সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বাগান করার মাত্র ১ বছরেই মিশ্র ফলের বাগান করে স্বপ্ন দেখছেন রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার মো. জিল্লুর রহমান। এই উদ্যোক্তার বাগানে রাশিয়ানসহ বিদেশি কয়েকটি জাতের আঙুর, কমলা ও মাল্টা গাছে ফল ধরেছে। তার বাগানে বিদেশি ৫ জাতের আঙুর, ৩ জাতের কমলা ও মাল্টাসহ প্রায় ৭শ ফলের চারা আছে। এসব গাছে শোভা পাচ্ছে রং-বেরঙের আঙুরসহ মাল্টা ও কমলা। এখনো ফল হারভেস্টের বাকি কয়েক মাস। এ অবস্থায় বিষমুক্ত বিদেশি জাতের ফল উৎপাদন করতে পেরে খুশি জিল্লুু। তার বাগান দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা নতুন উদ্যোক্তারা। ফলন দেখে তারাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
Advertisement
উদ্যোক্তা জিল্লুর রহমান রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার যশাই ইউনিয়নের ভেল্লাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। বিদেশি ফলের আমদানি কমানোসহ সম্পূর্ণ বিষমুক্ত ফল উৎপাদনের লক্ষ্যে ২০২৩ সালের শেষদিকে ইউটিউব দেখে রাজবাড়ী সদরের সরোয়ার হোসেন বাবুর বাগানে ঘুরতে গিয়ে আগ্রহী হন। এরপর ওই বাগান থেকে চারা সংগ্রহ করে বাড়ীর আশপাশসহ মাঠে প্রায় ৫ বিঘা জমিতে মিশ্র বাগান শুরু করেন। বর্তমানে তার ৩ বিঘা জমিতে দার্জিলিং, মেন্ডারিন ও চায়না জাতের কমলা, ১ বিঘায় ভিয়েতনামি মাল্টা এবং ১৬ শতাংশ জমিতে রাশিয়া ও ইতালির একেলো, সামার রয়েল, এপোলিয়া রোজ, ভ্যালেজ ও হ্যালোইন জাতের আঙুর আছে।
রাজবাড়ীতে মিশ্র ফল বাগানের সফল চাষি সরোয়ার হোসেন বাবু। তিনি রাজবাড়ীতে প্রথম বিদেশি জাতের আঙুরসহ কমলা ও মাল্টার বাগান করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। বর্তমানে তার বাগান থেকে জেলা ও জেলার বাইরের অনেকেই চারা নিয়ে বাগান করছেন। বাগান পরিচর্যাকারী হাতেম আলী বলেন, ‘বাগানের শুরু থেকে কয়েকজন মিলে পরিচর্যা করছি। এখন আমাদের যত্ন করা গাছে আঙুর, কমলা ও মাল্টা ধরছে। যা দেখতে খুব ভালো লাগে। তাছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন অনেক মানুষ বাগান দেখতে আসে।’
প্রতিবেশী আকমল হোসেন মিয়া ও দর্শনার্থী আব্দুর রাজ্জাকসহ কয়েকজন বলেন, ‘বাগান দেখে খুব ভালো লাগছে। আঙুর গাছে রং-বেরঙের আঙুর ধরে আছে। কমলা ও মাল্টা গাছেও ফল ধরছে। বিদেশি জাতের এ ফল আমরা দেশের মাটিতে উৎপাদন করতে পারলে অনেক লাভবান হবো। এর মাধ্যমে অন্য দেশের টাকা আমাদের দেশে আনতে পারবো। সরকারিভাবে সাহায্য-সহযোগিতা পেলে বাগান মালিক উপকৃত হবেন। আমরাও উদ্বুদ্ধ হবো। বিদেশ থেকে আর ফল আমদানি করতে হবে না।’
Advertisement
মিশ্র ফল চাষি সরোয়ার হোসেন বাবু বলেন, ‘আমার কাছ থেকে চারা নিয়ে জিল্লু ভাই ফল বাগান করেছেন। বাগান দেখতে এসে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। আমার বাগানের চেয়ে এ বাগানে বেশি ফল ধরেছে। এভাবে যদি দেশের অন্য অঞ্চলে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় চাষিরা ফল বাগান শুরু করে, তাহলে এ ফল উৎপাদন করে বাংলাদেশ নির্ভরশীল হবে। বিদেশ থেকে কোনো ফল আমদানি করতে হবে না। সম্পূর্ণ বিষমুক্ত ফল খেতে পারবে দেশের মানুষ।’
মিশ্র ফল চাষি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘রাজবাড়ীর সরোয়ার হোসেন বাবুর মিশ্র ফল বাগান দেখতে গিয়ে বাগান করতে আগ্রহী হই। প্রায় ১ বছর আগে তার বাগান থেকে চারা এনে ৫ বিঘা জমিতে বিদেশি জাতের আঙুর, কমলা ও মাল্টার বাগান করেছি। বাগানে প্রায় ৬০০ কমলা, ৫০ মাল্টাসহ অনেকগুলো আঙুর গাছ আছে। বর্তমানে আমার বাগানের আঙুর, কমলা ও মাল্টা গাছে ফল ধরেছে। বিষমুক্ত ফল উৎপাদন করতে আমি অনেকটাই সফল। আমার দেখাদেখি অনেকে এ ফল বাগান করতে উদ্যোগ নিয়েছে।’
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ অফিসার গোলাম রাসূল বলেন, ‘মিশ্র ফল চাষিদের আমরা বিভিন্ন ভাবে উদ্বুদ্ধ করে থাকি। তাদের সুবিধা হলো কোনো একটির ফলন কম হলে অন্যটির ফলন ভালো হয়। সে ক্ষেত্রে চাষিরা একটু সুবিধা পায়। তবে আঙুর মূলত শীত প্রধান দেশের ফল। বর্তমানে আমাদের দেশের অনেক চাষি নিজ উদ্যোগে এ বাগান করছেন। তার মধ্যে অন্যতম রাজবাড়ী সদরের বাগমারার সরোয়ার হোসেন বাবু। তার বাগান পরিদর্শন করে দেখেছি, বিদেশি বেশ কয়েক জাতের আঙুরসহ অন্য ফল গাছ আছে। বাগানে ফলনও ভালো হয়েছে। তার দেখাদেখি এখন অনেকেই ফল বাগান করছেন। তবে রাজবাড়ীর মাটি এসব ফল চাষে অনুপোযোগী। সে ক্ষেত্রে কমলা ও মাল্টা সময়মএতা হারভেস্ট করলে ফল রসালো হবে। চাষিরা বাজারমূল্যও ভালো পাবে।’
এসইউ/জিকেএস
Advertisement