গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফটে আটকা পড়ে রোগী মৃত্যুর ঘটনাকে প্রাতিষ্ঠানিক ভুল নয় বলে উল্লেখ করেছেন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। তারা জানান, বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর লিফট বন্ধ হলে ভেতরে ধাক্কাধাক্কির ফলে লিফটে সমস্যা সৃষ্টি হয়। এর ফলে লিফট খুলতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লেগে যায়।
রোববার (১২ মে) ওই ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে এসব কথা উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে গণপূর্ত ই/এম বিভাগ ১০ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল হালিম ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষর করেছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি লিফট রোববার আনুমানিক বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে নবম ও দশম তলার মাঝামাঝি রোগী ও দর্শনার্থীসহ হঠাৎ আটকে যায়। প্রাথামিকভাবে লিফটটি বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য নবম ও দশম তলার মাঝখানে আটকে গেলে লিফটির এআরডি (স্বয়ংক্রিয় রেসকিউ ডিভাইস) কাজ করার জন্য এক মিনিট সময়ের প্রয়োজন হয়। কিন্তু লিফটে আটকেপড়া রোগীসহ লোকজন দরজা ধাক্কাধাক্কি করায় লিফটের ‘ডোর সেফটি’ কাজ করেনি। পরে লিফট অপারেটর লিফট মেশিন রুমে হাত দিয়ে ম্যানুয়ালি লিফটটি একটি ফ্লোরে আনার আগেই রোগীসহ লোকজন দরজা খুলে বের হয়ে আসেন। এভাবে সব কাজ সম্পন্ন হতে এরই মধ্যে ১০-১৫ মিনিট সময় অতিবাহিত হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, যিনি মারা গেছেন তিনি হার্টের রোগী ছিলেন। দ্রুত তাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন
গাজীপুরে হাসপাতালের লিফটে আটকে রোগীর মৃত্যুএতে আরও বলা হয়, লিফটটি নিয়মিত সার্ভিস ও মেইনটেন্যান্স করা হয় এবং বর্তমানে এটি চালু আছে। আটকেপড়া রোগীসহ অন্যান্য লোকজন দরজা ধাক্কাধাক্কি করায় লিফটির সমস্য হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাটির সঠিক কারণ অনুসন্ধানে এরই মধ্যে অত্র কার্যালয়ের স্মারক নং-১০২১ মোতাবেক পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
লিফটে ৪৫ মিনিট রোগী আটকাপড়ার তথ্য সঠিক নয় বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
ঘটনা তদন্তে ৬ সদস্যের কমিটিগাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফট নষ্ট হয়ে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রোববার (১২ মে) হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রোববার সকাল সাড়ে ৬টায় ভুক্তভোগী রোগী মমতাজ বেগমকে (৫০) মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে আইসিইউতে রেফার করা হয়। রোগীকে আইসিইউতে নেওয়ার সময় হঠাৎ লিফট নষ্ট হয়ে যায়। আইসিইউতে নেওয়ার আগেই লিফটে তার মৃত্যু হয়। প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল, ওয়ার্ডে কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারী বা লিফট অপারেটরদের রোগী ব্যবস্থাপনায় অবহেলা ছিল কি না, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ/তদন্ত করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নিম্নবর্ণিত কর্মকর্তা/কর্মচারীর সমন্বয়ে ছয় সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো।
কমিটিতে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. রুবীনা ইয়াসমিনকে সভাপতি করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—হাসপাতালের আরপি (মেডিসিন) ডা. শেখ কামরুল করিম, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নিয়াজুর রহমান, ওয়ার্ড মাস্টার মো. রাতুল ইসলাম, মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশদ যাচাই-বাছাই করে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য অনুরোধ জানানো হলো।
এএএম/ইএ/জিকেএস