দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হয়েছে পাঁচ দিন আগে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (আইপিএইচ) আবাসিক এলাকায় থাকা কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করেনি সিটি করপোরেশন। বিশেষ করে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পুকুরপাড়ে কোরবানির বর্জ্য স্তূপ হয়ে পড়ে আছে।
Advertisement
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এমনিতেই ওই পুকুরের পানি ব্যবহার অনুপযোগী। এর মধ্যে ঈদের পাঁচদিন পরও এই পুকুরপাড় থেকে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করেনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ফলে বর্জ্য গড়িয়ে পুকুরে পড়ছে। এখন পুকুরের পানি থেকে দুর্গন্ধ আসছে। বিষয়টি ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সংশ্লিষ্টদের জানানো হলেও তারা তা পরিষ্কার করেনি।
যদিও ৭ জুন ঈদের দিন মহাখালীসহ ঢাকা উত্তরের শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে বলে দাবি করেছিল ডিএনসিসি। আদতে তাদের এই দাবি মানতে নারাজ মহাখালীর আইপিএইচ এলাকার বাসিন্দারা।
বুধবার (১১ জুন) সরেজমিনে দেখা যায়, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটউটের মূল প্রশাসনিক ভবনের ঠিক পেছনে এই পুকুরটি। এর আয়তন প্রায় দেড় একর। চারপাশে নারিকেল, সুপারি ও আমগাছ। মানুষের গোসল বা হাত-মুখ ধোয়ার জন্য আছে পাকা ঘাট। সেখানে বসে গল্প করছেন মহল্লার লোকজন। চলার পথে যে কারও দৃষ্টি কাড়বে এই পুকুরের সৌন্দর্য। কিন্তু পুকুরঘাটে বা পাড়ে গিয়ে দাঁড়ালে ঘটবে বিপত্তি। পুকুরের চারপাশে কোরবানির বর্জ্য ছড়িয়ে আছে। পুকুরের ভেতর পানিতেও বর্জ্য ভাসছে। কিন্তু পুকুরে ময়লা না ফেলতে বা ময়লা পরিষ্কারে সিটি করপোরেশনের কাউকে দেখা যায়নি।
Advertisement
শুধু পুকুরের পশ্চিম পাশে একটি বোর্ডে লেখা, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতি দ্বারা পরিচালিত ও সংরক্ষিত পুকুর। এটি জনসাধারণের পানি ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত। পানিতে গরু-ছাগল বা অন্য কোনো পশু গোসল করানো নিষিদ্ধ। পুকুরের পাড়ে স্থাপনা ও ময়লা-আবর্জনা ফেলা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
আইপিএইচ মসজিদ সংলগ্ন একটি বাসায় ভাড়া থাকেন মহাখালী বাজারের ব্যবসায়ী জাকির হোসেন। বুধবার সকালে বাসা থেকে হেঁটে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় পুকুরের উত্তর-পূর্ব কোণে কোরবানির বর্জ্যের স্তূপ দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাকির হোসেন। তিনি বলেন, কোরবানির দিন অনেকেই অসচেতনভাবে বর্জ্য পুকুরপাড়ে ফেলেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সিটি করপোরেশন তা পরিষ্কার করেনি। জনস্বাস্থ্যের লোকজনেরও কোনো খবর নেই। অথচ দুর্গন্ধে এই পথে চলা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পুকুরপাড়ে ঘাটে বসে গল্প করছিলেন আমতলী বাজার এলাকার বাসিন্দা আশরাফ আলীসহ প্রবীণ তিন ব্যক্তি। আলাপকালে আশরাফ আলী বলেন, এখন বয়স হয়েছে। বাসায় সারাদিন বসে থাকতে ভালো লাগে না। সকাল-বিকেল পুকুরপাড়ে ঘুরতে আসি। কিন্তু এখন পুকুরের নোংরা পরিবেশে অস্বস্তি লাগছে। অথচ পুকুরের চারপাশ পরষ্কার করে এটি দর্শনীয় স্থান করা যেতো।
গত ৫ জুন থেকে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে সরকারি ছুটি চলছে। প্রতিষ্ঠানটির অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী ছুটিতে। ফলে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির ঊর্ধ্বতন কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
Advertisement
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কল্যাণ সমিতির এক নেতা বলেন, এই পুকুরের কারণে আইপিএইচ এলাকার সৌন্দর্য অনেক বেড়েছে। কিন্তু এর রক্ষণাবেক্ষণে আইপিএইচের কোনো বাজেট নেই। মাঝে মধ্যে কল্যাণ সমিতির লোকজনই চাঁদা তুলে পুকুরটি পরিষ্কার করে। তবে এখন কোরবানির বর্জ্যের দুর্গন্ধের কারণে পুকুরপাড়ে যাওয়াই কঠিন। পুুকুরপাড়ের চারপাশের রাস্তা দিয়ে চলার সময় মাস্ক পরার উপক্রম হয়েছে। ডিএনসিসির সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি অবগত করা হলেও তারা তা পরিষ্কার করেনি।
যদিও গত ৯ জুন শহর থেকে সম্পূর্ণ বর্জ্য অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত ডিএনসিসির বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। এ ঘোষণার পরও আইপিএইচ এলাকার পুকুরের বর্জ্য অপসারণ কেন করা হয়নি, এমন প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিকরা।
জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জাগো নিউজকে বলেন, ঈদের পর থেকে নগরে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম চলছে। আইপিএইচ এলাকায় কোরবানির বর্জ্য স্তূপ হয়ে পড়ে থাকার সুযোগ নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বর্জ্য পরিষ্কার করা হবে বলে জানান তিনি।
এমএমএ/এএমএ/জিকেএস