দেশজুড়ে

৪২ শতাংশ সনাতন ধর্মাবলম্বী ভোটারই নির্ধারণ করবে জয়-পরাজয়

৪২ শতাংশ সনাতন ধর্মাবলম্বী ভোটারই নির্ধারণ করবে জয়-পরাজয়

দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনটি বেশির ভাগ সময় আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপটে চিত্র কিছুটা ভিন্ন। প্রকাশ্যে এবং গোপনে সম্ভাব্য প্রার্থী অনেক। প্রার্থীরা সভা-সমাবেশ ছাড়াও এলাকায় বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও সখ্য তৈরিতে তৎপর। এই আসনে যে দল যাকেই মনোনয়ন দিক না কেন লড়াইটা হবে বিএনপি এবং জামায়াতের মধ্যে।

Advertisement

তবে বিএনপির একাধিক প্রার্থী ও নিজেদের মধ্যে অন্তঃকোন্দলের কারণে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে বহিরাগত প্রার্থীর নামও শোনা যাচ্ছে। থাকবে স্বতন্ত্র প্রার্থীও।

এ আসনে এবার নতুন ভোটার হয়েছে ২০ হাজার ৬১১। যার মধ্যে বীরগঞ্জে ১৪ হাজার ৪৩৯ ও কাহারোলে ৬ হাজার ১৭২।

মোট ৪ লাখ ১৯ হাজার ১০০ ভোটারের মধ্যে বীরগঞ্জে ২ লাখ ৭৯ হাজার ১৭৪ ও কাহারোলে ১ লাখ ৩৯ হাজার ১২৬ ভোটার আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বলে দিনাজপুর নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে।

Advertisement

আরও পড়ুন

নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে ‘অস্থির’ না হয়ে ‘ধৈর্য’ ধরতে হবে সরাসরি ভোটে সংসদে ১০০ নারী এমপি প্রয়োজন: সারজিস

১৯৮৬ সাল থেকে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগ ছয়বার, বিএনপি একবার এবং জামায়াত ও জাতীয় পার্টি একবার করে এবং সর্বশেষ আওয়ামী লীগ (স্বতন্ত্র) একবার জয়লাভ করে।

দেশ স্বাধীনের পর থেকে বিভিন্ন সময় নতুন নতুন জেলা যেমন হয়েছে, তেমনি ১৯৮৬ সালে সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী এলাকা পুনর্গঠিত হয়েছে। সে হিসেবে দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনে ১৯৮৬ সালে সংসদ সদস্য ছিলেন আব্দুল মালেক সরকার (আওয়ামী লীগ), ১৯৮৮ সালে সংসদ সদস্য ছিলেন আনিসুল হক চৌধুরী (জাতীয় পাটি), ১৯৯১ সালে সংসদ সদস্য ছিলেন মো. আমিনুল ইসলাম, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে সৈয়দ আহমেদ রেজা হোসেন (বিএনপি), ১৯৯৬ সালের জুন মাসের নির্বাচনে সংসদ সদস্য ছিলেন আব্দুর রউফ চৌধুরী (আওয়ামী লীগ), ২০০১ সালে সংসদ সদস্য ছিলেন আব্দুল্লাহ আল কাফি (জামায়াতে ইসলামী), তার মৃত্যুর পর ২০০৫ সালে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মনোরঞ্জন শীল গোপাল। এরপরে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিলে ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার সংসদ সদস্য ছিলেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের কথিত বিদ্রোহী প্রার্থী জাকারিয়া জাকা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

বিএনপির দলীয় কোন্দলের কারণে যেই মনোনয়ন পাক না কেন, একজনের অনুসারী আরেকজনের বিরোধিতা করবে। সে কারণে বিএনপি প্রার্থীর জয় পাওয়া কষ্টকর হবে। আবার এই এলাকায় সংখ্যালঘু ভোটার একটা বড় ফ্যাক্টর। তাই প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এ বিষয়টিও মাথায় রাখছে বিএনপি। এক্ষেত্রে বহিরাগত প্রার্থীরও নাম শোনা যাচ্ছে। কিন্তু প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে জামায়াত রয়েছে এগিয়ে। তাদের প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

