দেশজুড়ে

লবণের লক্ষ্যমাত্রায় বৃষ্টির বাগড়া

লবণের লক্ষ্যমাত্রায় বৃষ্টির বাগড়া

গত দেড় সপ্তাহ ধরে কক্সবাজারে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। লাগাতার বর্ষণ ও চিংড়ি চাষের জমিতে জোয়ারের পানি ঢুকিয়ে ফেলায় বন্ধ হয়ে গেছে চলতি বছরের লবণ উৎপাদন। এতে করে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের আগেই হতাশা নিয়ে শেষ হলো এবারের লবণ উৎপাদন মৌসুম। এরপরও মাঠ পর্যায়ে প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন লবণ মজুত থাকায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কোনো লবণ আমদানির প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছে বিসিক।

Advertisement

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্যমতে, গত ১৭ মে থেকে চলতি মৌসুমের লবণ উৎপাদন কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এ মৌসুমে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাঠে নামা চাষিরা উৎপাদন করতে পেরেছেন ২২ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ মেট্রিক টন। এ উৎপাদনও গত পাঁচ যুগের মাঝে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড। গত মৌসুমে (২০২৩-২৪ অর্থবছর) ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন ছিল গত ৬৪ বছরে সর্বোচ্চ লবণ উৎপাদন।

ঈদগাঁওর লবণচাষি ও লবণ ব্যবসায়ী রিদুয়ানুল হক বলেন, খরচের চেয়ে বিক্রয় মূল্য কম পাওয়ায় হতাশায় কেটেছে এ মৌসুম। গত মৌসুমে মণ প্রতি ৪০০-৫০০ টাকা পাওয়ায় সদ্য সমাপ্ত মৌসুমের জন্য লবণের মাঠ ইজারা মূল্য ছিল আকাশচুম্বী। একজন শ্রমিক দিয়ে এক একর ২০ শতক জমি চাষ করা যায়। এ পরিমাণ জমি নিয়ে চাষ করতে একজন চাষির জমির ইজারা সোয়া এক লাখ, পলিথিন ২৫ হাজার, শ্রমিক এক লাখ ২০ হাজার এবং অন্যান্য মিলিয়ে খরচ পড়েছে প্রায় তিন লাখ টাকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উৎপাদিত লবণ বিক্রি করে চাষি পেয়েছেন দুই লাখ দশ হাজার থেকে বিশ হাজার টাকা। এতে মৌসুম শেষে একজন চাষির লোকসান হয়েছে ৯০ থেকে ৮০ হাজার। তাই আগামী মৌসুমে চাষে নামবে কি না এখন থেকেই হিসাব মেলাচ্ছে অনেকে।

আরও পড়ুন-

Advertisement

উৎপাদন খরচও উঠছে না লবণ চাষিদের লবণ বেচে লোকসান উপকূলে বাড়ছে লবণাক্ততা কমছে কৃষিজমি

চৌফলদন্ডীর চাষি হারুন রশিদ বলেন, মৌসুমজুড়ে এপ্রিলের শেষের দিকে প্রথম বৃষ্টি হয়। এক বৃষ্টিতে প্রায় ৭ দিন বন্ধ থাকে উৎপাদন। আবার মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি চলছে। ফলে লবণ উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে চাষিরা। দু’একদিন পর বৃষ্টিপাত থেমে গেলে আরও কিছু লবণ উৎপাদন হতো।

বিসিক লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের মাঠ পরিদর্শক মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী জানান, চলতি অর্থ-বছরের ৪ নভেম্বর থেকে কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, টেকনাফ, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী, পটিয়া ও আনোয়ার উপজেলার ৬৯ হাজার ১৯৮ একর জমিতে লবণ উৎপাদন শুরু হয়। এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। গত ১৭ মে পর্যন্ত মৌসুমের ৬ মাসে লবণ উৎপাদিত হয়েছে ২২ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ মেট্রিক টন। এপ্রিল পর্যন্ত ভালো আবহাওয়া পাওয়া গেলেও লবণ উৎপাদন কম হয়েছে। চাষের জমি এবং চাষি বাড়ার পরও কাঙ্ক্ষিত লবণ উৎপাদন হয়নি। মৌসুম জুড়ে লবণের দাম নিম্নমুখী থাকায় অনেক চাষি মাঠে নামতে দেরি করেছেন। আবার অনেকে প্রথম বৃষ্টির পর আর মাঠে নামেননি। চিংড়ি চাষযোগ্য জমিতে জোয়ারের পানি ঢুকিয়ে দেওয়ায় ১৮ মে থেকে লবণ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

তিনি আরও জানান, মৌসুম বন্ধ হলেও উপকূলে চাষিদের কাছে মৌসুমে উৎপাদিত প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টনের বেশি লবণ মজুত আছে। প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়। কিন্তু উৎপাদন খরচ হয়েছে ৩০০-৩৫০ টাকার মতো। মাঠে কেজি প্রতি দাম ৬-৭ টাকা পড়লেও বাজারে প্যাকেটজাত লবণের খুচরা মূল্য ৩০-৪৫ টাকা। জেলায় প্রায় ৪১ হাজার ৩৫৫ জন প্রান্তিক চাষি, এক লাখ শ্রমিকসহ অন্তত কয়েক লাখ মানুষ লবণ উৎপাদন, পরিবহন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

বিসিক কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, চলতি মৌসুমে লবণ ২২ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ মেট্রিক টন উৎপাদন হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঘাটতি রয়েছে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৩৪৯ মেট্রিক টন। কিন্তু ঘাটতি থাকলেও লবণ আমদানির প্রয়োজন নেই। মাঠ পর্যায়ে চাষিদের হাতে প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন লবণ অবিক্রীত অবস্থায় রয়েছে, যা দিয়ে আগামী ৭-৮ মাস দেশের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। তারপর নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বর থেকে ফের লবণ উৎপাদন শুরু হবে।

Advertisement

তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে লবণের দাম নিয়ে চাষিরা অনেক হতাশ ছিলেন। বর্ষায় লবণের দাম কিছুটা বাড়তে পারে। আগামী মৌসুমে ব্যয়ের চেয়ে যেন দাম বেশি পান সেটিতে করণীয় নির্ধারণে কাজ চলছে।

এফএ/জেআইএম