দেশজুড়ে

রোববার ২ মিনিট স্তব্ধ থাকলো নেত্রকোনা শহর

সকাল ১০টা ৪০ মিনিট থেকে ১০টা ৪২ মিনিট নেত্রকোনা শহরের রাস্তায় চলেনি কোনো যানবাহন, হাঁটেননি কোনো পথচারী। ঘড়ির কাঁটায় ১০টা ৪০ বাজার সঙ্গে সঙ্গেই সবাই নিজেদের কাজ ফেলে রাস্তায় নেমে আসেন। সড়কের যানবাহনগুলো চলাচল থামিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সবাই শ্রদ্ধা জানান ১৯ বছর আগে নেত্রকোনা উদীচীতে বোমা হামলায় নিহত ব্যক্তিদের প্রতি।

Advertisement

২০০৫ সালের এই দিনে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী নেত্রকোনা সংসদ কার্যালয়ের সামনে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন আট জন। নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে প্রতিবছর ৮ ডিসেম্বরকে শহরের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন নেত্রকোনা ট্র্যাজেডি দিবস পালন করে আসছে।

রোববার সকাল ১০টায় শহরের অজহর রোড এলাকায় উদীচী কার্যালয়ের সামনে কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়। পরে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘উদীচী ট্র্যাজেডি স্মৃতিস্তম্ভে’ পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। সেখানে ‘তীর হারা এ ঢেউয়ের সাগর, কারা মোর ঘর ভেঙেছে, এ লড়াই বাঁচার লড়াই’ ইত্যাদি গণসংগীত পরিবেশন করা হয়।

ফাঁকে ফাঁকে ট্র্যাজেডি দিবস উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক ও উদীচী জেলা কমিটির সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান খানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আহমেদ তানভীর মোকাম্মেলের পরিচালনায় বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী, জেলা উদীচীর সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক, প্রত্যাশা সাহিত্য গোষ্ঠীর সভাপতি আলী আজগর খান, চন্দ্রনাথ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ার হাসান, জেলা সিপিবির সভাপতি নলিনী কান্ত সরকার, উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অসিত ঘোষ, সহসম্পাদক মো. আলমগীর, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মেলন পরিষদ নেত্রকোনা শাখার সাধারণ সম্পাদক দেবজ্যোতি রায়, নারী প্রগতির কেন্দ্র ব্যবস্থাপক মৃণাল চক্রবর্তী প্রমুখ।

Advertisement

স্তব্ধ নেত্রকোনা পালন শেষে সন্ত্রাস, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী মানববন্ধন হয়। পরে শহীদদের কবর জিয়ারত, শ্মশানের স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শহীদদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হয়।

উদীচী সূত্রে জানা গেছে, ৯ ডিসেম্বর নেত্রকোনা হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে আজকের এই দিনে সকালে উদীচী কার্যালয়ের সামনে চলছিল উদীচীর মহড়ার প্রস্তুতি। এ সময় আত্মঘাতী এক বোমা হামলায় প্রাণ হারান জেলা উদীচীর সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক খাজা হায়দার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সুদীপ্তা পাল শেলি, মোটরসাইকেল মেকানিক যাদব দাস, পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী রানী আক্তার, মাছ বিক্রেতা আফতাব উদ্দিন, শ্রমিক রইছ মিয়া, ভিক্ষুক জয়নাল ও আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী আল বাকি মো. কাফিসহ আটজন। আহত হন অর্ধশতাধিক।

আজ সমাবেশ চলাকালে সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘দ্রুত বিচার ও বিস্ফোরক মামলার রায় কার্যকর হওয়ায় আমরা খুশি। তবে জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন করতে হলে আরও শিকড়ে যেতে হবে। স্থানীয় মদদদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে। তা না হলে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস নির্মূল সম্ভব হবে না।’

এইচ এম কামাল/এফএ/জিকেএস

Advertisement