Advertisement

নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে প্রার্থী দেওয়া নিয়েও মেরুকরণে পরিবর্তনের তথ্য বেরিয়ে আসছে। তৃণমূলের অনেকেই মনে করেন, বিএনপির দলীয় কোন্দলের কারণে যেই মনোনয়ন পাক না কেন, একজনের অনুসারী আরেক জনের বিরোধিতা করবে। সে কারণে বিএনপি প্রার্থীর জয় পাওয়া কষ্টকর হবে। আবার এ এলাকায় সংখ্যালঘু ভোটার একটা বড় ফ্যাক্টর। তাই প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এ বিষয়টিও মাথায় রাখছে বিএনপি। সেক্ষেত্রে বহিরাগত প্রার্থীরও নাম শোনা যাচ্ছে। কিন্তু প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে জামায়াত এগিয়ে। তাদের প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। জাতীয় পার্টির কোনো কাঠামো নেই বললেই চলে। তবে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের প্রার্থী রয়েছে। বাম ও ইসলামি এবং নতুন নতুন দলগুলোর প্রার্থী কিংবা নেতাকর্মীদের কোনো সাড়াশব্দ শোনা যাচ্ছে না। তবে এখানে লড়াই হবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যেই।

আরও পড়ুন

রমজানের আগে ভোট আয়োজনের প্রস্তাব তারেক রহমানের ড. ইউনূস-তারেক বৈঠক নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলো জামায়াত

আসনটিতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন, বীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মনজুরুল ইসলাম মঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ জাকির হোসেন ধলু, বিএনপি নেতা কাহারোল উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ চৌধুরী। এছাড়া সেখানে বিএনপির অন্তঃকোন্দল ও সংখ্যালঘু ভোটারদের একটি বড় অংশ থাকায় দলীয়ভাবে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি ঠাকুরগাঁওয়ের সত্যজিত কুমার কুন্ডুর নামও মনোনয়নের বিবেচনায় রয়েছে বিএনপিতে।

এদিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ঘুরে আসনটি আবার পেতে চায় জামায়াত। নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ঢাকা মহানগর উত্তরের শুরা সদস্য, তুরাগ থানার আমির, দিনাজপুর শহর শিবিরের সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান। গত ৪ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের রোকনদের এক আলোচনা সভায় তার নাম ঘোষণা করা হয়। একক প্রার্থী হওয়ায় নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এই আসনের ভোটাররা বরাবরই বহিরাগত প্রার্থীর ক্ষেত্রে বিপ্লবী। এই সুযোগ কাজে লাগান মনোনয়নবঞ্চিতরা। এর একাধিক নজির রয়েছে এই আসনে। মনোনয়ন দিতে ভুল করলেই বিশেষ করে বিএনপিকে মাশুল গুনতে হবে চরম ভাবে। এছাড়া সংখ্যালঘু ভোটার একটা বড় ফ্যাক্টর। তাদের দিকেও নজর রাখতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে।

এ আসনের ভোটাররা বরাবরই বহিরাগত প্রার্থীর ক্ষেত্রে বিপ্লবী। এ সুযোগ কাজে লাগান মনোনয়নবঞ্চিতরা। এর একাধিক নজির রয়েছে এই আসনে। তাই মনোনয়ন দিতে ভুল করলেই বিশেষ করে বিএনপিকে মাশুল গুনতে হবে চরম ভাবে। এছাড়া সংখ্যালঘু ভোটার একটা বড় ফ্যাক্টর। তাদের দিকেও নজর রাখতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে।

এছাড়া এখানে অন্য দলের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বীরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহিনুর ইসলাম। দলীয় সিদ্ধান্ত হলে তিনি এবারও প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে একজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের। যিনি বিভিন্ন এলাকায় ভোটার, জনপ্রতিনিধি, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ সামাজিক সংগঠনগুলোর প্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন।

আরও পড়ুন

নির্বাচন এগিয়ে আনার বার্তা দেশের গণতন্ত্রের জন্য সুসংবাদ: ফখরুল ঐকমত্যের ভিত্তিতে হবে সংস্কার ও জুলাই সনদ: আমীর খসরু

একটি সূত্রের দাবি, ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-১ আসনের চিত্র একটু আলাদা। এই আসনে ৪২ শতাংশ ভোটার সনাতন ধর্মাবলম্বী বা সংখ্যালঘু। অপরদিকে এই আসনে ময়মনসিংহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গাইবান্ধা, রংপুর, নোয়াখালী, ঢাকা ও বগুড়া জেলার মানুষের বসবাস রয়েছে উল্লেখযোগ্য। তাদের জেলার সঙ্গে মিলিয়ে রয়েছে পাড়ার নামও। আবার ১৯৭৭ সালে হ্যাঁ/না ভোটে দেশের সব জায়গায় ‘হ্যাঁ’ নির্বাচিত হলেও কাহারোল উপজেলায় ‘না’ জয়লাভ করে। এই আসনে প্রার্থী নির্বাচনে সব দল বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করে। এবার আওয়ামী লীগের মাঠে থাকার সম্ভাবনা নেই। তাই ৪২ শতাংশ সনাতন ধর্মাবলম্বী ভোটারের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি এবং তারা কোন দলকে ভোট দেবে তার ওপরই নির্ভর করবে জয়-পরাজয়।

এএমএইচএম/এসএইচএস/এমএফএ/এমএস