ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) ডায়রিয়া ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। আক্রান্তের সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়েছে। রোববার (১ জুন) রাত পর্যন্ত ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৯৫ জন ও ইপিজেড মেডিকেল সেন্টারে ৬৫ জন নতুন আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। ইপিজেডে পানের জন্য সাপ্লাই করা পানি থেকে বিষক্রিয়া হয়েছে বলে ধারণা ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার।
Advertisement
এদিকে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে রোববার দিবাগত রাত ১টায় কণা খাতুন (২৫) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। কণা ইপিজেডের আইএইচএম কোম্পানির কোয়ালিটি কাটিং সেকশনের কর্মী ছিলেন। তিনি উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামের খমিন ইসলামের স্ত্রী। ইপিজেডের সাপ্লাই পানি পান করে তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি কনার পরিবারের।
ঈশ্বরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, লালপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও আটঘরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া আক্রান্ত ইপিজেড কর্মীরা ভর্তি রয়েছেন। এসব হাসপাতালে ধারণক্ষমতার চেয়ে দুই-তিন গুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছেন। এছাড়াও আক্রান্ত রোগীরা পাবনা জেনারেল হাসপাতাল ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। আবার অনেকেই প্রাথমিকভাবে স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে বাড়িতেই চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। অবস্থার অবনতি ঘটলে তারা হাসপাতালে এসে ভর্তি হন।
অপরদিকে ইপিজেডের বিপুল সংখ্যক রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় ঈশ্বরদীতে স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে। এই সুযোগে কিছু ফার্মেসি বেশি দামে স্যালাইন ও ডায়াপার বিক্রি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
Advertisement
ইপিজেডে পানের জন্য যে সাপ্লাই পানি রয়েছে সেখান থেকে পয়জনিং হয়েছে বলে ধারণা করছেন ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার আলী এহসান।
তিনি জানান, রোববার ইপিজেডে বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন করে পানির সোর্স ও ট্যাংকগুলো পরীক্ষা করেছি। এগুলো থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালে আইভি স্যালাইনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ইপিজেডে যে স্যালাইন রয়েছে, তা খাবার স্যালাইন। বিপুল সংখ্যক রোগী সামাল দিতে ডাক্তার ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ঈশ্বরদী হাসপাতালের রেকর্ড থেকে জানা যায়, গত ২৯ মে থেকে পহেলা ১ জুন পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ইপিজেডের ২৪৩ জন কর্মী হাসপাতালে ভর্তি হন। এছাড়াও গুরুতর ১০ জন রোগীকে রাজশাহী ও পাবনা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৮২ জন। সবচেয়ে বেশি ভর্তি হয়েছে ইপিজেড মেডিকেল সেন্টারে। এছাড়াও ঈশ্বরদী হাসপাতালের মতোই ভর্তি রয়েছে লালপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
সোমবার (২ জুন) সকালে সরেজমিনে ঈশ্বরদী হাসপাতালে দেখা যায়, ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে বেড সংকট থাকায় স্যালাইন লাগিয়ে রোগীরা বারান্দা, করিডোরে ও সিঁড়িতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
Advertisement
ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক এবিএম শহীদুল ইসলাম বলেন, আজকের অবস্থা কিছুটা ভালো। এখানকার মেডিকেল সেন্টারে আজ ৬৫ জন চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। আমাদের মেডিকেল সেন্টারে এবং বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিপুল খাবার স্যালাইন মজুত আছে। যাদের প্রয়োজন, তারা এখান থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। পানি পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, ইপিজেডে ঈশ্বরদী ওয়াটার সাপ্লাই লি. পানি ট্রিটমেন্ট করে সরবরাহের দায়িত্ব পালন করছে। তারা পদ্মা নদী এবং ডিপ-টিউবওয়েলের পানি সংগ্রহ করে ট্রিটমেন্ট করে ইপিজেড এলাকায় সাপ্লাই দেয়। এই কারখানার বর্জ্য ট্রিটমেন্টের পর আবার পদ্মা নদীতেই ফেলে দেয় বলে ওই কোম্পানির নামে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ইপিজেডের পানি পান করে রেনেসাঁ, নাকানো, অ্যাবা ও রহিম আফরোজ, আইএসএ, স্টিল হেয়ার, অস্কার বাংলাসহ কয়েকটি কোম্পানির প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ শ্রমিকরা ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টার ও ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন। গুরুতর কয়েকজনকে রাজশাহী ও পাবনাতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া কম গুরুতর অনেকেই বেসরকারি চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে।
শেখ মহসীন/এফএ/জেআইএম