এক.প্রাণিমাত্রের ভিড়ে মানুষ
মন খারাপের কত কারণ সামনে আসে ক্ষণে ক্ষণেঅনেকেরই কষ্টের নোনা জলের প্লাবন দৃশ্যমান নয়দানের প্রতিদানে অভিঘাত করে কেউ কেউ পশুর উন্মাদনায় জীবন ধসায় ।
মানুষ ভুল করে, করবেই; মানুষ তো ঈশ্বর নয়তার ভুলটুকু বাদ দিয়ে শুদ্ধটুকু উচ্চারণ করার বুকের ভেতরকিংবা পাঁজরের ভাঁজে ভাঁজে উর্বর জমিন আছে ক’জনারএর উত্তর মেলা ভার, বরং শুনতে হয় অকৃতজ্ঞের আরও বাক্যবাণ!
শত দিন শত কিছু দাও এক দিন দিতে না পারলেখারিজের খতিয়ানে উঠে যাবে নামমানুষ নামধারী প্রাণিমাত্রের ভিড়েমানুষ খুঁজে পাওয়া খুব ভার, মানুষ নয় সবাই।
অকৃতজ্ঞতার বীজ যারা পুঁতে রেখেছে হৃৎপিণ্ডে-মগজেতাদের তুষ্ট করা কঠিন, বড়ই কঠিনওরা মুখোশের আড়ালে রেখেছে পরশ্রীকাতরতার মতোকতই না সংক্রামক জীবাণু, মুখোশধারীদের চেনা খুব দায়মানুষ নামধারী এ প্রাণীরা যে আবর্জনা সৃষ্টি করেকোনো পশুরও তা সাধ্য নাই।
বিনয়-কৃতজ্ঞতা-নতমুখ জীবনের অঙ্গশোভাঅন্যকে কষ্ট দিয়ে যারা পুষ্ট হতে চায়, তারা মানুষ নয়মানুষ হওয়া এত সহজ নয়, মোটেও নয়বারবার বলি, অশ্রুহীন কষ্টগুলো খুব বেশি পোড়ায়।
দুই.চোখের গভীরের গভীরে জল
তুমি আমার চোখ দেখেছ, অবিরত দেখছ কিন্তুচোখের গভীরের গভীরে টলমল জল দেখনিতুমি বহুবার জানতে চেয়েছ এত প্লাবনের কথা বলি কেনতোমার এমন প্রশ্নে মনের মাঝে অন্তর্যামী হেসেছেতবু বুকের মধ্যে শীতলপাটি বিছিয়ে দিয়েছিকত মাতাল চাওয়া হয়ে গেছে উড়নচণ্ডীবিন্দুর মাঝেই সিন্ধু খুঁজি, থমকে দাঁড়ানো জীবনও স্বপ্ন দেখেকখনও কি শোনোনি জলকণ্ঠস্বর!
সমুদ্রের স্বরে-সকাতর প্রেমে উদাসী ক্ষণে রাত্রি নামেএসো, স্পর্শ করো; দেখো নিজেকে ভেঙে কতটা ভ্রুক্ষেপবিহীনআমাকে বাজাও , সেতারের তারে আঙুল বোলানোর মতো বাজাওব্যথিত প্রশ্নের হাড়, কঙ্কাল সব নিশ্চিহ্ন করে দাওপাঁজরের ভাঁজে ভাঁজে চাপ দাও দুই হাতের আঙুলেসব কষ্ট ঠেলে দাও দূরে, আলোকবর্ষ দূরেবাঁধভাঙা উৎসের অনিবার্য স্রোতে তুমিই তো একমাত্র পরিত্রাণ।
শখের নিছক শব্দব্যবসায়ীদের উন্মত্ততায় শান্তি অক্ষত রাখা মুশকিলশর্তে ভরা সম্পর্কগুলো আড়ালে রাখা কঠিন হয়ে যায়বন্ধুত্ব, মানবসংসর্গ, আনন্দ-ব্যর্থতা বোধে ওষ্ঠাধারে উষ্ণতা পাইএসো, স্পর্শ করো; তোমার পায়ে নূপুর পরাইতুমি আমার চোখ দেখেছ, অবিরত দেখছ কিন্তুচোখের গভীরের গভীরে টলমল জল দেখনি কখনও।
ঘুমচোখে স্মৃতিহীন, স্বপ্নহীন অতল ঘুমের মধ্যে জল টলমলতোমাকে অনেক দিন পর বলছি, জটিলতাহীন সূর্যরশ্মির দিকে তাকাওসেখানেও দেখবে জলের ভেতর জল টলমল, অবিরত চঞ্চললক্ষ শব্দ মাথায়, লক্ষ শব্দ বুকে, লক্ষ শব্দ শিরা-উপশিরায়শুধু চোখের গভীরের গভীরে জলের কোনো শব্দ নেই।
তিন.তুমি অলৌকিক আসর
যতবার স্পর্শ করো ততবারইঅন্যরকম সতেজ হয়ে উঠিযতবার উপেক্ষা করো ততবারইনুইয়ে পড়ি, একেবারে নুইয়েযতবার বলো এসো, উজ্জ্বল বিভায় এসোততবারই বাকি অর্ধেক জগৎটা খুঁজি।
যতবার হাত বাড়াও বৃহত্তর ভালোবাসায়ততবারই অন্তর্গত ভাবনায় ডুবে যাইপরম আত্মার গভীরে তুমি জেগে রওতোমার বোধের মাঝে সমাহিত করোসময়ের বন্য হাওয়া, নেমে আসুক নতুন ভোরঅশ্বারোহী হয়ে যাব সূর্যভ্রমণে।
যতবার তুমি তোমাকে আমায় দাওততবারই রোরুদ্যমান স্বপ্ন আবার প্রেরণায় জেগে ওঠে শরতের আকাশে হীরের স্তূপ গড়ে অনন্ত অঙ্গীকার স্ফটিকশুভ্র জীবনের সন্ধান দেয়শালবনের ভেতর চকচক করে শান্তির আলোদৈবযানগুলো বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে যায়।
তুমি প্রসন্ন থাকলে নিরর্থক তর্ক, গর্জন, লড়াইআলোকবর্ষ দূরে সরে যায়, অদৃশ্য হয়ে যায়মৌমাছির ঝাঁক মধু জড়ো করে মধুচক্রেসৃষ্টি উল্লাসের ঘণ্টাধ্বনি সুমিষ্ট প্রতিধ্বনি ছড়ায়সম্ভাবনার আলোয় সব বিষণ্নতা কেটে যায় মানবিক বিশ্ব গড়ে ওঠে, অলৌকিক আসর।
এইচআর/এএসএম