ভ্রমণ

যশোরের উল্লেখযোগ্য দর্শণীয় স্থানে ভ্রমণের হাতছানি

যশোরের উল্লেখযোগ্য দর্শণীয় স্থানে ভ্রমণের হাতছানি

ব্রিটিশ ভারতের প্রথম জেলা যশোর। প্রায় আড়াইশ বছরের পুরানো এই ঐতিহাসিক জেলায় রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে বেশকিছু স্থানের যেমন রয়েছে ঐতিহাসিক গুরুত্ব; তেমনি রয়েছে শিল্প-সাহিত্যের পীঠস্থান। আবেগ-অনুভূতি আর বিনোদনের সংমিশ্রণে এই দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণপিপাসুদের জন্য বরাবরই আকর্ষণীয়। তাই ঈদুল আজহার ছুটিতে এই দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণে রঙিন হয়ে উঠতে পারে আপনার উৎসব-আনন্দ। যশোরের বেশকিছু দর্শনীয় স্থান তুলে ধরা হলো।

Advertisement

যশোর কালেক্টরেট ভবন প্রায় আড়াইশ বছরের পুরানো ব্রিটিশ-ভারতের প্রথম জেলা যশোর। প্রথম শক্রুমুক্ত এই জেলার টাউন হল ময়দানের মুক্তমঞ্চে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। টাউন হল ময়দানের পাশেই শহরের অন্যতম প্রধান দর্শনীয় স্থান যশোর কালেক্টরেট ভবন। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে যশোর কালেক্টরেটের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কয়েক বছর আগে কালেক্টরেট ভবনটি আলোকসজ্জার আওতায় আনা হয়। ভবনের উত্তর পাশের চত্বরে রয়েছে কালেক্টরেট পার্ক এবং দক্ষিণ পাশে সানবাঁধানো পদ্মপুকুর। পুকুরের নানা রঙের মাছের ঝাঁক আর পদ্মফুলের দৃশ্য অসাধারণ। কালেক্টরেটের উত্তর পাশের রাস্তার ওপারেই রয়েছে মনোমুগ্ধকর ভৈরব পার্ক। ভবনের পশ্চিম পাশে মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন মনি সড়কের (প্যারিস রোড) মনোমুগ্ধকর দৃশ্যতো অসাধারণ। সবমিলিয়ে কালেক্টরেট ভবন এবং এর আশপাশের এলাকাগুলো এখন ঈদ আড্ডায় জমজমাট হয়ে উঠেছে।

মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়িযশোর শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভিটা। সাগরদাঁড়িতে মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি, মধুসূদন জাদুঘর, লাইব্রেরি ও সাগরদাঁড়ি পর্যটন কেন্দ্র এসব মিলিয়ে মধুপল্লী। মধুসূদন দত্তের বাড়ি সংলগ্ন রয়েছে সেই বিখ্যাত কপোতাক্ষ নদ। মধুসূদন দত্তের দ্বিতল বাড়িটি অপূর্ব নির্মাণশৈলীর জন্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে। মধুসূদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত মধুপল্লী দর্শনে উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারে ঈদের আনন্দ। মধুপল্লী সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সাপ্তাহিক রোববার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকে।

চাঁচড়া শিব মন্দিরযশোর শহরের আশপাশের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানের একটি চাঁচড়া শিব মন্দির। তিনশত ২৯ বছরের পুরনো এই মন্দিরটি পুরাকীর্তি হিসেবে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো নির্মাণে আট-চালা রীতি অনুসরণ। পুরো মন্দিরের সামনের অংশ পোড়ামাটি দিয়ে অংলকৃত। এটি ছিলো চাঁচড়ার জমিদারবাড়ির অংশবিশেষ। কালের বিবর্তনে এবং মানুষের কবলে পড়ে এই মন্দিরটি ছাড়া রাজবাড়ির আর কিছুই এখন অবশিষ্ট নেই।

Advertisement

এছাড়া যশোর শহরের আরও একটি ঐতিহাসিক স্থান মুড়লি জোড়া শিব মন্দির। রাজা লক্ষণ সেন ১১৮৯ সালে ভৈরব নদের পশ্চিমাংশে এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। এটিও এখন ধর্মীয় স্থানের পাশাপাশি দর্শনীয় এক পুরাকীর্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। মুড়লির আরও একটি দর্শনীয় স্থান ইমামবাড়া। যা মুড়লি ইমামবাড়া নামেও পরিচিত। ১৮০২ সালে দানবীর হাজী মোহাম্মদ মহসিনের বোন মন্নুজান এটি নির্মাণ করেছিলেন। এটি বাংলাদেশের পুরাকীর্তির অংশ হিসেবে দ্যুতি ছড়াচ্ছে।

