ষষ্ঠ দিনের মতো বন্ধ রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। সোমবার সকাল থেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে রোগীরা এসে ফিরে যাচ্ছেন।
Advertisement
এদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা তদন্ত কমিটিও হাসপাতাল পরিদর্শনে গেছেন। চিকিৎসক নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলছেন তারা।
সকালে হাসপাতালের সামনে দেখা হয় পুস্পা রানীর (৬০) সঙ্গে। মিরপুর মাজার রোড থেকে মেয়েকে সঙ্গে নিয় এসেছেন এই বৃদ্ধা। চোখের যন্ত্রণায় কাতর তিনি। সকাল থেকে ডাক্তার দেখাতে এসে বসে আছেন। মেইন ফটক বন্ধ থাকায় ঢুকতেও পারছেন না। তার যত বিরক্তি আনসারদের ওপর।
তিনি বলেন, বাবা, আমি চোখের ব্যথা সহ্য করতে পারছি না। তারা আমাকে ঢুকতে দিচ্ছে না। পরে বুঝিয়ে দিলে চলে যান এই বৃদ্ধা।
Advertisement
তার মতো মধ্য বয়সী মাকসুদা বেগমকে ঢাকা মেডিকেল থেকে রেফার করা হয়েছে চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। গত দুইদিন যাবত এসে ফিরে যাচ্ছেন। তিনিও জানেন না আসলে হাসপাতালে কি হয়েছে!
চরম ক্ষোভ ঝাড়লেন সারওয়ার আহমেদ। তিনি টঙ্গী থেকে আসছেন, এক মাস আগে চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে অপারেশন হয়েছে। এখন ফলোআপে আসছেন। হাসপাতাল বন্ধ থাকায় অন্য হাসপাতালে গেছেন, কিন্তু তারা বলে দেশের সেরা হাসপাতালে দেখানোর পর আমাদের কাছে আসছেন কেন? ওখানেই যান। ওরা ভালো চিকিৎসা করে।
শুধু পুষ্পা, মাকসুদা নয়, প্রতিদিনই হাজারও সেবা প্রার্থী এসে ফিরে যাচ্ছেন দেশের একমাত্র চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে।
রোগীদের এই ভোগান্তির জন্য গেল শনিবার দুঃখপ্রকাশ করে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। রোগীদেরকে অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে তারা।
Advertisement
এদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল পরিদর্শনে গেছেন। তারা ডাক্তার ও নার্সদের সঙ্গে কথা বলেছেন। স্টাফ এবং জুলাই যুদ্ধের সঙ্গেও কথা বলবেন। যদিও ২৯ মে করা ওই তদন্ত কমিটি তিন কর্ম দিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা। সে হিসেবে আজকের মধ্যেই তাদের তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। বুধবার (২৮ মে) কর্মস্থলে নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতি পালন করা শুরু করেন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জরুরি বিভাগ ছাড়া নিয়মিত অস্ত্রোপচার থেকে শুরু করে সব চিকিৎসা সেবা বন্ধ ছিল। যার কারণে দিনের সকাল থেকেই এ নিয়ে হাসপাতালে আসা সাধারণ রোগী ও সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে স্টাফদের কথা কাটাকাটি হয়। বেলা সাড়ে ১১টার পর চিকিৎসক ও রেজিস্ট্রার মাহফুজ আলম বিষয়টি ব্যাখ্যা করে সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। যাদের পূর্ব নির্ধারিত অস্ত্রোপচারের তারিখ ছিল, তাদের পরবর্তীতে ফোনে ডেকে এনে অস্ত্রোপচার করে দেবেন, বলেন। এতেও সেবাপ্রার্থীরা সন্তুষ্ট হননি। তারা হই-হুল্লোড় ও হট্টোগোল শুরু করেন। চিকিৎসক ও নার্সদের দিকে তেড়ে আসেন। এসময় আনসাররা তাদের থামাতে গেলে হাতাহাতি হয়। স্টাফ ও সেবাপ্রার্থীদের মধ্যে মারামারিও হয়।
এ উত্তেজনা পুরো হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়লে ভেতরের সব ওয়ার্ডের কলাপসিবল গেট আটকে তালা দিয়ে দেয় নিরাপত্তারক্ষীরা। বিষয়টিকে নিজেদের জন্য আতঙ্কের বা আক্রমণ হতে পারে এমন আশঙ্কায় উল্টো তালা ভেঙে জুলাই যোদ্ধারা লাঠিসোঁটা, রড হাতে ডাক্তার, স্টাফ ও সেবাপ্রার্থীদের এলোপাতাড়ি পেটানো শুরু করেন। তাদের সঙ্গে এসে যোগ দেন পঙ্গু হাসপাতালে থাকা জুলাই যোদ্ধারাও। এ ঘটনায় চিকিৎসকসহ ১৫ জন আহত হয়। আতঙ্কে চিকিৎসক নার্স ও স্টাফ বেশিরভাগ হাসপাতাল ছেড়ে যায়। কেউ কেউ ভেতরে আটকে গেলেও সেনাবাহিনী এসে উদ্ধার করে। বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম। এরপর থেকে হাসপাতালে যাচ্ছেন না চিকিৎসক, নার্সসহ স্টাফরা।
এসইউজে/এসএনআর/জিকেএস