মুহূর্তে ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো একটি স্বপ্ন। যে স্বপ্ন একসময় পুরো ঈশ্বরদীর মানুষের মনকে উদ্বেলিত করেছিল। এখানকার মানুষ স্বপ্ন দেখেছিলেন খুদে বিজ্ঞানী তাহের মাহমুদ তারিফ একদিন তার উদ্ভাবনীর মাধ্যমে ঈশ্বরদীর মানুষের মুখ আরও উজ্জ্বল করবেন। কিন্তু একটি সড়ক দুর্ঘটনায় এ স্বপ্ন নিমিষে দুঃস্বপ্নে রূপ নিলো।
শেখ রাসেল স্বর্ণপদক জয়ী খুদে উদ্ভাবক তাহের মাহমুদ তারিফ (২১) মঙ্গলবার বিকেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষা কর্মকর্তা, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, বিভিন্ন শ্রেণিপেশারসহ শত শত মানুষ খুদে বিজ্ঞানীকে একনজর দেখতে তার বাড়িতে ছুটে যান। প্রতিভাবান এ খুদে বিজ্ঞানীর অকাল মৃত্যু কেউ মেতে নিতে পারছেন না। তারিফের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, শোকাহত শত শত মানুষের ভিড়। তারিফের মরদেহের পাশে তার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সহপাঠীসহ অনেকে কান্নাকাটি করছেন। তার মা তসলিমা খাতুন পুত্রশোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তিন সন্তানের মধ্যে তারিফ ছিলেন সবার ছোট। তারিফের মামা আলমগীর হোসেন বলেন, ছোটবেলা থেকে বিজ্ঞানমনস্ক ছিল তারিফ। দশম শ্রেণিতে পড়াশুনার করার সময় সে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। এরপর তারিফ আরও অনেককিছু আবিষ্কার করেছে। তারিফ অকালে এভাবে চলে যাবে ভাবতেই পারিনি।
তারিফের সহপাঠী নিহাদ হাসান বলেন, তারিফের মতো প্রাণবন্ত একজন মানুষ হঠাৎ এভাবে চলে যাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না।
ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ মিন্টু বলেন, তারিফ আমাদের ঈশ্বরদীর গর্ব ছিলেন। তার উদ্ভাবিত অক্সিজেন কনসেনট্রেটরসহ বিভিন্ন উদ্ভাবন দেশের কল্যাণে কাজে লাগানোর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
ঈশ্বরদী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি স্বপন কুমার কুণ্ড বলেন, তারিফ ঈশ্বরদীর সম্ভাবনাময় প্রতিভা। তিনি অল্প বয়সে যে আবিষ্কার করেছিল যা জাতীয় পর্যায়ে সমাদৃত হয়েছে। এগুলো অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. আরিফুল ইসলাম জানান, তারিফের অকাল মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। তারিফের সব উদ্ভাবনী কাজ আমার দেখার সুযোগ হয়েছিল।
সরকারি সাঁড়ামাড়োয়ারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) শহিদুল ইসলাম শাহীন বলেন, তারিফ দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আবিষ্কার করে আমাদের স্কুলসহ ঈশ্বরদীবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন।
ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আলহাজ্ব এস এম রবিউল ইসলাম জানান, গত বছর কলেজ থেকে তাহের মাহমুদ তারিফ এইচএসসি পাশ করে। সম্ভাবনাময়ী একজন আবিষ্কারক হিসেবে সে ইতোমধ্যে আলোচিত হয়ে উঠেছিল। তার মৃত্যুতে দেশ একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারালো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবীর কুমার দাস জানান, তারিফ অত্যন্ত সম্ভাবনাময়ী খুদে বিজ্ঞানী ছিল। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার খবর পেয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকাতে প্রেরণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মৃত্যুর পর তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। এমন মৃত্যু মেনে নেয়া খুবই কষ্টের।
খুদে উদ্ভাবক হিসেবে তারিফ ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে শেখ রাসেল স্বর্ণপদক লাভ করেন। ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চারটি জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় জেলা পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ খুদে বিজ্ঞানী হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন তিনি।
শেখ মহসীন/আরএইচ/এমএস