ধর্ম

নবিজির (সা.) ৫ উপদেশ

নবিজির (সা.) ৫ উপদেশ

আবু হুরায়রাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর (সা.) একদিন বললেন, কে এ বাক্যগুলো আমার কাছ থেকে গ্রহণ করবে? তারপর নিজে সে অনুযায়ী আমল করবে অথবা এমন ব্যক্তিকে শিখিয়ে দেবে যে সে অনুযায়ী আমল করে। আমি বললাম, আমি হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর রাসুল (সা.) আমার হাত ধরে পাঁচটি উপদেশ দিলেন। তিনি বললেন, আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা থেকে বেঁচে থাকো, এতে তুমি হবে মানুষের মাঝে উত্তম ইবাদাতকারী। আল্লাহ তোমার তাকদিরে যা বন্টন করেছেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকবে, এতে তুমি হবে মানুষের মাঝে সর্বাপেক্ষা ধনবান। তোমার প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করবে, এতে তুমি হবে পূর্ণ ইমানদার। নিজের জন্য যা পছন্দ করো মানুষের জন্যও তা পছন্দ করবে, তখন তুমি হবে পূর্ণ মুসলিম। বেশি হাসবে না; কেননা বেশি হাসি অন্তরকে মেরে ফেলে। (সুনানে তিরমিজি: ২৩০৫, মুসনাদে আহমাদ: ৮০৮১)

Advertisement

এ হাদিসে নবিজি (সা.) তার সাহাবি আবু হোরায়রাকে (রা.) পাঁচটি উপদেশ দিয়েছেন:

১. আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা থেকে বেঁচে থাকো, এতে তুমি হবে মানুষের মাঝে উত্তম ইবাদাতকারী।

অর্থাৎ হারাম কাজসমূহ থেকে দূরে থাকা বড় ইবাদাত। আমরা অনেকেই নামাজ, রোজা ইত্যাদি ইবাদাতকে ইবাদাত হিসেবে বিবেচনা করি এবং এগুলো পালন করি কিন্তু হারামের পথে যাওয়া থেকে বিরত থাকি না। পাপ থেকে নিজেকে সংযত রাখতে পারি না। নবিজি (সা.) গুনাহ থেকে মুক্ত থাকাটাকে গুরুত্ব দিতে বলেছেন। ২. আল্লাহ তোমার তাকদিরে যা বন্টন করেছেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকবে, এতে তুমি হবে মানুষের মাঝে সর্বাপেক্ষা ধনবান।

Advertisement

অর্থাৎ শুধু অর্থ-সম্পদ থাকলেই মানুষ ধনী হয় না। অনেকে যথেষ্ট অর্থ-সম্পদ থাকার পরও অন্তরে দরিদ্রই থেকে যায়। এরপরও মানুষের সম্পদ থেকে ঈর্ষাকাতর হয়, হিংসা করে, মানুষের সম্পদ কেড়ে নেওয়ার ধান্দা করে। আবার অনেকে অল্প সম্পদের মালিক আল্লাহর নির্ধারণ ও তকদিরের ওপর সন্তুষ্ট থাকে। ফলে তার অন্তর প্রশান্ত থাকে এবং সে ঈর্ষা, হতাশা, হিংসা ও অন্যান্য অপরাধ থেকে দূরে থাকে।

৩. তোমার প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করবে, এতে তুমি হবে পূর্ণ ইমানদার।

অর্থাৎ কেউ যখন পূর্ণ ইমানদার হয়, তখন তার প্রভাব মানুষের সাথে তার আচরণে প্রকাশ পায়। সে মানুষের সাথে উত্তম ও সুন্দর আচরণ করে। যে ব্যক্তি মানুষের সাথে উত্তম আচরণ করে না, সে পূর্ণ ইমানদার হওয়ার দাবি করতে পারে না। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিই সবচেয়ে পূর্ণ ঈমানের অধিকারী। আর তোমাদের মধ্যে উত্তম চরিত্রের অধিকারী ওই ব্যক্তি উত্তম, যে তার স্ত্রীর সাথে আচরণের ক্ষেত্রে উত্তম। (সুনানে তিরমিজি: ১১৬২)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, উত্তম চরিত্রের অধিকারী ও পরিবার-পরিজনের সাথে সদ্ব্যবহারকারী পূর্ণ ঈমানের অধিকারীদের অন্তর্ভুক্ত। (সুনানে তিরমিজি: ২৬১২)

Advertisement

৪. নিজের জন্য যা পছন্দ করো মানুষের জন্যও তা পছন্দ করবে, তখন তুমি হবে পূর্ণ মুসলিম।

অর্থাৎ একজন মুসলমান মানুষের সাথে ন্যায় ও উত্তম আচরণ করে। নিজে যে আচরণ পেতে পছন্দ করে, অন্যদের সাথেও সেই আচরণই করে। যে ব্যক্তি মানুষের সাথে অন্যায় করে, খারাপ আচরণ করে, সে পূর্ণ মুসলিম হতে পারে না।

৫. বেশি হাসবে না; কেননা বেশি হাসি অন্তরকে মেরে ফেলে।

অর্থাৎ বেশি হাসি-তামাশায় অন্তর মরে যায় বা জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও কল্যাণকর চিন্তাশূন্য হয়ে যায়। তাই অতিরিক্ত হাসি-তামাশায় মগ্ন থাকা অনুচিত। যদিও সাধারণভাবে হাসি কোনো খারাপ কাজ নয়, বরং নেক আমল। যেহেতু মানুষের সাথে হাসিমুখে দেখা করা, হাসিমুখে কথা বলা সাধারণ ভদ্রতা ও উত্তম আচরণের অন্তর্ভুক্ত।

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, প্রতিটি নেক আমলই সদকা আর তোমার কোনো ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা এবং কোন ভাইয়ের পাত্রে নিজের বালতি থেকে পানি ঢেলে দেয়াও নেক আমলের অন্তর্ভুক্ত। (সুনানে তিরমিজি: ১৯৭০)

আবু জর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে দেখা করা সদকা, নেক কাজের নির্দেশ, অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করা সদকা, পথহারা প্রান্তরে কোন মানুষকে পথ বলে দেওয়া, কোন অন্ধ বা দুর্বল দৃষ্টিশক্তির মানুষকে সাহায্য করা সদকা, পথের কাঁটা বা হাড় সরিয়ে দেওয়া, নিজের বালতি থেকে অন্য কোন ভাইয়ের বালতিতে পানি দিয়ে ভরে দেওয়াও সদকা। (সুনানে তিরমিজি: ১৯৫৬)

আরেকটি বর্ণনায় অন্যের সাথে হাসিমুখে কথা বলার মতো নেক আমলকে তুচ্ছ ভাবতে নিষেধ করে নবিজি (সা.) বলেছেন, তোমরা কোনো ভালো কাজকেই তুচ্ছ ভেবো না; যদি সেটা তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে দেখা করাও হয়। (সহিহ মুসলিম: ২৬২৬)

ওএফএফ/এএসএম