দেশজুড়ে

গমের জমিতে ইঁদুরের হানা, দুশ্চিন্তায় কৃষক

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গম ক্ষেতে বেড়েছে ইঁদুরের উৎপাত। গমের শীষ কেটে ও জমিতে মাটির স্তুপ বানিয়ে ফসল নষ্ট করছে স্তন্যপায়ী এ প্রাণিটি। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নষ্ট হওয়ায় গমের জমিতে গরু চরাচ্ছেন অনেকে। অনেকে বিভিন্ন উপায়ে ইদুর মারার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন।

কৃষকরা বলছেন, দিন-রাত জমি নষ্ট করে দেয়ায় ফলন কমার পাশাপাশি উৎপাদন খরচ না ওঠার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

শিবগঞ্জ উপজেলার পদ্মার চরে গম চাষ করেছেন আনসারুল ইসলাম তজু। তিনি বলেন, আমি এবছর প্রায় তিন বিঘা জমিতে গম চাষ করেছি। কিন্তু কিছুদিন থেকেই জমিতে ইঁদুরের উপদ্রব বেড়েছে। প্রতিদিন গমের শীষ কেটে গম নষ্ট করছে এই প্রাণিটি। এতে আমরা পড়েছি বিপাকে। বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও ইঁদুরের উপদ্রব কমানো যাচ্ছেনা।

পাঁকা ইউনিয়নের বাসিন্দা গম চাষি আতাউর রহমান বলেন, আমার এক বিঘা জমিতে গম চাষ করেছিলাম। কিন্তু ইঁদুরে খেয়ে সব শেষ করে দিয়েছে। এজন্য গমের জমিতে এখন গরু চরাচ্ছি। আমাদের এলাকায় প্রায় গমের জমির এখন একই অবস্থা।

দুলর্ভপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আজিম আলি জাগো নিউজকে বলেন, আমি ২৫ কাঠা জমিতে গম চাষ করেছিলাম। কিন্তু ইঁদুরে সব গমের শীষ কেটে দিয়েছে। আশা করেছিলাম ২৫ কাঠা জমিতে ২০-২২ মণ গম উৎপাদন হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভঙ্গ করে দিয়েছে ইঁদুর। এখন জমি দেখে মনে হচ্ছে ৬-৭ মণ গম উৎপাদন হতে পারে।

আসরাফুল আলম নামে আরও এক গম চাষি বলেন, আমার দুই বিঘা জমিতে ৩৫ মণ গম উৎপাদন হয়। তবে এবার ইঁদুরে সব খেয়ে নিয়েছে। ইঁদুর ক্ষেতের মধ্যেই গর্ত করে বাসা বাঁধার পর গম গাছ কেটে গর্তে নিয়ে যাচ্ছে। গম যত পরিপক্ক হচ্ছে ক্ষতির পরিমাণ ততই বাড়ছে। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সেচ, বিষ প্রয়োগ ও বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও কমানো যাচ্ছে না ক্ষতির পরিমাণ। তাই এবার গতবারের তুলনায় গমের ফলন অর্ধেকে নেমে আসবে।

জাহাঙ্গীর আলম তনু নামে আরেক চাষি জাগো নিউজকে বলেন, জমিতে ইঁদুরের উপদ্রবের কারণে বাধ্য হয়েই গরুর খাবার হিসেবে ফলন থাকা গমের জমি বিক্রি করছেন কৃষকরা। বিঘা প্রতি ১২-১৫ হাজার টাকা খরচ করে গরুর খাবার হিসেবে বিক্রি হচ্ছে এক থেকে দেড় হাজার টাকা করে। এমন অবস্থায় গমের জমিতে ইঁদুর নিধনে সরকারি উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, ইঁদুর গমের প্রধান শত্রু। গম চাষে বেড প্লান্টার প্রযুক্তি ব্যবহার করলে কমবে ইঁদুরের উপদ্রব। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আমরা কৃষকদের জন্য অনেক বেড প্লান্টার নিয়ে এসেছি। এটি ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে ইঁদুরের উপদ্রব কমে আসবে।

তিনি আরও বলেন, মূলত যে জমিতে আলো বাতাস বেশি প্রবেশ করে সেখানে ইঁদুরের উপদ্রব কম। আর জমিতে বেড প্লান্টার ব্যবহার করলে জমিতে যথেষ্ট আলো বাতাস বেশি পাওয়া যায়। গমের ফলনও ভালো হয়।

চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ২৬ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে বারি-২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩২, ৩৩, ডব্লিউএমআরআই-১, ২ ও ৩ জাতের গমের চাষাবাদ হয়েছে।

সোহান মাহমুদ/এনআইবি/এমএস