গদখালী ফুলের বাজারযশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীকে ফুলের রাজধানী বলা হয়। কারণ সারা বাংলাদেশের ৮০ ভাগ ফুলের চাহিদা মেটায় এই গদখালী। যশোর জেলার ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার প্রায় ৯০টি গ্রামের ৪ হাজার বিঘা জমিতে ফুলের চাষ করা হয়। এখানে সবচেয়ে বেশি উৎপন্ন হয় রজনীগন্ধা, গোলাপ ও গাঁদা। সারা বছর বাহারি ফুলের সমারোহ থাকলেও এখানে যাওয়ার উপযুক্ত সময় হলো জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে।

ভরতের দেউলযশোরের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় এক স্থান কেশবপুর উপজেলার ভরতের দেউল বা ভরত রাজার দেউল। এটি উপজেলার ভদ্রা নদীর তীরে অবস্থিত প্রাচীন গুপ্ত যুগের খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতকে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়। টিলা আকৃতির দেউলের উচ্চতা ১২.২০ মিটার এবং পরিধি ২৬৬ মিটার। চারপাশে চারটি উইং ওয়ালে ঘেরা ১২টি কক্ষ ছাড়া বাকি ৮২টি কক্ষগুলো বৌদ্ধ স্তুপাকারে তৈরি। আর স্তুপের চূড়ায় থাকা চারটি কক্ষের দুইপাশে আরও আটটি ছোট ছোট কক্ষ দেখা যায়। এখানে প্রাপ্ত নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে পোড়া মাটির তৈরি নারীর মুখমন্ডল, নকশা করা ইট, পোড়ামাটির অলংকার, মাটির ডাবর এবং দেবদেবীর টেরাকোটার ভগ্নাংশ। ভরতের দেউল দেখতে ঈদের ছুটিতে প্রচুর দর্শণার্থীর উপস্থিতি ঘটে। এখানে ভ্রমণে বাড়তি পাওনা হতে পারে চুকনগরের বিখ্যাত আব্বাসের হোটেলের চুই ঝালের খাসির মাংসের স্বাদ গ্রহণ।

বেনাপোল স্থলবন্দরভারত বাংলাদেশ সীমান্তে এটি অবস্থিত। ভারত বাংলাদেশের স্থল বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে এটি পরিচিত। এখান থেকে কলকাতা ৮০ কিলোমিটার দূরে। বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের অংশটির নাম পেট্রাপোল। এখান থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রেল যোগাযোগও রয়েছে। লোকজন সাধারণত এখানে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত প্যারেড অনুষ্ঠান দেখতে যায়। প্যারেড দেখতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য বসার জায়গা হিসেবে গ্যালারিও রয়েছে।

Advertisement

মীর্জানগর হাম্মামখানাযশোরের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে মীর্জানগর জমিদার বাড়ি উল্লেখযোগ্য। কেশবপুর উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে কপোতাক্ষ ও বুড়িভদ্রা নদীর ত্রিমোহিনীতে মীর্জানগর গ্রামের অবস্থান। জমিদারবাড়ির হাম্মামখানা বা গোসলখানা তখনকার সময়কার স্থাপত্য শৈলির বিস্ময়। দশ ফুট উঁচু প্রাচীরবেষ্টিত দূর্গের এক অংশে হাম্মামখানা স্থাপন করা হয়।

ধীরাজ ভট্টাচার্যের বাড়িকেশবপুর উপজেলার পাঁজিয়ায় প্রখ্যাত অভিনেতা ও সাহিত্যিক ধীরাজ ভট্টাচার্যের বাড়িও একটি দর্শনীয় স্থান। পুলিশের এই কর্মকর্তা ছিলেন সুসাহিত্যিক এবং অভিনেতা। তার পরিত্যক্ত বাড়িটিও দেখে আসতে পারেন ঈদের ছুটিতে। এছাড়া ঐতিহাসিক যশোর রোডসহ শহর, শহরতলী এবং আশপাশের এলাকাগুলোতে আরও অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে।

এইচআরএম/এমআইএইচ/জেআইএম