লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে ‘বউ- শাশুড়ি বই ঘর’ নামে লাইব্রেরি গড়তে নববধূ শ্বশুরবাড়িতে ২০০টি বই নিয়ে এসেছেন। লাইব্রেরিটি হবে এলাকার অন্যান্য বউ-শাশুড়িসহ শিক্ষার্থীদের জন্য আলোর ঘর। মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় এমন স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন ব্যতিক্রমী এ ঘটনার রূপকার নববধূ মেহেরুন নেছা মুমু।
Advertisement
এর আগে সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে তিনি উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নের চরফলকন গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে বিভিন্ন লেখকের বইগুলো নিয়ে আসেন। সঙ্গে আনা বাহারি পদের পিঠা শাশুড়ি কামরুন নাহারের সহযোগিতায় প্রতিবেশীসহ বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িও পাঠানো হয়েছে।
মুমু চর ফলকন গ্রামের ডা. অবাদুল হক চেয়ারম্যান বাড়ির মহি উদ্দিনের মেয়ে ও ঢাকার ইডেন কলেজের ইংরেজি তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। একই গ্রামের রমজান আলী মৌলভী বাড়ির মাকছুদুর রহমানের ছেলে তরুন আইনজীবী এমরান হোসেন নিখিলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) মুমুর বউভাতের আয়োজন হয়। বউভাত অনুষ্ঠানের একদিন পরেই শ্বশুরবাড়িতে বই নিয়ে আসেন নববধূ মুমু।
মুমুর পরিবার ও স্বজনরা জানায়, মুমু বইপ্রেমী মেয়ে। বই সংগ্রহ ও পড়া তার প্রিয় শখ। শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া সব বই তার পড়া শেষ। তবে অল্পকিছু বই মুমু জন্মদিনসহ বিভিন্ন দিবসে উপহার পেয়েছেন। ৮-১০টি বই স্কুল-কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন। বাকি বইগুলো বিভিন্ন সময় টাকা জমিয়ে মুমু কিনেছিলেন। এরমধ্যে তার প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদের বই রয়েছে শতাধিক।
Advertisement
এদিকে নিখিল তার স্ত্রী মুমুর আনা বইয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোষ্ট দিয়েছেন। এতে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বেশ প্রশাংসামূলক মন্তব্য করছেন।
মুমুর মা ছালেহা বেগম জাগো নিউজকে জানান, তার মেয়ের প্রিয় শখ বই পড়া। শাড়ি-চুড়ি, কসমেটিকসে তেমন আগ্রহ নেই। ছোট বেলা থেকেই টাকা জমিয়ে বই কেনা ছিল প্রধান অভ্যাস। বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার সময় তার সংগ্রহে থাকা সকল বই নিয়ে গেছে।
মুমুর শাশুড়ি কামরুন নাহার বলেন, আমার মেয়ে নেই। দুই ছেলে। ছোট ছেলে বুয়েটে পড়ে। বাড়িতে আমি একা। বড় ছেলের সুবাদে একটা মেয়ে পেয়েছি। আমার এ লক্ষ্মী মেয়ে আসার সময় অনেক বই নিয়ে এসেছে। এতে আমি খুবই খুশি হয়েছি। এখন থেকে আমিও টাকা জমিয়ে বউমাকে বই উপহার দেবো। মুমুর শ্বশুর মাকছুদুর রহমান বলেন, বিষয়টি অবাক করার বিষয়। ভাগ্য করে এমন বউমা পেয়েছি।
নববধূ মেহেরুন নেছা মুমু জাগো নিউজকে বলেন, বই কেনা ও পড়া আমার শখ। বই উপহার পেতেও খুব ভালো লাগে। বইগুলো বাবার বাড়িতে রেখে আসতে মন চাইছিলো না। এজন্য সঙ্গে করে নিয়ে আসলাম। স্বপ্ন দেখছি শ্বশুর বাড়িতে ‘বউ-শাশুড়ির বই ঘর’ নামে একটি লাইব্রেরি গড়বো। এলাকার সকল বউ- শাশুড়িরা এখানে বই পড়বে। এতে বউ-শাশুড়িদের মধ্যে হৃদ্যতাও বাড়বে।
Advertisement
কাজল কায়েস/এনআইবি