দেশজুড়ে

দলবল নিয়ে সড়কের পাশের গাছ কাটলেন বিএনপি নেতা

বগুড়ার গাবতলীতে সড়কের পাশের ১০টি পরিণত ফলদ গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় রোববার (১২ মে) দিনগত মধ্যরাতে ওই বিএনপি নেতা ও তার চাচার বিরুদ্ধে গাবতলী মডেল থানায় মামলা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অফিসের নায়েব আনিছুর রহমান। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।

শনিবার (১১ মে) দুপুরে শতাধিক লোকজন নিয়ে উপজেলার নেপালতলী ইউনিয়নের শাহাবাজপুর কালুডাঙ্গা গ্রামে বুরুজ ভিটাপাড়া সড়কের পাশে ১০টি গাছ কেটে ফেলেন বিএনপি নেতা আহম্মেদ সুমন।

গ্রামবাসীরা বলছেন, দূর থেকে ওই নেতার হেলিপ্যাডসহ বিলাসবহুল বহুতল বাড়ির আলোকসজ্জা দেখা যায় না। এছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল নিয়ে সুমনের বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছিলো গাছগুলো। এজন্য দলবল নিয়ে গাছগুলো কেটে ফেলেছেন তিনি। গাছ কাটতে বাধা দিতে গেলে গ্রামবাসীদের হেনস্তাও করা হয়।

অভিযুক্ত আহম্মেদ সুমন গাবতলী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও নেপালতলী ইউনিয়নের শাহাবাজপুর কালুডাঙ্গা গ্রামের হারুনুর রশিদের ছেলে। তিনি নিজেকে দুর্বা গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে এলাকায় পরিচয় দেন।

গাবতলী পৌর এলাকা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটর দূরে শাহাবাজপুর কালুডাঙ্গা গ্রামে বুরুজ ভিটাপাড়া সড়ক। প্রায় ২০ বছর আগে ওই সড়কে নিজ বাড়ির সামনে স্কুলশিক্ষক আব্দুর রহমান প্রামাণিক ১০টি ফলদ গাছের চারা রোপণ করেছিলেন। বছর পাঁচেক আগে গাছগুলো রেখেই বিএনপি নেতা সুমনের বাড়ি পর্যন্ত পাকা সড়ক নির্মাণ করে দেয় এলজিইডি।

সরেজমিন দেখা যায়, কালুডাঙ্গা গ্রামে বুরুজ ভিটাপাড়ায় আট ফুট পাকা সড়কের ধারে ১০টি ফলদ গাছ কেটে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে আম, বেল, চালতা ও জলপাই গাছ আছে। পাঁচটি গাছে ধরেছিল অসংখ্য আম। মাসখানেক বাদেই পেকে যেতো আমগুলো।

কাটাগাছগুলো থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরেই বিএনপি নেতা সুমনের বিলাসবহুল বহুতল বাড়ি। বিদেশি টাইলসে মোড়ানো বাড়িটিতে আছে হেলিপ্যাডো। সবকিছু ছাপিয়ে বহু দূরের পথ থেকেও দামি ফুলগাছে ঘেরা বাড়িটি চোখে পড়বে যে কারও। বাড়ির সামনে ছোট মাঠে বিভিন্ন গাছ ও ঘাস দিয়ে বাগান করা। দুইপাশে দেওয়াল দিয়ে ঘেরা প্রাচীরে রয়েছে বেশ আলোকসজ্জা।

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক আব্দুর রহমান বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই গাছগুলো কেটে ফেলতে নানাভাবে চাপ দিয়ে আসছিলেন সুমন। শনিবার দুপুরে বহিরাগতদের নিয়ে গাছগুলো কেটে ফেলে রেখে চলে যান।’

কালুডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি সড়কের পাশের গাছ কোনোরকম আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই কীভাবে কেটে নিয়ে গেলো জানি না। গাছগুলোর ফলমূল গ্রামের সবাই পেতাম। এতবছর আগের গাছগুলো সবার মধ্যে একটা মায়া সৃষ্টি করেছিল। তবে বহিরাগতদের নিয়ে সুমন যেভাবে গ্রামের মধ্যে গাছগুলো কেটেছে এইটা মেনে নেওয়ার মতো না।’

জানতে চাইলে বিএনপি নেতা আহম্মেদ সুমন বলেন, গ্রামের ওই সড়কটি আমার বাবা হারুনুর রশিদ মাস্টারের নামে করা। পরিচিতদের মাধ্যমে গ্রামের ওই সড়কটির বরাদ্দও আমি এনেছিলাম। সম্প্রতি আবারও সড়কটি সংস্কার ও প্রশস্ত করতে একটি বরাদ্দ এসেছে। তাই সড়ক সংস্কারের জন্য গ্রামবাসীরা গাছগুলো কেটেছেন। আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম।

তিনি বলেন, বহিরাগতদের নিয়ে আসার অভিযোগ সঠিক নয়। পাশের একটি বিলের বন্যার পানি এসে সড়ক ভেঙে যেতে পারে। তাই গ্রামের মানুষের ভালোর স্বার্থে কাজটি করা হয়েছে।

আহম্মেদ সুমন আরও বলেন, আমার ও চাচার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে শুনেছি। এখন আইনিভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করা হবে। বাড়ির আলোকসজ্জা দেখানোর জন্য গাছ কাটার অভিযোগ হাস্যকর।

গাবতলী মডেল থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, গাছগুলো যেহেতু সড়কের পাশে ছিল তাই এর মালিকানাও সরকারের। এজন্য ইউএনও অফিসের নায়েব বাদী হয়ে মামলা করেছেন।

তিনি আরও বলেন, গাছগুলো সেখানে ইউপি মেম্বারের জিম্মায় রাখা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসআর/এমএস