গাইবান্ধায় ১৪৪ ধারা অমান্য করে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে এক কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ২২ বছর ধরে ভোগ করে আসা জমির মাঝ বরাবর জোর করে প্রাচীর ও অবকাঠামো নির্মাণের চেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ জুন ১৪৪ ধারা জারি করেছিলেন আদালত। এই ধারা বহাল থাকা অবস্থায় জমিটিতে অবকাঠামো নির্মাণ করে যাচ্ছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষক পর্যায়ে ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন ও বিতরণ প্রকল্পের উপ-পরিচালক রেজাউল করিম।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে গাইবান্ধা সদরের বাদিয়াখালি ইউনিয়নের রিফাইতপুর গ্রামে দেখা যায়, বিরোধপূর্ণ জমিটিতে ২২ বছরের পুরোনো সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন দেওয়াল। তা মজবুত করতে ছিটানো হচ্ছে পানি। পাশেই রয়েছে আরও নির্মাণসামগ্রী। শিগগির আরও অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। জমিটির আসল মালিক দাবিদার ওহিদুল ইসলাম।
প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে জমি নিয়ে বিরোধ সেটি ২০০২ সালে ওহিদুল ইসলাম কেনেন রেজাউল করিমের মামা মোফাজ্জেল হোসেনের কাছ থেকে। তখন থেকে চারপাশে সীমানা প্রাচীর দিয়ে ওহিদুল ইসলাম তা ভোগদখল করে আসছেন। সেখানে প্রায় শতাধিক মেহগনি, সেগুন, কাঁঠাল গাছের বাগান করেছেন তিনি। ২২ বছর পর হঠাৎ গত মার্চ মাসে বাগানের ভেতর প্রাচীর নির্মাণ করা শুরু করেন রেজাউল করিম ওরফে রেজা।
প্রতিবেশীরা জানান, এলাকায় বেশ প্রভাবশালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্পের উপ-পরিচালক রেজাউল করিম।
কথা হয় রেজাউল করিমের মামি নার্গিস বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রেজাউল আওয়ামী লীগের লোকজন এনে এর আগেও বেশ কয়েকবার জায়গাটি দখল করার চেষ্টা করেছে। শুধু তাই না, আমারও পাঁচ শতাংশ জায়গাও দখল করে রেখেছে। এ নিয়ে আমিও থানায় অভিযোগ করেছি।’
তালুক রিফাইতপুরের বাসিন্দা মিজানুর রহমান ফিটু জানান, ওই জমির মালিক ওহিদুল ইসলাম ঢাকার বাসিন্দা। তিন দশকের বেশি সময় ধরে বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত। কাজের ব্যস্ততা থাকায় গাইবান্ধায় তার যাতায়াত নেই তেমন। এতদিন তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন এলাকায় থাকলেও গত জানুয়ারিতে শ্বশুরের মৃত্যুর পর সেখানে আর কেউ থাকেন না। এই সুযোগে রেজাউল করিম প্রতিবেশীর সম্পদ হাতিয়ে নিচ্ছেন।
ওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘২২ বছর আগে জমিটা কিনেছিলাম রেজারই আপন মামার কাছ থেকে। এখন এর মূল্য কয়েকগুণ বেড়েছে। রেজাউল অর্ধেক দামে জমিটা কিনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি বিক্রি করতে রাজি হইনি। এজন্য তিনি আমাকে হুমকিও দিয়েছেন। প্রায়ই নিজেকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলা দাবি করে অর্থ এবং শক্তির বড়াই করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত জুনে উনার আপন ভাইয়ের শালা (শ্যালক) জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইউসুফ জোয়ার্দার ছাত্রলীগের ক্যাডারদের নিয়ে এসে আমার সীমানা প্রাচীর ভেঙে নতুন করে দেওয়াল তোলার চেষ্টা করেন। আমি খেটে খাওয়া মানুষ। এইসব জুলুমের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ‘ওহিদুল ইসলাম যে জমি নিজের বলে দাবি করছেন সেটি আমার। আমার মামা মোফাজ্জেল হোসেনের কাছ থেকে জমি কিনে উনি ঠকছেন। আমি সরকারি চাকরি করি। এই সুবাদে আমাকে হেনস্তা করার জন্য উনি আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অভিযোগ করে যাচ্ছেন।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, গত ২০ এপ্রিল গাইবান্ধা সদর থানায় নালিশি নিষ্পত্তি করতে সব পক্ষকে নিয়ে বসেছিল থানা কর্তৃপক্ষ। সেখানে রেজাউল করিম সরাসরি প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন।
জানতে চাইলে গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা জাগো নিউজকে বলেন, আদালত থেকে যে নিদের্শনা পাওয়া যাবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ এইচ শামীম/এসআর/জিকেএস