বীথির সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় সাইকেলটা পঙ্খীরাজ মনে হয়
অমিয় দাশ, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র
ইদানীং বীথি আর দীপ্ত দুজনেই হাইস্কুল পাস করে কলেজে চলে যাওয়ার পর থেকেই তাদের দেখা সাক্ষাৎ খুবই কম হচ্ছে। দীপ্ত ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে, আর বীথি পড়ে ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে। আন্তঃস্কুলের এক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে ওদের দুজনের প্রথম পরিচয়। তারপর অল্প অল্প করে জানাশোনা থেকে বন্ধুত্ব। বছর খানেক আগেই বন্ধুত্বের গন্ডি পেরিয়ে আরও মধুর সম্পর্কের দাগ ছুঁয়েছে।
দীপ্ত যখন কলেজের প্রথম বর্ষে, বীথি তখন হাই স্কুলের গন্ডিটি পার হবে হবে। দীপ্ত কলেজ থেকে ছুটি-ছাটাতে বাড়িতে এলেই বিভিন্ন অজুহাতে দেখা হতো বীথির সাথে। দীপ্তদের বাড়ি বিথীদের বাড়ি থেকে বেশি একটা দূরে নয়, আবার তেমন একটা কাছেও নয়। সাইকেল চালিয়ে গেলে চল্লিশ-পয়তাল্লিশ মিনিট সময় লেগে যায়। স্মার্টফোনের বদৌলতে কোথায়, কখন দেখা হবে তা ঠিক করে নিতে তেমন বেগ পেতে হয় না।
দীপ্তর কাছে চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ মিনিট সাইকেল চালিয়ে বীথির কাছে যাওয়া যেন কয়েক মিনিটের মতো। বীথির কাছে যাওয়ার সময় তার সাইকেল যেন পঙ্খীরাজের মতো চলে। কিছু বোঝার আগেই সে হাজির হয়ে যায় আগে থেকে ঠিক করে রাখা জায়গায়।
বীথিদের বাড়ির পাশ দিয়ে একটা নদী বয়ে গেছে। ওখানেই সাধারণত দেখা হয়। শীতকালে ওটাকে নদী বললে ভুল হবে। বলা উচিত স্থির হয়ে বসে থাকা একটা মরা নদী। কোথাও কোথাও তির তির করে সাপের মতো একটু একটু পানির প্রবাহকে নদী বলা চলে না। তবে কুল কুল শব্দটা বড় মায়াময়।
নদীর মাঝখানের দিকে তাকালে মনে হবে উঁচু-নিচু বালুর ঢিপি। যেখানে তির তির করে পানি বয়ে যাচ্ছে সেই ঢালু জায়গাটাতে দাঁড়ালে মনে হয় চারদিকে বালুর ছোট ছোট টিলা। এসব টিলার আবার মালিক আছে। এলাকার গণ্যমান্য চেয়ারম্যান বা মেম্বার শ্রেণির লোকজনের দখলে বালুর টিলাগুলো। টিলা করে রাখা, বিক্রি হয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়। বিক্রি ও ট্রাকের বোঝাই দেওয়ার কাজ চলে রাতের অন্ধকারে। ঠিক আইনসম্মত কাজ না কি না, তাই। দিনে কেউ সাধারণত এ দিকটা মাড়ায় না।
দীপ্ত আর বিথী দেখা করে এই নদীর পাড়ে। তারপর দুজনে হাঁটতে হাঁটতে সাইকেলটা নিয়েই ওই বালুর টিলার মেইজে গিয়ে কোনো ঘাসের ওপর বসে গল্প করে। মাঝে মাঝে দীপ্ত চানাচুর ভাজা কিংবা বাদাম কিনে কাগজের প্যাকেটে করে নিয়ে আসে।
নদীর দুধারে অজস্র খেজুর গাছ আর শিমুল গাছ। খোলা জায়গা পেয়ে শিমুল গাছগুলো তাদের ডালপালা বিস্তার করতে যেন একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। খেজুর গাছগুলোও কম যায় না। বাড়তে বাড়তে অনেকগুলো খেজুর গাছ এখন এত বড় হয়েছে যে গাছিরাও সাহস করে না রস সংগ্রহ করতে। নদীর মাঝখানে থেকে দেখলে মনে হবে সবুজের মাঝে গাঢ় লাল রঙের শিমুল ফুলের ছলচাতুরী।
এখানকার দুটো বড় বড় খেজুর গাছ নদীর ধার ঘেঁষে হেলে নদীর ওপরে গা এলিয়ে আছে। এই খেজুর গাছ দুটো দীপ্ত ও বীথির খুব প্রিয়। মাঝে মাঝেই ওরা হেলে থাকা গাছের একটার ওপর বসে গল্পগুজব করে। লোকজনের তেমন যাতায়াত নেই এদিকটায়। দু’একটা জুটি দেখা যায়। তারাও সবাই একটা দূরত্ব রেখে বসে।
এ বছর যোগাযোগটা সেভাবে আর হচ্ছে না। বীথি একটি কলেজে পড়ে, যা রাজধানীর সেই ভিড় কোলাহল মুখর পরিবেশের একটা বড় কলেজ। কলেজের কাছেই তার বড় খালার বাসায় সে থাকে। বীথি একদিন দীপ্তকে বলেছে যে ওদের কলেজটার নাকি বেশ নামডাক। দুটো সেকশন আছে। ইংলিশ মিডিয়াম, আর বাংলা মিডিয়াম। বীথি অবশ্য বাংলা মিডিয়ামে পড়ে।
বীথির কলেজের ছুটি-ছাটার ব্যাপারগুলো বেশ গোলমেলে। শুধুমাত্র তিনটে ধর্মীয়, তিনটে রাষ্ট্রীয় ছুটি ছাড়া আর সব ছুটিগুলো দীপ্তর কলেজের ছুটির সাথে একদম মেলেনা। ফলে ওদের দেখা-সাক্ষাৎ
লেখক: অমিয় দাশ, ফার্মাসিস্ট, ওষুধ প্রস্তুতকারক, বোকা রেটন, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র। Email: [email protected]
চলবে...
এমআরএম/জিকেএস