বিনোদন

শ্রদ্ধাঞ্জলিতে সত্যজিৎ রায়

কারিগর। এক কথায় এটুকুই হতে পারে কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সত্যজিত রায়ের পরিচয়। তিনি যেখানেই হাত দিয়েছেন সেখানেই সোনা ফলেছে।শিল্প-সংস্কৃতিমনা পরিবারে জন্ম তার। দাদা বিখ্যাত কবি সুকুমার রায়, বাবা উপেন্দ্রকিশোর কুমার রায়ও ছিলেন সাহিত্যিক। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সত্যজিত রায় হয়ে উঠেছিলেন সারা বিশ্বের দরবারে সম্মানিত মুখ। আজ অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ২৪তম প্রয়াণ দিবস। ১৯৯২ সালের এই দিনে তিনি পরলোকগমন করেন। বাংলা চলচ্চিত্রে তিনি চিরদিন রাজতিলক হয়ে থাকবেন। তার হাত ধরেই তো প্রথমবারের মতো বাংলা ছবির অস্কার যাত্রা। তার নির্মিত ‘পথের পাঁচালী’ উপমহাদেশের চলচ্চিত্রে নতুন যুগের সূচনা করে। তিনি কলকাতা ফিল্ম কোম্পানির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৯২১ সালের ২ মে ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জের মশুয়া গ্রামে জন্ম নেন সত্যজিত রায়। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ ও শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। সত্যজিতের কর্মজীবন একজন বাণিজ্যিক চিত্রকর হিসেবে শুরু হলেও প্রথমে কলকাতায় ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা জঁ রনোয়ারের সাথে সাক্ষাৎ ও পরে লন্ডন শহরে সফররত অবস্থায় ইতালীয় চলচ্চিত্র ‘বাইসাইকেল চোর’ দেখার পর তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ হন।ডকুমেন্টারি ফিল্ম, শর্ট ফিল্ম, ফিচার ফিল্মসহ সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছেন মোট ৩৭ টি ছবি। ৩৭ বছরের কর্মজীবনে তিনি নির্মাণ করেন অপুর সংসার, পরশপাথর, জলসাঘর, কাঞ্চনজঙ্ঘা, চারুলতা, দেবী, মহানগর, অভিযান, কাপুরুষ, মহাপুরুষ, গুপী গাইন বাঘা বাইন, প্রতিদ্বন্দ্বী, সীমাবদ্ধ, জনারণ্য, হীরক রাজার দেশ, গণশত্রু, আগন্তুক, শাখা প্রশাখা, সোনার কেল্লা, জয়বাবা ফেলুনাথ প্রভৃতি চলচ্চিত্র।চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করলেও সাহিত্য, চিত্রকলা, নাটক আর সংগীত বিষয়েও প্রতিভার দ্যুতি ছড়িয়েছেন সত্যজিৎ রায়। তাকে চলচ্চিত্র প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, সাহিত্যিক, সংগীত পরিচালক, গীতিকার, চিত্রশিল্পী ও সাহিত্যিক হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। বাংলা সাহিত্যেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তিনি। সৃষ্টি করেছেন ফেলুদা আর প্রফেসর শঙ্কুর মতো অবিস্মরণীয় চরিত্র।১৯৮৩ সালে ঘরে বাইরে ছবির কাজ করার সময় সত্যজিত রায় হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর থেকে তার কাজের গতি অনেকটাই কমে যায়। এরপর ১৯৯২ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সত্যজিৎ রায় হাসপাতালে ভর্তি হন। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালের বেডে কাটে তার শেষ দিনগুলি। হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে তিনি পেন্সিলে আঁকেন একটি গাছের স্কেচ। যার মধ্যে ছিল উপমহাদেশের ১১জন কিংবদন্তি মানুষের মুখাবয়ব।১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন এই মহান চলচ্চিত্রকার। মৃত্যুর মাত্র একসপ্তাহ আগে সত্যজিৎ রায় পান বিশ্ব চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সন্মানজনক অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড (অস্কার)। জীবদ্দশায় তিনি অর্জন করেন ৩২টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার।সত্যজিৎ রায়ের প্রাপ্ত পুরস্কারের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে পদ্মশ্রী (১৯৬৫), পদ্মভূষণ (১৯৬৭), ম্যাগসেসে পুরস্কার (১৯৭১), Star of Yugoslavia (১৯৭৩), Doctor of Letters(১৯৭৪), D. Litt.(১৯৭৬), পদ্মবিভূষন(১৯৭৮), D. Litt., Special Award, Berlin Film Festival, Deshikottam, Visva-Bharati University, India (১৯৭৯), Special Award, Moscow Film Festival (১৯৮০), বিদ্যাসাগর পুরস্কার (১৯৮২), Fellowship, The British Film Institute (১৯৮২), দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার (১৯৮৫), অস্কার (১৯৯২), ভারতরত্ন (১৯৯২)।কিংবদন্তি এই চলচ্চিত্র নির্মাতার জন্মদিনে জাগো নিউজ পরিবারের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও বিনম্র শ্রদ্ধা।এলএ/আরআইপি