প্রবাস

সারাজীবন মনে রাখার মতো মধুর ঘটনা

অমিয় দাশ, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র

Advertisement

এই বালুর ঢিপির আড়ালেই তাদের প্রথম একে অন্যকে জড়িয়ে ধরা, চুমু খাওয়া। দুজনের কাছে জীবনের প্রথম মধুর, প্রগাঢ় অভিজ্ঞতা। সারাজীবন মনে রাখার মতো মধুর ঘটনা। জীবনের প্রথম চুমু সবার মনে থাকে। প্রকৃতির কাছে মন খুলে কিছু চাইলে, প্রকৃতি মনে হয় তা দেওয়ার জন্য ইশপিস করে, দিতে তার কার্পণ্য হয় না। সময় কত তাড়াতাড়ি চলে যায়। এইতো দিনটা ছিল গত বছর বসন্তের শুরুতে। কিন্তু মনে হচ্ছে যেন এক যুগ আগে।

বীথি কি অভিমান করলো, না রেগে গিয়ে ফোন হ্যাংআপ করে ব্রেকআপ করলো? আর হয়তো কখনো যোগাযোগই রাখবে না। মন খারাপ করে, ভাবতে ভাবতে দীপ্ত তার ফোনটা নিয়ে মেসেঞ্জারে বীথিকে মেসেজ টাইপ করা শুরু করলো। একটা কথা বলতে গিয়ে অনেক কথা বেরিয়ে আসছে। কিন্তু মেসেঞ্জারে এত বড় মেসেজ ধরছে না, ওলোট পালোট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সব কথা বীথির জানা উচিৎ। দীপ্ত ভাবলো, একটা ডকুমেন্ট ফাইল বানিয়ে ইমেইলে অ্যাটাচমেন্ট করলে কেমন হয়? সে গুগল ডকে একটা ফাইল তৈরি করবে, যেটা কি না অ্যাটাচমেন্ট হিসেবে ইমেইল করতে পারে।

দীপ্ত তার ল্যাপটপ কম্পিউটার খুলে গুগল ডকে তার চিঠি লেখা, আর চিঠিটি ডাকযোগে পাঠানোর ঘটনাপ্রবাহ লেখা শুরু করলো। ফাইলটির নাম দিলো ‘তোমার অভিমান ভাঙাতে…।’ সে লিখলো:

Advertisement

আগের পর্ব পড়ুন এখানে:দীপ্তর মনের আকাশে অনেক কথা

প্রিয় দোয়েল পাখী,তোমাকে লিখবো বলেছিলাম। তুমিও চেয়েছিলে যেন তোমাকে একটা চিঠি লিখি। কাগজের ওপর, কলম দিয়ে হাতের লেখা চিঠি। সময়ের সাথে সাথে হাতে চিঠি লেখাটাই মিলিয়ে যাচ্ছে আকাশে, মানে ক্লাউডে! সেটা তোমাকে চিঠি লিখতে গিয়ে খুব অনুভব করেছি আমি। তোমাকে একটা খুব সাদামাটা করে লিখেছি বটে, কিন্তু তার যে প্রস্তুতি আর ঘটনাপ্রবাহ, তার যে উত্তেজনা, সেটার অনেকটাই বাকি রয়ে যাবে যদি তোমাকে সেগুলো না বলি।

চিঠি লিখতে গিয়ে যা যা করলাম, তার সাথে ভাবনাটাও তো গুরুত্বপূর্ণ আর বলা আবশ্যিক, তাইনা? এই যেমন ধরো, চিঠি লিখে সুন্দর করে ভাঁজ করতে হবে, সে ভাঁজটাও দুই ভাঁজ, তিন ভাঁজ, নয়তো চারভাঁজ। আবার মনে হলো সুন্দর করে জাপানিজ ধাঁচে অরিগামী করে চিঠিটাকে একটা গোলাপ ফুল কিংবা একটা প্রজাপতির মতো বানাতে হবে।

মনে হয়েছিল কাছে যদি খেজুরের রসের ঘ্রাণ বোতলে ভরা থাকতো, তবে তা একটুখানি চিঠিটাতে মাখিয়ে দিলে তুমি সে ঘ্রাণ নাকের কাছে নিয়ে, একদম চোখ বুজে, শুঁকতে আর হয়তো ভাবতে, আমাদের পরিচয় হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরের কথা। মনে আছে? একটু ভালো করে পরিচয় হওয়ার পর থেকেই, আমরা নদীর ধারের চিকন পথ ধরে একসাথে হাঁটতাম? যেখানে অনেক খেজুর গাছ ছিল।

আরও পড়ুন: বীথির সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় সাইকেলটা পঙ্খীরাজ মনে হয়

সেখানে রসের ভাঁড় ঝোলানো থাকত বেশকিছু খেজুর গাছে। খেজুরের কাঁটাওয়ালা বাইগো বা ডাল খণ্ড খণ্ড করে ভাঁড়ের মুখে খানিকটা বের করে ঢোকানো থাকতো। যেন কাঠবিড়ালী বা পাখী-পক্ষী ভাঁড়ের কানায় বসতে না পারে বা ভাঁড়ের মধ্যে ঢুকে রস নষ্ট না করে। বাতাসে ম ম করতো খেজুরের রসের মৃদু ঘ্রাণ।

Advertisement

আমি আর তুমি কতই না ওই সব পথে হেঁটেছি। নদীর পাড়ে দুটো খেজুর গাছ নদীর ধার ঘেঁষে নুইয়ে ঝুলে ছিল। আমরা সেই খেজুর গাছ দুটোর একটির ওপর পা ঝুলিয়ে বসে কত আগডুম বাগডুম কথাই না বলেছি। কখনো মনেই হয়নি যে একদিন এত স্মৃতিময় মধুর হবে সে হাওয়া। আজ খুব টের পাই যে, মিস করছি সেই পথগুলো, সেই হাওয়া, সর্বোপরি তোমাকে। যদি সে ঘ্রাণ মাখিয়ে দিতে পারতাম, তুমি আলতো করে যখন নাকের ডগায় চিঠিটাকে ছোঁয়াতে। তখন আমার হাতের এই স্পর্শ তোমার গালে, ঠোঁটে এমনিতেই লাগতো। এটাও তো একরকম আদরের, আর ভালোবাসার ছোঁয়া।

কিন্তু দ্যাখো, এখন কি হয়েছে, লিখেছি বটে কিন্তু মনের মতো করে ছোঁয়া পাঠাতে পারিনি। ঠিকানা লিখেছি খামের ওপর সুন্দর করে, যেন তুমি বুঝতে পারো কতই না যত্ন করে তোমাকে লিখেছি। তারপর অরিগামীর ভাঁজের চিঠিটা খামে পুরে, জিহবা দিয়ে ভিজিয়ে, খাম বন্ধ করেছি। পানি দিয়ে নয়, জিহ্বার লালা দিয়ে! যেন আমার শরীরের দু’একটা অনুকোষ তোমার কাছে পৌঁছায়। আমি না পৌঁছাতে।

লেখক: অমিয় দাশ, ফার্মাসিস্ট, ওষুধ প্রস্তুতকারক, বোকা রেটন, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র। Email: amio7@yahoo.com

চলবে...

এমআরএম/জেআইএম