রাজনীতি

পিরোজপুরের তিন আসনে ঈগলের দাপট

পিরোজপুরে জাতীয় সংসদের তিনটি আসন। প্রতিটিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে ক্ষমতাসীনদের মধ্যেই। তিন আসনের দুটিতে নৌকা, একটিতে লাঙ্গল দিয়েছে ক্ষমতাসীন জোট। দুটিতে জোটের শরিক নেতারা প্রার্থী, একটিতে আওয়ামী লীগের নিজস্ব প্রার্থী। তিনটিতেই ঈগল প্রতীক নিয়ে বেশ ভালো অবস্থানে তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

স্থানীয়রা বলছেন, বিএনপি না এলেও পিরোজপুরের তিন আসনে ক্ষমতাসীনদের নিজেদের মধ্যে বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। পরিস্থিতি এমন- ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পাসও করে যেতে পারেন।

জানা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের সিংহভাগ তাদের হয়ে কাজ করছেন। যে কারণে মাঠের শক্তিটা তাদের হাতেই।

পিরোজপুর-১ আসনে সাবেক ও বর্তমান এমপির লড়াই

পিরোজপুর সদর, ইন্দুরকানী ও নাজিরপুর উপজেলা নিয়ে পিরোজপুর-১ আসন। প্রায় সাড়ে তিন লাখ ভোটারের এ এলাকায় জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী চারজন। দুজনের দেখা না মিললেও আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর প্রচারণায় জমে উঠেছে নির্বাচন। দুবারের এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএমএ আউয়াল লড়ছেন ঈগল প্রতীকে। একাদশ সংসদের এমপি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ফের পেয়েছেন নৌকার টিকিট। জাতীয় পার্টির নজরুল ও তৃণমূল বিএনপির রিপনের কোনো আওয়াজ না থাকলেও রীতিমতো মুখোমুখি নৌকার প্রার্থী রেজাউল ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আউয়াল। নির্বাচনী মাঠে নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি থেকে খুনের ঘটনায় জড়িয়েছে ক্ষমতাসীন দল। মুখোমুখি এ অবস্থানকে স্থানীয়রা বলছেন, শেয়ানে শেয়ানে টক্কর।

আরও পড়ুন>> ১১ সংসদ নির্বাচন/সর্বোচ্চ ভোট পড়ে নবমে, ষষ্ঠে সর্বনিম্ন

স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম আউয়ালের অভিযোগ, ‘নৌকার প্রার্থী দলীয় অফিসে আসেন না। তিনি এলাকায় কোনো কাজই করেননি, করেছেন পরিবারের উন্নয়ন। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রটোকল নিয়ে ভোট চাইছেন।’

নৌকার প্রার্থী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তার স্ত্রী দুর্নীতি-সন্ত্রাসের মামলায় আসামি। তার ভাইয়ের বিরুদ্ধেও মামলা আছে। জনগণ তার সঙ্গে নেই। এটি নৌকার ঘাঁটি, জনগণ নৌকার সঙ্গে আছে। আমাদের বিজয় নিশ্চিত।’

প্রার্থীদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, ভোটার ও সমর্থকরা দুই ভাগে বিভক্ত। এক গ্রুপ বলছে, ‘আমরা নৌকার লোক। নৌকার পক্ষেই আছি।’ আরেক গ্রুপের অভিযোগ, ‘মন্ত্রী এলাকায় আসেন না, দলীয় নেতাকর্মীদের খবর নেন না, এজন্য আমরা ঈগলের পক্ষে কাজ করছি।’ এলাকার পরিস্থিতি বলছে, ফলাফল যাই হোক, প্রতিদ্বন্দ্বিতা চরম।

পিরোজপুর-২ আসনে গুরু-শিষ্যের লড়াই

ভান্ডারিয়া, কাউখালী ও নেছারাবাদ নিয়ে পিরোজপুর-২ আসন। সেখানে ৩৮ বছর ধরে এমপি ১৪ দলীয় জোটের শরিক জেপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। আবারও তিনি জোট থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। সব সময় নির্বাচনে বিরোধীদের সঙ্গে লড়াই করলেও এবার লড়াইটা ঘরের লোকের সঙ্গে। তারই এক সময়ের সহকারী একান্ত সচিব মহিউদ্দিন মহারাজ এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।

আরও পড়ুন>> ঢাকা-১০/শক্ত অবস্থানে ফেরদৌস, প্রচারে পাল্লা দিচ্ছেন অন্যরাও

জানা যায়, প্রায় চার লাখ ভোটারের জনপদ ভান্ডারিয়া, কাউখালী ও নেছারাবাদ উপজেলা। শীতের মধ্যেও একাধিক নদীবেষ্টিত এ এলাকায় চলছে ভোটের প্রচারণা। দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন প্রার্থী ও তার কর্মী-সমর্থকরা। এ আসনটি ভোটের লাড়াইয়ে কাগুজে সাত প্রার্থী থাকলেও নৌকা ও ঈগলের বাইরে কারও প্রচারণা চোখে পড়ে না।

স্থানীয়রা বলছেন, তারা ভোট দিতে চান। সেজন্য সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশ থাকতে হবে। এখানকার প্রবীণরা আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পক্ষে থাকলেও যুব ছাত্রদের একটা বড় শক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী মহারাজের সঙ্গে। তবে এখানে লড়াইটা বেশ শান্ত।

নৌকার প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভোটে হারজিত থাকবেই। কেউ যদি হার না মানেন, তার নির্বাচনে আসা উচিত নয়।’

তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজ মনে করেন, মঞ্জু সাহেবের বয়স হয়েছে। দীর্ঘদিন তিনি এমপি ছিলেন। তার এখন নতুনদের ছেড়ে দেওয়া উচিত।

পিরোজপুর-৩ আওয়ামী লীগ জাপাকে ছাড়লেও বিরোধ অভ্যন্তরেই

মঠবাড়িয়া উপজেলা নিয়ে পিরোজপুর-৩ আসন। আসনটি দীর্ঘদিন মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ। এবারও তাই হয়েছে। তবে এবার গত চারবারের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান রুস্তম আলী ফরাজী দলীয় মনোনয়ন পাননি। পেয়েছেন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের উপদেষ্টা মাশরেকুল আজম রবি। যে কারণে রুস্তম আলী ফরাজী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবারের নির্বাচনে ঈগল মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আরও পড়ুন>> প্রচুর ভোটার হাজির হবেন, বুথ বাড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছি

দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় থাকলে বর্তমান এমপির একটা অবস্থান রয়েছে এলাকায়। যার কারণে তিনি জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। ডা. মো. রুস্তম আলী ফরাজী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে অবহেলিত মঠবাড়িয়াকে প্রায় আধুনিক ধ্যান-ধারণায় গড়ে তুলেছি। গত পাঁচ বছরে চার হাজার কোটি টাকারও বেশি উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সাধারণ মানুষ কথনই ভুল করবে না।

তবে মাশরেকুল আজমের প্রত্যাশা, আধুনিক মঠবাড়িয়া গড়তে মানুষ এরশাদের লাঙল প্রতীকে ভোট দিয়ে তাকে বিজয়ী করবেন। এদিকে কেন্দ্রের নির্দেশনা মেনে মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সঙ্গে কাজ করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও। তবে এখানেও স্বতন্ত্রের দাপট বেশি।

এসইউজে/এএসএ/এমএস