দেশজুড়ে

নিশ্চিহ্ন সিডিএসপি বাঁধ, হুমকিতে মৎস্য প্রকল্প

নিশ্চিহ্ন সিডিএসপি বাঁধ, হুমকিতে মৎস্য প্রকল্প

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে টানা ভারী বর্ষণ ও ফেনী নদীর জোয়ারের স্রোতে তলিয়ে গেছে সিডিএসপি বাঁধ। প্লাবিত হয়েছে প্রায় ২০০ একর মৎস্য খামার। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও অন্তত ৫০০ একর জমির মৎস্য প্রকল্প।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপকূল অঞ্চলের চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্টের (সিডিএসপি) আওতায় নির্মিত ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাঁধের একাধিক অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছিল আগেই। টানা দুদিনের টানা বর্ষণের কারণে সেই বাঁধের প্রায় সবটুকুই এখন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

উপজেলার মুহুরী প্রকল্পের নিম্নাঞ্চলের ইছাখালী এলাকার বাসিন্দা ও মৎস্য খামার মালিকেরা জানান, উপকূলীয় বাঁধ রক্ষায় অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে মিরসরাইয়ে গড়ে ওঠা ৩৪ হাজার একরের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বিইজেড) এলাকাও হুমকির মুখে পড়বে। বাঁধ ভেঙে গেলে লবণাক্ত পানি ঢুকে উপজেলার ৫ নম্বর ওচমানপুর ও ৬ নম্বর ইছাখালী ইউনিয়নের ১০০-১২টি গ্রামে দেখা দিতে পারে জলাবদ্ধতা ও বন্যা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মুহুরী সেচ প্রকল্পের ভাটিতে প্রায় ১১০০ বর্গমিটার এলাকায় পলির স্তর জমেছে। এতে নদীর প্রবাহ পথ বদলে সোনাগাজীর থাক খোয়াজের লামছিতে ছোট ছোট চর জেগেছে। অন্যদিকে মিরসরাই অংশের উত্তর ইছাখালী অংশে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। পলি জমার কারণে মুহুরী সেচ প্রকল্পের বেশ কিছু স্লুুইস গেটও কাজে আসছে না। সিডিএসপি বাঁধের উত্তর অংশের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা ফেনী নদীর অববাহিকায় পড়েছে। বাকি অংশ বঙ্গোপসাগর অববাহিকায়।

Advertisement

একসময় নদী ও সাগর থেকে বাঁধের দূরত্ব ছিল প্রায় তিন হাজার মিটার। বর্তমানে এই দূরত্ব কোথাও ১০ মিটার, কোথাও ৫ মিটার। তবে বিভিন্ন সময় ভাঙনরোধে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে সিসি ব্লক দেওয়া হলেও সেগুলো নদীগর্ভে চলে গেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সিডিএসপি বাঁধের পশ্চিম পাশে সুরক্ষা ব্লক না বসালে চলতি বর্ষায় এখানকার বহু মৎস্য প্রকল্প নদী ভাঙনে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ওচমানপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আতাউল্ল্যাহ রনি জানান, ২০১৯ সালের শুকনা মৌসুমে মুহুরী সেচ প্রকল্পের মুখে বালু ও মাটি জমা শুরু হয়। বর্ষায় শুরু হয় ভাঙন। এর আগে প্রায় তিন দশকেও এমন ভাঙন দেখা যায়নি। বর্তমানে ভাঙনের মাত্রা বহুগুণে বেড়েছে। এতে করে এখানকার মৎস্য প্রকল্পগুলো বিলীন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

স্থানীয় কৃষক রাহাত হাসান বলেন, ‌‘আমরা ছোটবেলা থেকে এই নদীর আচরণ দেখে আসছি। মুহুরী প্রকল্পের ভাটিতে যে পলি জমেছে, তা খনন করলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে। আমার বয়সেও এখানে এমন ভাঙন দেখিনি। মূলত পলি জমার কারণে ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরের ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য ১৯৯০ সালে নির্মাণ করা হয় সিডিএসপি বাঁধ। এরপর এ বাঁধ ঘিরে গড়ে ওঠে শত শত মৎস্য প্রকল্প, যা চট্টগ্রামের মাছের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ পূরণ করে আসছে। মৎস্য খামার মালিকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে দাবি জানান তারা।

Advertisement

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোমাইয়া আক্তার বলেন, বাঁধ রক্ষার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এস এম তারেক বলেন, বাঁধ রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অংশে জিও ব্যাগ ফেলাসহ মেরামত কাজ দ্রুত শুরু করা হবে।

এম মাঈন উদ্দিন/এসআর/জেআইএম