকে সম্প্রতি সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর নানা মন্তব্য ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে দলে বিভাজনের অভিযোগ উঠেছে। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে ‘রাজাকার ফ্যামিলির লোক’ বলে কটূক্তি করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ হারান। পরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিভিন্ন ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নিজের ভাইসহ অনুসারীদের ভোটে জেতান।

২০২২ সালের ১০ মার্চ নিজের ফেসবুক লাইভে এসে একরামুল করিম চৌধুরী ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব, আমি আপনাকে ঘৃণা জানাই। আপনি বিচার করতে জানেন না। নিজের ওয়াইফকে (স্ত্রী) যে ভাই (কাদের মির্জা) কটূক্তি করে। এসপি, ইউএনও, ওসিকে বলে কুলাঙ্গার’।

এর আগে একই বছরের ২৭ জানুয়ারী রাতে নিজেকে ‘শেখ হাসিনার প্রতিনিধি’ দাবি করে ইউপি নির্বাচনে নৌকা ঠেকাতে স্বতন্ত্রপ্রার্থীর জনসভায় আনারসে প্রকাশ্য ভোট চান নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী।

ওই বছরের ১৫ এপ্রিল ওবায়দুল কাদেরের নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) আসনে মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আরেক বিতর্কের সৃষ্টি করেন একরামুল করিম চৌধুরী।

তিনি বলেন, আপনারা যদি চান আমি আগামীতে নোয়াখালী ৪ ও ৫ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবো। শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত দেওয়ার মালিক। তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন। এ সময় তার অনুসারী নেতাকর্মীরা সবাই হাত তুলে সমর্থন দেন।

এরআগে ২০২১ সালের ৫ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭২তম জন্মদিন উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দেন একরামুল করিম চৌধুরী।

তিনি বলেন, আমি ও আমার ছেলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর রাজনীতিই করবো না। সেটা জেলা হোক আর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হোক, কোথাও থাকবো না।

পরে গত বছরের ২৯ জানুয়ারি (শনিবার) নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে জেলা আওয়ামী লীগ। এরপর থেকে জেলা আওয়ামী লীগের বাইরে নিজের অনুসারীদের নিয়ে আলাদা কার্যক্রম চালাচ্ছেন এ এমপি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একরামুল করিম চৌধুরীর এ আসনে নৌকা চেয়ে দলের মনোনয়ন কিনেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সূবর্ণচর উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম, সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন ও জয়বাংলা শ্লোগানের প্রবক্তা ড. বশির আহমেদসহ আরও কয়েকজন।

অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম জাগো নিউজকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন দলের জন্য কাজ করছি। একরাম চৌধুরীর নানা কর্মকাণ্ডে দলে বিভক্তিসহ বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। নেত্রী চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে শেষ বয়সে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে চাই।

অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন জাগো নিউজকে বলেন, আমার চাচা প্রয়াত আবদুল মালেক উকিল দলের জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। নেত্রী আমাকে জেলা আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। দল যাকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক করেছে আমি মেনে নিয়েছি। এখন সারাজীবনের ত্যাগের বিনিময়ে নৌকার মনোনয়নপত্র কিনেছি। আমার মাতৃতুল্য নেত্রী শেখ হাসিনা এবং আমার অভিভাবক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চাইলে আমি এ আসনটি উপহার দিয়ে দলের জন্য কাজ করতে চাই।

অন্যদিকে নোয়াখালী-৪ (সদর-সূবর্ণচর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীর মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।

ইকবাল হোসেন মজনু/এসজে/এএসএম